২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

ঈদে বরিশাল ঢাকা নৌরুটে যাত্রী নিরাপত্তায় ৩৯ নির্দেশনা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৪৮ অপরাহ্ণ, ২৫ মে ২০১৮

এই রোদ এই বৃষ্টি। হঠাৎ আবার ধেয়ে আসে কালো মেঘের ভেলা। সঙ্গে দমকা হাওয়া আর বজ্রপাত। আবহাওয়ার এমন খেলা চলবে জুন মাস ধরেই। আর এতে ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষের নৌপথে নিরাপদে বাড়ি ফেরায় দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

সড়কের অবস্থা বেহাল হওয়ায় রেলপথহীন অঞ্চলগুলোর জন্য নদীপথই ভরসা। তাই বাড়তি চাপ মাথায় রেখে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সারাদেশের প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও নৌযান সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে ৩৯টি নির্দেশনা দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

ঈদের কয়েকদিন অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে লঞ্চগুলো। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার সেটি একেবারেই করতে দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের সুবিধার্থে আগামী ১২ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত দিনেও বালুবাহী নৌযান বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদযাত্রায় হঠাৎ কালবৈশাখী বা ঝড়-বৃষ্টি হলে তা লঞ্চযাত্রীদের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করবে। মানুষের বাড়ি গিয়ে ঈদ আনন্দ করার চেয়ে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই লঞ্চগুলো যাতে সক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী বহন করে, সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘মাঝ নদীতে ঝড় উঠলে মানুষ আতঙ্কে লঞ্চে ছোটাছুটি শুরু করে। বাতাসের তীব্রতা তখন লঞ্চের বডিতে আঘাত করে। তাই আবহাওয়া খারাপ দেখলে লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ায় ২ নম্বর সিগন্যাল থাকলে শুধু বড় লঞ্চ চলতে পারবে।’

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়- গেল কয়েকবছরে ঈদে লঞ্চ দুর্ঘটনায় বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে চলতি মে মাসে দফায় দফায় কালবৈশাখী হয়েছে, যা লঞ্চযাত্রীদের জন্য আতঙ্ক। দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চ দুর্ঘটনায়ও পড়েছে। এগুলো বড় লঞ্চ হওয়ায় অবশ্য প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু ঈদে এমন দুর্ঘটনা হলে বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হবে। তা ছাড়া নির্বাচনের বছর যাতে নৌদুর্ঘটনায় প্রণহানি না ঘটে, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’

সূত্র জানায়- সারাদেশে ২০২টি রুটে কম-বেশি ৮০০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) থেকে ৪২টি রুটে আছে ২০৩টি লঞ্চের রুট পারমিট। সাধারণ সময়ে প্রতিদিন সদরঘাট থেকে রোটেশন প্রথায় অর্ধশতাধিক লঞ্চ এসব রুটে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। একই সংখ্যক লঞ্চ যাত্রী নিয়ে সদরঘাটে আসে।

তবে ঈদের আগের তিন থেকে পাঁচদিন রোটেশন প্রথা থাকে না। তখন যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে প্রায় শতাধিক লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। ওই সময় অবশ্য মালামাল পরিবহন করা হয় না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১০ মে গ্রিন লাইনের একটি ক্রুজারের সঙ্গে সাব্বির নামের আরেকটি লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এতে গ্রিন লাইনের জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রাণহানি হয়নি। অপরদিকে মেঘনার মোহনায় যাত্রীবাহী সুন্দরবন-১১ লঞ্চের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পণ্যবাহী কার্গোর। একই স্থানে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফ্লাইঅ্যাশবাহী জাহাজ এমভি এশিয়া ও এমভি সাফা-সারা জাহাজের মধ্যেও সংঘর্ষ হয়। এতে সুন্দরবন-১১ লঞ্চটির ব্যাপক ক্ষতি হয়, একটি মালবাহী জাহাজ ডুবেও যায়। সাধারণত এসব দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কা থাকে।

তাই আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করা নিয়ে বেশ চিন্তিত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। যাত্রীর নিরাপত্তায় পাঁচ ক্যাটাগরিতে ৩৯টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে টার্মিনালগুলোতে সতর্কবাণী মাইকে ও মনিটরে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।

আর আগামী ১২ থেকে ২০ জুন দিনের বেলায় বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদের আগের তিন দিন ও পরের তিন দিন ফেরিতে প্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সাধারণ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পারাপার বন্ধ থাকবে।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন