২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঘোষণার অপেক্ষায় বরিশাল মহানগর আ.লীগের কমিটি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৪২ অপরাহ্ণ, ১৭ মার্চ ২০১৬

বরিশাল : অশেষে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আগামী ২৮ মার্চ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই বরিশালের কমিটি ঘোষণা আসছে। সেই কমিটিতে কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামীমকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট আফজালুল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে!

মঙ্গলবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কেন্দ্রীয় নেতা বাহাউদ্দিন নাসিম এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ দেখা করতে গেলে সেখানে বরিশাল মহানগরের কমিটির বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু এ সময় এই কমিটির বিরোধিতা করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মদ সভাপতি হিসেবে সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরণপত্নী সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজের নাম প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু খোদ দলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকায় তার প্রস্তার আর ধোপে টেকেনি।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি সরাসরি নিশ্চিত না করলেও আভাস দিয়ে বলছেন অপেক্ষা করুণ। তবে এ কমিটি কত সদস্য বিশিষ্ট হচ্ছে এবং তাতে সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ-সেরনিয়াত সাদিক আব্দুল্লাহর অবস্থান কোথায় তাও তিনি জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।

কেন্দ্রীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ করেই বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করতে যোগ্য এবং ত্যাগীদের মর্যাদার আসনে বসানো হচ্ছে। সেই দিক বিবেচনায় কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম অন্যান্যদের চেয়ে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন। যার দরুণ তাকেই বসানো হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি পদে। এছাড়া হিরণের স্নেহভাজন পূর্বেকার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজালুল করিমকেই আগের পদে বহাল রাখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র সাংসদ শওকত হোসেন হিরন ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল আকস্মিক মারা গেলে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে সংগঠনটি। ফলে এক নেতার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। কিন্তু হিরণের মৃত্যুর পরে সাধারণ সম্পাদক আফজাল নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয়ায় স্থবির হয়ে পড়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম।

এরপরে ঘটনাচক্রে হিরণপত্নী জেবুন্নেছা আফরোজ স্বামীর আসন বরিশাল সদরে সাংসদ নির্বাচিত হলে তিনি আফজালদের সমন্বয়ে হিরণ অনুসারীদের ধরে রাখতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু তার আচারণে ওষ্ঠাগত অনেকে কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন। এমনকি কেউ কেউ যুক্ত হন হিরণবিরোধী শিবির অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুফাত ভাই সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য সেরনিয়াত সাদিক আব্দুল্লাহর রাজনীতিতে। কারণ হিরণ মারা যাওয়ার পরে মহানগর সভাপতির পদটি পেতে অনেকটা আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছিলেন সাংসদ পুত্র সাদিক। ঘটনাচক্রে হিরণ অনুসারী বরিশালের ৩০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মী নিয়ে তিনি একটি বলয়ও সৃষ্টি করেন।

এরপরে সাদিক সেইসব নেতাদের সুপারিশ নিয়ে তাকে সভাপতি করে কমিটির অনুমোদনও চান কেন্দ্রে। এর বিপরীতে হিরণপত্নী জেবুন্নেছা আফরোজ-আফজালও একটি তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে অনুমোদন চায়। পাল্টাপাল্টি কমিটি অনুমোদন চাওয়ায় বিপাকে পড়ে যায় কেন্দ্রীয় নেতারা। সেইসঙ্গে প্রকাশ হয়ে যায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের বিভাজনের বিষয়টি। এমতাবস্থায় প্রশ্ন দেখা দেয় বরিশাল মহানগরের রাজনীতিতে জেবুন্নেছা ভারসেস সাদিকের দৌরাত্ম্য নিয়ে। উভয় গ্রুপ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এখানকার রাজনীতির মাঠ। এমনকি নিজ ঘরনার বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক অর্থাৎ হিরণ অনুসারীদের বাসা-বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটে।

সেইসব হামলায় দায়ভার সাদিক এবং তার অনুসারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ায় আরও প্রকট হয়ে ওঠে বিভক্ত মহানগরের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। আর এসব বিষয়াদী ঢাকায় বসে দীর্ঘকাল পর্যবেক্ষণ করছিলেন শীর্ষ নেতারা। এমনকি হিরণের মৃত্যুর পরে বরিশাল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম দলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীও নখদর্পনে রেখে আসছেন বলে শোনা যায়।

যে কারণে সকল অঙ্ক কষে অবশেষে তিনি নিজেই এ কমিটি চূড়ন্ত করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাকে এ কমিটির অনুমোদন আসতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ওই সূত্রটি আভাস দিয়েছে।

কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম এবং আফজালকে শীর্ষপদে রেখে কমিটি অনুমোদন দেয়ার খবরে তাদের কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ স্ব-ইচ্ছাই কমিটি চূড়ন্তের বিষয়টি মিডিয়াকর্মীদের অবহিত করছেন। তবে কমিটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে এখানকার নেতারা এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন