২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

এমভি পারাবত লঞ্চে খুন, ‘বস্তাবন্দি লাশ’ মেঘনা নদীতে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

হারুনের হাতে থাকা ছবিটি তার ছেলে হাবিবুর রহমান সিফাতের। ১৭ বছর বয়সী এই তরুণ ঢাকা থেকে অপহৃত হয়েছিলেন গত ৪ এপ্রিল। এই ঘটনায় গত ১৩ ও ১৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার তামিম ও নেহাল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, সিফাতকে বরিশালগামী লঞ্চে হত্যার পর মেঘনা নদীতে ফেলে দিয়েছেন তারা।

লাশের সন্ধান না মেলায় পুলিশ তাদের কথাই বিশ্বাস করছে। সে তথ্য জানার পর থেকে ছেলের ছবি নিয়ে মেঘনা নদীর পাড়ে পাড়ে ঘুরছেন কাঁটাসুরের বাসিন্দা হারুন।

মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় হারুন ছিলেন বরিশালের হিজলা উপজেলায়। “বাবারে, পুলিশ বলেছে ছেলেকে খুন করা হইছে। লাশ নদীতে ফেলছে। এখন লাশের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছি,” বলেন সন্তানের সন্ধানে কাতর এই ব্যক্তি।

হারুন বলেন, কোনো তরুনের লাশ ভেসে উঠেছে কি না, স্থানীয়দের কাছে তা জানার চেষ্টা করছেন তিনি। ছেলের ছবি দেখাচ্ছেন সবাইকে। অজ্ঞাত পরিচয়ের কোনো লাশ কেউ দাফন করেছেন কি না, তা জানতে যাচ্ছেন কবরস্থানগুলোতে। স্থানীয় হাসপাতালের মর্গে ও থানাগুলোতেও যাচ্ছেন তিনি।

এবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের প্রেসিডেন্সি স্কুল থেকে বাণিজ্য বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সিফাত। আগামী ৬ মে তার পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে।

কিন্তু এখন ছেলের ফলাফল নিয়ে কোনো চিন্তা নেই হারুনের; অনেক বড় চিন্তা নিয়ে আছেন তিনি। সিফাত নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর ৬ এপ্রিল বিকালে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন হারুন।

তিনি থানায় থাকা অবস্থায় তার কাছে একটি ফোন আসে, তাতে সিফাতের জন্য ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। ঘটনাটি তখন পুলিশেরও জানা হয়ে যায়।

পুলিশ তখন অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কৌশল নেয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রথমে ২ হাজার, পরে ১০ হাজার, পরে দুই হাজার এবং এরপর আরও ১০ হাজার টাকা পাঠান হারুন।

এরই মধ্যে পুলিশ অপহরণকারী হিসেবে মোহাম্মদপুরের কাঁটাসুরেরই তামিমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়। হারুন জানান, তামিম তার বাসার কাছে এক মেসে থাকে। তার সঙ্গে সিফাতেরও পরিচয় ছিল।

মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ কৌশলে তামিমকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এই যুবক সিফাতকে অপহরণের কথা স্বীকার করেন বলে জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।

তিনি বলেন, “তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরদিন (১৪ এপ্রিল) ঝালকাঠি থেকে তার বন্ধু নেহালকে গ্রেপ্তার করা হয়। নেহাল এবার সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে।”

তামিম ও নেহালকে প্রথমে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর গত ১৯ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন দুজনই। তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বলেন, “তামিম এবং সিফাত এক জায়গায় থাকে বলে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। দুজনই ইয়াবাসেবী।”

সিফাতকে অপহরণ করে তার বাবার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের পরিকল্পনা নিয়ে তামিম ঝালকাঠি থেকে নেহালকে ঢাকায় ডেকে এনেছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বলেন, “তারা আনন্দফুর্তি করার জন্য ৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর সদরঘাট গিয়ে বরিশালগামী পারাবত-৯ লঞ্চে উঠে পেছনের দিকে একটি কেবিন ভাড়া নেয়।

“কেবিনের ভেতরে তারা কৌশলে সিফাতকে ঘুমের বড়ি খাওয়ায়। এরপর তারা সিফাতকে গলাটিপে হত্যার পর পেট কাটে। পরে লাশ একটি বস্তায় ভরে লঞ্চের পেছনের দিক দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়।”

লঞ্চটি চাঁদপুর ছেড়ে যাওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা ‘বস্তাবন্দি লাশটি’ ফেলে দেয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। বিপ্লব বলেন, পরদিন সকালে বরিশালে পৌঁছে নেহাল ঝালকাঠি চলে যায়। তামিম সন্ধ্যায় আরেকটি লঞ্চে ঢাকায় ফিরে তার মেসেই ওঠেন। এরপর সিফাতের বাবার কাছে মুক্তিপণের টাকা চাওয়া শুরু করেন।

হত্যার পর টাকা চাওয়ার ব্যাখ্যায় এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “বাঁচিয়ে রাখলে ধরা পড়ে যাবে, এই ধারণা থেকেই তারা সিফাতকে হত্যা করেই মুক্তিপণ চায়।”

তামিম ও নেহালের দেওয়া তথ্য নিশ্চিত হতে পুলিশ লঞ্চটির কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বলেন- “এই দুজনকে পৃথকভাবে দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা দুজনে একই রকম কথা বলেছে। তাদের কথার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সময়ের তথ্যের কোনো অমিল নেই। আর এ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে।”

সিফাতের বাবার জিডিটি অপহরণ মামলায় রূপ নিয়েছে। এখন হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ এনে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানান উপ-কমিশনার বিপ্লব। তিনি বলেন, “লাশের সন্ধানে আমরাও চেষ্টা করছি, বিভিন্ন জায়গায় বেতারবার্তা পাঠিয়েছি।”

সূত্র: বিডিনিউজ

21 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন