২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

এর আগে মরে যাওয়াও ভাল ॥ লিটন বাশার

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

গত দুই দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেস বুকে তোলপাড় চলছে তথা কথিত সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ মিলে প্রেমিক যুগলকে অপহরন করে মুক্তিপন আদায়ের বিষয় নিয়ে। অভিযুক্ত তিন কথিত সাংবাদিক ও বন্ধু সহ গ্রেফতার হওয়া ছাত্রলীগ নেতার হ্যান্ডকাপ পড়া ছবি যুক্ত করে দেয়া হচ্ছে একের পর এক পোষ্ট। আর নীচে শত শত মন্তব্য। বেশীর ভাগই সাংবাদিকদের চৌদ্দ গোষ্টি উদ্ধার করে কট্টর ভাষায় মনের ক্রোধ মিটিয়ে চলছেন।  মাঝে মাঝে মনে হয় ‘ যেমন কুকুর , তেমন মুগুড়’। ঠিকই আছে। অপহরনের ঘটনায় তিন সাংবাদিক কারাগারে গেলেও মুলত গ্রেফতারকৃত সাংবাদিকের সংখ্যা নাকি চার জন। এরমধ্যে কালো চামড়ার এক বাট্টু সাংবাদিক নাকি ভোরের আলো ফোটার আগেই থানা হাজতের অন্ধকার কক্ষের ইস্পাত কঠিন ফটকের ফাক গলে বেড়িয়ে গেছেন। অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে রহস্যময় এ ঘটনা নিয়েও নগরীতে কানাঘুষা চলছে। আমি মনে প্রানে সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করছি আমার এ শোনা কথাটি যেন মিথ্যা হয়। কারন যদি সত্যি হয়ে যায় তাহলে কোতয়ালী মডেল থানার স্মার্ট নীতিবান ওসি শাহ্  মো: আওলাদ হোসেন মামুনের উপর আস্থা হারাবে প্রায় তিন লাখ মানুষ। টানা ২০ বছর ধরে যে মানুষটাকে আমি চিনি তার সম্পর্কে আমারও ভূল ধারণা সৃষ্টি হবে। ওসি আওলাদ সাহেব এমন কাজটি করেননি বলেই আমার বিশ্বাস। কারন মুল কালপিটকে ছেড়ে দিয়ে রাস্তার টোকাইদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করলে তো ন্যায় বিচার প্রতিষ্টা করা সম্ভব নয়।

 

যতটা শুনেছি ছাত্রলীগ আর কথিত তিন সাংবাদিকদের সাথে ধরা পড়া একজন নাকি সরাসরি অপরাধের সাথে যুক্ত নয়। সে এই নষ্টদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে দিন-রাত এক সাথে উঠা বসা করতো। খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নিজের লাখ লাখ টাকার ব্যবসায় লালবাতি জ্বালিয়ে এখন চাদাবাজ রুপে কারাবন্দী হয়েছেন। যাক সে দোষী কি না সেটা পুলিশের তদন্তে বেড়িয়ে আসবে। আমি ঐ তরুন ব্যবসায়ীকে চিনিও না। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে শুধু বাবু আমার চেনা-জানা। কিছু দিন সে দৈনিক দখিনের মুখে কাজ করেছিলো। আরো দু’টি স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছিল। শুরুতে কয়েকটি ভাল নিউজ করেছিল। পরবর্তীতে তার চরম অনিয়ম আর  দীর্ঘ অনুপস্থিতি আমাকে হতাশ করেছিল বটে তবে কখনো আমি কল্পনাও করতে পারিনি বাবুর মত একটা দূর্বল প্রকৃতির মানুষ এমন দু:সাহসিক জঘন্য অপরাধের সাথে যুক্ত হতে পারে। কিন্ত বাবু প্রমান করে দিলো সে নিজে ভাল নয়; বরং আমিই অন্ধ। বাবু যাদের সাথে গ্রেফতার হয়েছে তাদের ধারে কাছে যাওয়াটাও বাবুর জন্য একটি অপরাধ। রাতের অন্ধকারে বাবু যে সাংবাদিক নামধারী টোকাইদের সাথে বস্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াতো তা আমার অন্ধ চোখের দৃষ্টি গোচর হয়নি কখনো। আর আমি যে অন্ধ সে কথা এর আগেও একদিন স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার এক তরুন সম্পাদক বলেছিল। তার ভাষ্য আমার নাকি পেটেও ক্ষুধা নেই, আর চোখেও দেখি না।

 

তরুন এ সম্পাদকের মতে যাদের পেটে ক্ষুধা নেই এবং দু’ চোখে দেখে না তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। আমি যে আসলেই সত্যি সত্যি চোখে দেখি না সেটা বুঝতে পারলাম এই সাংবাদিক গ্রেফতারের পর। কারন গ্রেফতারের পর এই রথি-মহা রথিদের রং-বে রংয়ের ছবি সহ নিউজ প্রকাশ করতে লাগলো বরিশালের অন লাইন নিউজ পোট্টাল গুলো। সেখানে দেখলাম প্রেমিক যুগল অপহরনের পর মুক্তিপনের দাবীতে যে পত্রিকা অফিসে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল সেটি বটতলা রুপালী ব্যাংকের উল্টো পার্শ্বে। রুপালী ব্যাংকের জোনাল অফিসের ঐ ভবনটির জন্ম লগ্ন থেকে আমি ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করছি। ব্যাংক দোতলায় আর আমি থাকি চতুর্থ তলায়। আমার বাসার সামনে এত বড় একটি প্রভাবশালী পত্রিকার অফিস! ৮ বছরেরও আমার চোখে পড়েনি। তাইলে তো নিজেকে অন্ধ বলে মেনে নিতে কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।

 

নিজে চোখে দেখি না তো কি হয়েছে অন্যের সাহায্য নিলাম। পরদিন বাসার আশে-পাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। তারা দেখিয়ে দিলেন ঠিক রাস্তার উল্টো পাশে একটি ল্যাম্প পোষ্টের সাথে ইউনানী আয়ূবের্দী ওষুধের চিকন সাইনবোর্ডের চেয়েও ছোট্ট। ঐ ল্যাম্প পোষ্টের কাছেই আমি প্রতিদিন রিক্সার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করি। ঘটনার রাতে আমি সন্ধ্যা থেকেই বাসায় ছিলাম এবং সারা রাত সজাগ ছিলাম। কয়েক বারই বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও আর বের হওয়া হয়নি। মনে মনে ভাবছি যদি আমি বের হতাম তাইলে কি এই অপহরনকারী সাংবাদিকদের সাথে আমার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হতো? দেখা হলেই বা কি হাতো! আমি তো একজনকে ছাড়া অন্যদের চিনতাম না। এই সব ভাবনার মাঝেই সাইনবোর্ডটি দেখতে লাগলাম।  খুবই ছোট্ট সাইনবোর্ডের  উপরে দু’টি পত্রিকার নাম লেখা।  খুব কাছে না গিয়ে পড়ার উপায় নেই।  সময়ের কন্ঠস্বর ডট কম জাতীয় পত্রিকাওয়ালারা কানাকড়িও সাংবাদিকদের দেয় না বলেই জানি।

 

সেখানে আবার একজন প্রতিনিধি হয়ে বিভাগীয় শহরে ভবন ভাড়া নিয়ে  অফিস হাকিয়েছে। যেখানে ইত্তেফাকের মত দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দৈনিক পত্রিকার বরিশাল কার্যালয়ের ভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হয় সেখানে সময়ের কন্ঠস্বর আর কন্ঠ নালী ওয়ালা প্রতিনিধি অফিস ভাড়ার টাকা কোথায় পায়। গ্রেফতারের পর জেনেছি এদের মত কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র নগর চষে বেড়াচ্ছে। হাসপাতাল, ক্লিনিক , ওষুধের দোকান পার্ক , বিনোদন কেন্দ্র ও দেহ ব্যবসার আবাসিক হোটেল গুলোই এদের মুল ঘাটি। এ সব স্থানে এদের সোর্স রয়েছে। সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়েই ছোটেন গন্তব্যে। সেখানে ফিটিং কেসে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এদের কাজ। পরে টাকা ভাগাভাগি হয় সোর্স ও কথিত সাংবাদিকদের মধ্যে। টাকা রোজগারের ধান্ধার জন্য কাটপট্টির ধানসিড়ি আবাসিক হোটেলটি ছিল একটি। ঐ হোটেলের কেউ এ মামলায় আসামী হয়নি এবং গ্রেফতার হয়নি। খুব সহজেই প্রশ্ন উঠে যে-হোটেলের লোকজন ধোয়া তুলসি পাতা হলে এই খোটবাজ সাংবাদিকরা কি ভাবে খবর পায় তাদের হোটেলে কাবিন নামা না নিয়েই প্রেমিক যুগল কুঞ্জ সাজিয়েছে! এই ধান্ধাবাজ কথিত সাংবাদিকরা তো হোটেলের প্রতিটি কক্ষে ঢুকে বোর্ডারদের কাবিননামা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেন না। হোটেলের কোন রেজিস্ট্রারও সাংবাদিকদের দেখানোর বাধ্য বাধকতা নেই। আবার গভীর রাতে আবাসিক হোটেল থেকে যুবক-যুবতী বোর্ডার অপহরন হয়ে গেল তারা বাধা দিল না। এমনকি একটি দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও তারা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালো না কেন! এরপরও কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে অপহরনের সাথে হোটেল কর্তৃপক্ষ জড়িত ছিল না!

প্রিয় পাঠক-আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষ সহ জড়িত অন্যদের ঘারে দোষ চাপিয়ে কথিত তিন সাংবাদিকের পক্ষে সাফাই গাইছি না বা তাদের নির্দোষ বলছি না। আমরা চাই তদন্তে যদি আরো কোন সাংবাদিকের জড়িত থাকার তথ্য প্রমান পান তাকেও যেন মামলার চার্জশীটে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। আর আফসোস জাগে যে পেশায় নিজের রুটি রুজি ও পরিচয় ধারন করে আছি সেই পেশাকে আজ কতিপয় বিপদগামী যুবকরা আপত্তিকর কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে জন মানুষের ঘৃনায় পরিণত করেছে। সাংবাদিকতা পেশাকে লক্ষ্য করেই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃনা ছড়াচ্ছেন মানুষ। এমন দৃশ্য দেখার আগে সত্যি সত্যি অন্ধ হয়ে যেতে পারলেই ভাল হতো। আমরা কি দেখে, কাদের দেখে , কাদের আর্দশে অনুপ্রানিত হয়ে এ পেশায় এসেছিলাম আর এখন এ গুলো কি দেখছি। এ সব দেখার আগে অন্ধ কেন মরে যাওয়াও বোধ করি ভাল ছিল।

10 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন