২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

চাঁদাবাজ ট্রাফিক পুলিশের সন্ত্রাসে চোখ হারাতে বসেছে মাসুম!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৪ অপরাহ্ণ, ১৪ মে ২০১৬

রাজধানীর শেরে বাংলানগর চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের চার তলার ৫ নম্বর বেডে বসে ডুকরে কাঁদছিলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মাসুম খান (৩৭)। তবে তার  ভবিষ্যৎ পরিণতি কি হবে এখনো জানানো হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করলেও এর বাস্তবত‍া ভিন্ন। পুলিশের পিটুনিতে নষ্ট হতে চলছে দরিদ্র বাস সুপারভাইজার মাসুমের একটি চোখ।

ট্রাফিক সার্জেন্টের সামান্য ‘চা পানের টাকা পরিশোধের’ আবদার মেটাতে না পারায় চোখ হারাতে বসেছে মাসুম খান। পেশায় পরিবহন শ্রমিক। গুলিস্থান -নন্দন পার্ক রুটের দ্বিতল বিআরটিসি বাসের সুপারভাইজার।

শুক্রবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে যাত্রী তুলছিলেন সাভার বাজার বাসষ্ট্যান্ডে সিটি সেন্টারের সামনে থেকে। তখনই ট্রাফিক পুলিশের আবদার নিয়ে ছুটে আসে পুলিশের নিয়োগ করা চেইনম্যান। মেটাতে পারেন নি সেই আবদার। ব্যস। কানে যাওয়া মাত্রই এক পুলিশ সার্জেন্টের লাঠি আঘাত ধেয়ে আসে চোখের নিশানায়। মারাত্বক আঘাতে চোখের রগ ছিড়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। তারপর মাসুমের ঠিকানা হয় শেরে বাংলানগর চক্ষু হাসপাতাল।

চিকিৎসকরা বলেছেন, অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে চোখটি হারানোর সম্ভাবনা প্রবল। তারপরও শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবেন তারা।

পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তির চোখ হারোনার আশংকায় অন্ধকার নেমে এসেছে গোটা পরিবারে। এ নির্যাতনের প্রতিবাদে সাভার বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা। বিক্ষোভ নিয়ে ঘেরাও করেছে স্থানীয় ট্রাফিক অফিস।

কেঁদে কেঁদে মাসুম খান বলেন, ঢাকা থেকে  নন্দন পার্কে যাবার সময় সাভার বাসষ্ট্যান্ডের সামনে সিটি সেন্টারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী গাড়িটি থামানোর জন্যে সংকেত দেয়। তিনি চালককে থামাতে বললে চালক গাড়িটি থামান। এ সময় পুলিশের নিয়োগ করা লাইনম্যান (চাঁদা তোলার লোক) তার কাছে ট্রাফিক সার্জেন্টের ‘চা পান করার জন্যে’ টাকা দাবি করে। দাবির প্রেক্ষিতে যাত্রী তেমন নেই টাকা দিতে পারছি না- বলে চেইনম্যানকে ফিরিয়ে দেওয়া মাত্রই এক সার্জেন্ট এসে আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। কেন চালক গাড়ি থামিয়েছে এ কথা বলেই এলোপাতাড়ি আঘাতে একটি চোখের কোনে লাগার পর বাম চোখ রক্তে ভিজে যায়।

চালক গাড়ি সাইড করে তাকে প্রথমে স্থানীয় আধুনিক ক্লিনিক, সেখান থেকে সাভার চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি ও চিকিৎসা সক্ষমতার বাইরে থাকায় দ্রুত তাকে স্থানান্তর করা হয় রাজধানীর চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে। তারপর থেকেই এই হাসপাতালই ঠিকানা মাসুম ও  তার পরিবারের।

ঠিক কোন পুলিশ সার্জেন্টের লাঠির আঘাতে আজ চোখ হারানোর উপক্রম। সামনা সামনি না দেখলে সেটা বলার পরিস্থিতি-ও নেই মাসুমের। পুলিশের নির্যাতনে এক চোখ হারানোর পথে ‍মাসুম। তিন সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে তার পরিবার। সেই সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয়ের দুশ্চিন্তা। সব মিলিয়ে অন্য চোখেও অন্ধকার তার। এ ঘটনার প্রতিবাদে কাজ বন্ধ রেখে সাভারে বিক্ষোভ করেছে বিআরটিসির শ্রমিকরা। দোষী পুলিশ সার্জেন্টকে খুঁজে বের করে তাদের শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা। মিছিল নিয়ে তারা ঘেরাও করে স্থানীয় ট্রাফিক কার্যালয়।

পরিবহন শ্রমিকরা জানান,আপডাউন টিপে দ্বিতল গাড়িতে প্রতিদিন সাত’শ টাকা দিতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। না দিলেই মামলাসহ নানা হয়রানী। সঙ্গে লাঠির আঘাত কখনো পিঠে কখনো বা পায়ে। এর ওপর কখনো গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয়া কখনো বা লুকিং গ্লাস ভেঙে দেওয়ার মতোও অত্যচার সহ্য করতে হয় তাদের।

যোগাযোগ করা হলে ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ফরহাদ হায়দার জানান, গতরাতেই তিনি ঘটনাটি শুনেছেন এবং তা যথারীতি ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছেন।

তিনি জানান, শ্রমিকরা আমার কাছে বিচার চাইতে এসেছিলো। আমি তাদের আশ্বস্ত করে বলেছি, দোষীকে আগে খুঁজে বের করতে হবে। আপনারা তাদের খুঁজে বের করে আনুন। শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

ফরহাদ হায়দার জানান, গতরাতের শিফটে যারাই ডিউটিতে ছিলো তাদের সকালের শিফটেও রাখা হয়েছে। যাতে সহজেই তাদের সনাক্ত করা যায়।

তবে শ্রমিকরা বলেছেন, আসলে সে মূহুর্তে কে ছিলো তা একমাত্র মাসুমই বলতে পারবে।

মাসুমের স্ত্রী বিউটি বেগম জানান, কে ফিরিয়ে দেবে এখন তার চোখ। আজ কাজ না করতে পারায় ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অনাহারে থাকতে হচ্ছে আমাদের। কে দেবে আমাদের খাবার। আমাদের যে আর উপার্জন করার মতো কেউ নেই।

মাসুমের পরিবারে তার তিনটি সন্তান রয়েছেন। এদের মধ্যে মাহবুব (১২) মিলা (৯) ও শাহবুব (৭)। তাদের বাবার এ পরিস্থিতিতে আজ স্কুলে যায়নি। মাসুম পরিবার জিরানী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন