১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঝালকাঠিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, ০৭ জুন ২০১৮

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঝালকাঠির সেমাই কারখানাগুলোতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে শ্রমিকরা। রমজানের শুরু থেকে প্রতিদিন এ ব্যস্ততা বেড়েই চলছে। কিন্তু এসব কারখানার নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে তৈরি সেমাই কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সেটাই দেখার বিষয়। ঝালকাঠি থেকে উৎপাদিত এসব সেমাই প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। নিম্নমানের ঢালডা আর পোড়া তেল দিয়ে ভাজা এই সেমাইয়ের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইয়ের কোনো নজরদারি বা তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শ্রমিকদের হাত থেকে শরীরের ঘাম সেমাইতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এসব লাচ্ছা সেমাই তৈরির সময় হাতের গ্লোবস ব্যবহার করছে না তারা। তাই শরীরের ঘাম এ সেমাইয়ের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে আনায়াসেই।

ঝালকাঠির ছোট বড় ৬টি কারখানায় ঈদ উপলক্ষে সেমাই তৈরি হচ্ছে। এসব কারখানায় হাতে গ্লোবস এবং মাস্ক ব্যবহার না করায় শ্রমিকদের হাতে থাকা বড় বড় নখ ও হাঁচি-কাঁশির ময়লা পড়ছে তৈরি সেমাইয়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নিম্নমানের ঢালডা ও পোড়া তৈল। এভাবেই প্রতিদিন তৈরি করা হচ্ছে শত শত মন সেমাই। ময়লা, গাদ ও দুর্গন্ধযুক্ত ট্রে এবং কাদাযুক্ত মেঝে পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ নেই মালিক পক্ষের। মালিক পক্ষ বলছে কয়েক দিনের বর্ষার কারণে এর চেয়ে কারখানা পরিষ্কার রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। মালিক পক্ষের দাবি বিএসটিআই ও স্যানিটারি পরিদর্শক এলেও তাদের পরিবেশ ভালো থাকায় কোনো জরিমানা করা হয় না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের কলাবাগানে ‘মিনার’, কাঠপট্টিতে ‘জেদ্দা’, ‘কুলসুম’, ‘নুরানী’, পশ্চিম চাকাঠিতে ‘মক্কা’ ও ‘মদিনা’ সেমাই কারখানায় ব্যস্ত সময় পার করছে মালিক শ্রমিকরা। তৈরিকৃত সেমাই ঝালকাঠিসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় সরবরাহও শুরু করেছে ইতিমধ্যে। সেমাই তৈরির জন্য খামি (ময়দা দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ) রাখার ট্রের ওপরে বসে-হাটাহাটি করে কাজ করছে শ্রমিকরা।

এ ব্যাপারে শহরের কলাবাগান এলাকার মিনার লাচ্ছা সেমাই কারখানার মালিক সেলিনা কবির ও কাঠপট্টি এলাকার মদিনা লাচ্ছা সেমাই কারখানার মালিক নান্নু মিয়া বরিশালটাইমসকে জানান, আমাদের তৈরি এ সেমাই ঝালকাঠি ছাড়াও বরগুনা, পটুয়াখালী, তালতলি, আমুয়াসহ বরিশাল বিভাগের তথা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। প্রতিবারের ন্যায় এবারো প্রস্তুতি ভালো।

আমাদের কারখানার পরিবেশ দেখতে পৌরসভার স্যানিটারি কর্মকর্তাসহ বিএসটিআইয়ের লোকজন এসে দেখে যায়। আর সেমাইয়ের মন্ড (খামি) তৈরি করতে একবারের বেশি ব্যবহৃত তৈল কাজে লাগানো হয়। এ ছাড়া উপায় নেই।

এ মলিকদ্বয় আরও জানান, রমজানের শুরু থেকেই সেমাই’র প্রতি ব্যবসায়ীদের চাহিদা রয়েছে। ২৫ রমজান থেকেই বেচাকেনার চাপ আরও বাড়বে। তবে আমরা উৎকৃষ্টমানের তৈল ও ডালঢা দিয়ে সেমাই তৈরি করি বিধায় বিএসটিআই এলেও জরিমানা করে না। তারা আরো জানান, প্রতিবছর কাঁচা মালের দাম বৃদ্ধি পায়, কিন্তু আমরা সেমাইয়ের দাম বাড়াতে পারছি না। তাই প্রতিবছরই আমাদের ব্যবসার পরিমাণ কমে আসছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঝালকাঠি জেলার সহকারী পরিচালক সাফিয়া সুলতানা বরিশালটাইমসকে বলেন, সেমাই কারখানার পরিবেশ এবং ভোক্তাদের স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা দেখতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কয়েকটি কারখানায় গিয়ে জরিমানাও করা হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাহার মিয়া বরিশালটাইমসকে জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষে যাতে জেলার কোথাও ভেজাল খাদ্য বিক্রি বা দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি না হয় সে দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক স্যারের নির্দেশনায় আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছেন। বাকিগুলোতেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।’’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন