২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

আজ সেই ভয়াল ২৫শে মার্চ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:১৯ অপরাহ্ণ, ২৫ মার্চ ২০১৬

আজ ভয়াল পঁচিশে মার্চ। মানবসভ্যতার ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত দিন। ১৯৭১ সালের উত্তাল এই দিনে বাঙালির জীবনে নেমে আসে ভয়ংকর,  নৃশংস ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। এই রাতে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর বর্বর পাকবাহিনী হিংস  হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমের। ঘরে ঘরে অনেকে তখন ঘুমিয়েও পড়েছে।কিন্তু অকস্মাত যেন খুলে গেল নরকের সবক’টি দরজা। রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হলো নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনী। শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো তারা। শুরু করে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা। অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা।

ঢাকা শহরের রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলতেসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে বাঙালি নিধন শুরু করে তারা। শুধু নিষ্ঠুর ও বীভতস হত্যাকাণ্ডই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পে থাকা গণমাধ্যমও সেদিন রেহাই পায়নি জল্লাদ ইয়াহিয়ার পরিকল্পনা থেকে। সেই রাতে একে একে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, জাতীয় প্রেসকাবেও অগ্নিসংযোগ, মর্টার সেল ছুঁড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে পাক হানাদাররা। এ হামলায় জীবন দিতে হয় বেশ ক’জন গণমাধ্যম কর্মীকেও। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচালিত এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল একটি। আর তা হলো বাঙালির মুক্তির আকাঙ্াকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করা।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। তারা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে মতা হস্তান্তর না করে গোপনে গোপনে নিতে থাকে সামরিক প্রস্তুতি।

মুক্তিকামী বাঙালি তখন স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত। আলোচনার নামে শাসকগোষ্ঠীর সময়পেণকে বাঙালিরা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। ােভে ফেটে পড়ে বাংলার মানুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার একটি দিকনির্দেশনামূলক রূপরেখা পেশ করেন, যা ছিল প্রকৃতপে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের মূলমন্ত্র। তত্কালীন সামরিক জান্তা বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের এ আকাঙ্াকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য সামরিক প্রস্তুতি নিতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জাহাজ বোঝাই করে সৈন্য ও গোলাবারুদ তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে আনা হয়। বিষয়টি বাঙালিদের অজানা ছিল না। ােভে ফুঁসে ওঠে তারা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। পাকিস্তানি জান্তারা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন দমনের পথ বেছে নেয়। পরিণতিতে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে বিােভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। নস্যাত্ হয়ে যায় পাকিস্তানের দুইটি অংশের একত্রে থাকার সকল সম্ভাবনা। পঁচিশে মার্চ কালরাত্রিতে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ইপিআর সদর দপ্তর এবং দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে বাঙালি সৈনিকরা বিদ্রোহ করে। শুরু হয়ে যায় সীমিত পর্যায়ে মুক্তি সংগ্রাম।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। গ্রেফতারের আগেই বঙ্গবন্ধু ইপিআরের ওয়্যারলেসযোগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা প্রথম কালুরঘাট বেতর কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়। সহায়- সম্বলহীন গৃহহারা, সর্বহারা বাঙালি জাতির প্রত্য মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়। নয় মাসের মুক্তি সংগ্রমের জন্য জীবন দিতে হয়েছিল ৩০ লাখ মানুষকে। সম্ভ্রম হারাতে হয়েছিল অসংখ্য মা-বোনকে। মাত্র নয় মাসে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যা ও নারী নিগ্রহের নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন