২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

এক বছরের ব্যবধানে দুই স্ত্রীকে খুন, শ্বশুর-শাশুড়ি আটক

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:২৯ অপরাহ্ণ, ১০ এপ্রিল ২০১৮

যৌতুকের জন্য প্রথম স্ত্রী মনিরাকে হত্যার এক বছরের ব্যবধানে এবার দ্বিতীয় স্ত্রী গৃহবধূ আমেনাকে (২৩) শ্বাসরোধে করে হত্যা করেছে স্বামী মেহেদী হাসান আকন (২৫)। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাতে বরগুনা সদর উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর কলাগাছিয়া গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

আমতলী থানা পুলিশ ও আমেনার পরিবার সূত্রে জানা গেছে- ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্ত্রী মনিরাকে হত্যার ৩ মাসের মাথায় আমতলী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হানিফ হাওলাদারের মেয়ে আমেনার সাথে গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর কলাগাছিয়া গ্রামের আলমগীর আকনের ছেলে মেহেদী হাসান আকনের (২৫) বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আমেনার বাবা সংসারের সকল মালামাল দিয়ে দেয়। বিয়ের ৩ মাসের মাথায় যৌতুকলোভী স্বামী মেহেদী হাসান আমেনাকে তার বাবার বাড়ি থেকে স্বর্ণের চেইন, কানের দুল এবং নগদ ১ লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমেনাকে স্বামী মেহেদী হাসান ৩১ ডিসেম্বর ব্যাপক মারধর করে। মারধরের পর পরের দিন ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আমেনা তার বাপার বাড়ি চলে আসে। এর মধ্যে মেহেদী তার স্ত্রী আমেনার কোনো খোঁজ খবর নেয়নি।

৩ মাস ধরে বাবার বাড়িতে থাকার পর ৮ এপ্রিল রোববার বিকেল আড়াইটার সময় স্বামী মেহেদী হাসান এবং আমেনার মামা শ্বশুর ইসমাইল আমেনার বাবার বাড়ি উপস্থিত হয়ে তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা জানালে সে আর কোনো প্রতি উত্তর না করে আমেনা তার স্বামী এবং মামা শ্বশুরের সাথে স্বামীর বাড়ি চলে যান।

২২ ঘণ্টা ব্যবধানে পরের দিন সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার সময় বাড়ির পাশের একটি মুগ ডাল ক্ষেতে আমেনার লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ এবং এলাকাবাসীর ধারণা আমেনাকে যৌতুকের জন্য পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখেছে।

পুলিশের ধারণা মেহেদী হাসান এবং তার পরিবারের লোকজন আমেনাকে শ্বাসরোধে এবং পিটিয়ে হত্যা করে লাশ বাড়ির ২শ গজ দুরে ডাল ক্ষেতে ফেলে রাখে।

বরগুনা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসাআই) মো. সিদ্দিকুর রহমান বরিশালটাইমসকে জানান, নিহত আমেনার দুই ঠোটে, উরুতে, হাঁটুতে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল।

কলাগাছিয়া গ্রামের নীলিমা বেগম ও মনি আক্তার জানান, মেহেদী হাসান এর আগেও মনিরা নামে তার প্রথম স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য নির্মম ভাবে হত্যা করে। পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে মামলাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। আমরা আমেনা এবং মনিরার হত্যাকারী মেহেদী এবং তার পরিবারের কঠিন বিচার চাই।’

আমেনার মা খাদিজা বেগম কান্না জরিত কন্ঠে বলেন, মোর ভাল মাইয়াডা আইয়া স্বামীর বাড়ি গেল হেই মাইয়াডা এহন লাশ অইয়া আমার কোলে ফেরত আইলো মুই এইডা ক্যামমে মাইনা নিমু। ওআল্লা মুই এহন মইরা যাইমু। এহন মোরে লইয়া যাও। মুই এইয়ার বিচার চাই। মুই মেহেদীর ফাসি চাই। মুই যেন হেইডা দেইখা যাইতে পারি।

আমেনার ভাই আবু মুছা বরিশালটাইমসকে বলেন, বুইনডায় মোর কি অপরাধ করছিল যে হ্যারে মাইরা হালাইতে অইবে। আমরা এইআর কঠিন বিচার চাই।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সহিদ উল্যাহ বরিশালটাইমসকে জানান, খবর পেয়ে আমেনার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠাই। ধারণা করা হচ্ছে আমেনাকে যৌতুকের জন্য শ্বাসরোধে এবং পিটিয়ে হত্যা করেছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমেনার স্বামী মেহেদী ঘটনার পর পালিয়ে যায়। শ্বশুর আলমগীর আকন পালিয়ে যাওয়ার সময় পটুয়াখালীর খাসের হাট এবং শাশুড়ি পিয়ারা বেগমকে স্থানীয় পঞ্চায়েত বাড়ি থেকে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি।’

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন