১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

একুশ শতকে কারিগরি শিক্ষার ভাবনা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৫৬ অপরাহ্ণ, ১৮ জুন ২০১৭

বিশ শতককে পিছনে ফেলে একুশ শতকের পথ চলা। এই একুশ শতকে পৃথিবীর রূপ এবং রূপান্তর আমরা প্রতিদিনই অবলোকন করছি। যেখানে তথ্যপ্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কার এবং ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর রূপ পরিবর্তত হচ্ছে। ফলে পৃথিবীতে বসবাসকারী জীব-বৈচিত্রের জীবনযাত্রার মানও পরিবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীর জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদাগুলোর। আর এই মৌলিক চাহিদা গুলো খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কারিগরি বা কর্মমূখী শিক্ষা। গোটা পৃথিবীই বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির পিছু নিয়েছে।

পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ একটি জনবহুল উন্নয়নশীল দেশ। ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের ক্ষুদ্র দেশটিতে প্রায় ১৬-১৭ কোটি লোকের বাস। আয়তনের তুলনায় এ বিশাল জনগোষ্ঠীর ভার বহন করতে দেশটিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জনসম্পদে পরিনত করতে পারলে তারা দেশের বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সুতরাং আমরা যারা এই সুন্দর ছোট সোনার বাংলাদেশে বসবাস করছি, তাদেরকে বসে থাকলে উন্নত বিশ্বের স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। এদেশ আমাদের, এদেশের আলো-হাওয়ায় আমরা এবং আমাদের নতুন প্রজন্ম বেঁচে থাকবে। আমাদের প্রজন্মকে উন্নত বিশ্বের স্বাদ গ্রহণ করাতে হবে।

আমাদের সন্তানদেরকে তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। বদলাতে হবে জীবনযাত্রার মান। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা পিছনে পড়ে থাকতে চাইনা, আমরা দৃঢ়তার সাথে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এদেশেকে তথা এদেশের মানুষের ভাগ্যকে বদলাতে চাই। আমরা শুনতে চাইনা, দারিদ্রতা, বেকারত্বতা, উপবাস বা ক্ষুধা। মোটকথা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সকলকেই দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। দক্ষ মানব সম্পদ ছাড়া একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন কোন ভাবেই সম্ভব নয়। আর দক্ষ মানব সম্পদ বলতে স্পষ্ট ভাবে বুঝায়, যে মানুষ বা মানুষ জাতি শিক্ষার সাথে সাথে কোন না কোন বিষয়ের ওপর দক্ষতা অর্জন করে। সাধারণ শিক্ষায় রাশি রাশি বই পড়ে (Limited Knowledge) সীমাবদ্ধ জ্ঞান অর্জন করা যায় কিন্তু দক্ষতা অর্জন করা যায় না। অপর দিকে কারিগরি শিক্ষায় (Practical Knowledge) ব্যবহারিক জ্ঞান সমৃদ্ধ থাকায় দক্ষতাও অর্জিত হয়।

সুতরাং একুশ শতকের উদীয়মান চ্যালেঞ্জ সমূহকে আমরা বিবেচনায় নিতে পারলে এবং তথ্য ও প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত সুচিত করতে পারলে উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসাবে মানব সম্পদই যে মূল নিয়ামক হিসাবে দৃশ্যমান হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। এ প্রেক্ষাপটে আমাদের স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে যে, আমরা বা আমাদের নতুন প্রজন্মকে কোন দিকে ধাবিত করছি বা করবো। নবতর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষাই পারে মানব সম্পদকে দক্ষ মানব সম্পদে বা সু-নাগরিকে পরিনত করতে।’’

জিডিপিতে ১৩.৫৭ ভাগ অর্থ আসে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে আর এই অর্থ যারা দেশে পাঠান তাদের বেশিরভাগই অদক্ষ শ্রমিক। কিন্তু এই অদক্ষ শ্রমিকদের দক্ষ করে পাঠাতে পারলে আমাদের বৈদেশিক আয় অনেকগুন বাড়ানো সম্ভব। তাছাড়া আমাদের দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০% যুব ও যুব মহিলা (১৫-২৯) বৎসর। এর মধ্যে মহিলাদের একটি বিরাট অংশ ৮৪% শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভূক্ত হয় নাই। প্রতি বছর ১৩ লক্ষ শিক্ষিত লোক বেকার হচ্ছে আর মাত্র ১ লক্ষ লোক কর্মসংকস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। কারণ অদক্ষ শিক্ষিত লোক দিয়ে দক্ষ কাজ করানো সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে অবশ্যই শিক্ষার সাথে সাথে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাহলে শিক্ষিত বেকারত্বের হার অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আবার মোট বেকার শ্রমশক্তির ৬০% যুব ও যুব মহিলা। সুতরাং মহিলাদেরকেও কর্মসংস্থানের জন্য বিবেচনায় আনতে হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণাঞ্চলের তথা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে ২০০৩ সালে স্থাপন করা হয়েছে ইনফ্রা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। মাত্র একটি ডিপার্টমেন্ট তথা কম্পিউটার টেকনোলজি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পথ চলা। বর্তমানে ডাবল শিফটসহ ১২টি টেকনোলজি চালু আছে। সম্পূর্ণ On-Line পদ্ধতি পরিচালিত বাংলাদেশের একমাত্র অটোমোশনকৃত পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। বিশ্ব ব্যাংক (World Bank) এর অনুদান (Grant) প্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে বিশ্বব্যাংক (World Bank) এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ছাত্র/ছাত্রীদের সেমিস্টার প্রতি ৪৮০০ টাকা হারে প্রদান করা হয়। ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষার মানোন্নয়ন এর লক্ষ্যে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতি পাঠদান করা হচ্ছে।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ নিজস্ব ক্যাম্পাসে পরিচালিত হচ্ছে। রয়েছে সু-বিশাল ৩টি ভবন। প্রত্যেকটি ভবনে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা সহ অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি। প্রত্যেকটি টেকনোলজি বা ডিপার্টমেন্টের জন্য আলাদা আলাদা ল্যাবরেটরির ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই রয়েছে Internet এবং wi-fi কানেকশন। সকল ক্লাস রুম এবং ল্যাবরেটরিগুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের জন্য রয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক কম্পিউটার ল্যাবরেটরি। রয়েছে সু-বিশাল লাইব্রেরি, ক্যাফেটরিয়া এবং কমন রুমের ব্যবস্থা। এখানে প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টে দক্ষ ও অভিজ্ঞ B.Sc ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক দ্বারা পাঠদান করা হচ্ছে। কোন কোন ডিপার্টমেন্টে M.Sc ইঞ্জিনিয়ারও শিক্ষক হিসাবে আছেন।

এখানে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ সার্বক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখছেন। Practical work বা ব্যবহারিক কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রত্যেক ল্যাবরেটরিতে রয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রাফ্ট ইন্সট্রাক্টর। লেখা পড়ার পাশাপাশি এখানে সকল জাতীয় দিবসগুলো সঠিকভাবে পালন করা হয়। সর্বোপরি কারিগরি শিক্ষার মডেল ইন্সটিটিউট হিসাবে অত্র প্রতিষ্ঠানটি সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

লেখক

প্রকৌশলী মো. আমীর হোসাইন
পরিচালক
ইনফ্রা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
কাশিপুর, বরিশাল।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন