২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

কুয়াকাটায় বরিশাল মেট্রোপলিটন কলেজের বার্ষিক শিক্ষা সফর

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৪৬ অপরাহ্ণ, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শীতের হাড় কাঁপানো আবহাওয়াকে দূর করার জন্য বসন্ত আর শীতের মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব চলছে প্রকৃতিতে। ঠিক তেমনি সময়ে আমরা বরিশাল মেট্রেপলিটন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিচালকরা সাগর কন্যা কুয়াকাটা যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। ২৬ মাঘ ফজরের নামাজের পরপর পাখিদের ঘুম ভাঙা কলরবের পূর্বেই আমরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুম থেকে উঠে কলেজের পিকনিক বাসে উঠার জন্য তৈরি হই।

সোমবার সকাল পৌনে ৮ টায় আমরা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত সুমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার উদ্দেশে রওয়ানা করি। বাস চলা শুরু করার সাথে সাথেই আমাদের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা আনন্দ উপভোগকারী এবং আনন্দদানকারী প্রতিভাগুলো সুপ্ত অবস্থা থেকে জেগে উঠল। হৈ-হুল্লোরে মেতে উঠলাম আমরা সকলে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী একাকার হয়ে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি আর কৌতুকের হাসিচ্ছটায় মুখরিত হয়ে উঠল আমাদের বাসের মানুষগুলো। আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন বহুগুনে আমাদের অধ্যক্ষ এস এম আলী নেছার স্যার। তার সাথে ছিলেন কলেজের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম. আব্দুল কাদের, অধ্যাপক মাহবুব উল আলম ও প্রফেসর জাহান আরা বেগম। কেননা, তারা বয়োবৃদ্ধ হলেও তাদের মধ্যে একদিনের জন্য তারুণ্যকে দেখতে পেয়েছি।

সকালের নাস্তা লেবুখালী ফেরিঘাটে গ্রহণ করে আবার কুয়াকাটার উদ্দেশে রওয়ানা হই আমরা। বেলা ১১টায় কুয়াকাটা পৌছে আমরা সকলে সমুদ্রের বেলাভূমিতে ফুটবল নিয়ে খেলতে নেমে যাই। একদলে শিক্ষক ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, অন্যদলে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কোনো পক্ষই গোল করতে পারেনি। দর্শক সারিতে লোকারণ্য ছিল লক্ষ্যণীয়। কুয়াকাট সৈকতে খেলা চলাকালীন বাঁশি হাতে রেফারির দায়িত্বে ছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন কলেজের অফিস সহকারি- সবার প্রিয় আবদুল আজিজ।

তবে মজার বিষয় ছিল- আবদুল আজিজের বাঁশির ফুৎকারের কোন তোয়াক্কাই করেনি অ-পেশাদার খেলোয়াড়রা।

শিক্ষা সফরে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মহাব্বাতুল্লাহ মাহেত, স্পার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান মনির, হোপ ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন, ক্যামব্রিজ স্কুলের পরিচালক আবু সাঈদ ও অ্যাডভোকেট আজম খানসহ অনেকে। খেলা শেষে আমরা সকলে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়ে লহরির আনন্দে মেতে উঠি।

উপভোগ করি অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি, অবলোকন করি ¯্রষ্টার অপরূপ বিস্ময়কর সৃষ্টি বঙ্গোপসাগর। যার দক্ষিণে রয়েছে বরফ আচ্ছন্ন এন্টার্কটিকা মহাদেশ। যার তটভূমিতে দাড়িয়ে সকালের সূর্য উদয় এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। মনে হয় যেন লাল টুকটুকে সূর্যটি গোসলের জন্য সমুদ্রের পানিতে ডুব দিচ্ছে। এ দৃশ্য বর্ণনাতীত।

দুপুরের মজাদার খাবার গ্রহণ করে সকলে মিলে কুয়াকাটার সেই ঐতিহাসিক কুয়া, বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইন মার্কেট, তাঁত পল্লী, সীমা মন্দির কাকড়ারচর ও দূর্বারচরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করি।

সকলেই কম-বেশি কেনাকাটা করি বিশেষ করে ঝিনুকের তৈরি অলংকার, ঘর সাজানো জিনিসপত্র বার্মিজ লুঙ্গি, শাড়ি, বার্মিজ আচার এবং শুটকি মাছ। তবে আমাকে অনেক বেশি আকর্ষণ করেছিল ২০১২ সালে আবিস্কৃত প্রাচীনযুগে নির্মিত কাঠের তৈরী বিশাল আকৃতির নৌকাটি। মাঝে মাঝে এতো সুন্দর মনোরম দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল হয়তো আমি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি।

শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে র‌্যাফেল ড্র, মেধা যাচাই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পরপরই সূর্যাস্ত শেষে পুনরায় বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। রাত ৯টায় বরিশাল পৌছাই আমরা। কিন্তু সারা পথে গান আর নাচে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো আমাদের হৃদয়ে।

একটি আনন্দঘন দিন কাটালাম আমরা, যা আমাদের জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে সারাজীবন। রাত দশটায় বাসায় ফিরে মনে হতে লাগল আমি হয়তো স্বপ্নেই ভ্রমণ করেছি কারণ স্বপ্নের মতোই সংক্ষিপ্ত ও সুন্দর ছিল আমাদের এই আনন্দ ভ্রমণ।”

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন