১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ঝালকাঠিতে শিল্পমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে মোস্তাকের টেন্ডার সন্ত্রাস!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৩৭ অপরাহ্ণ, ১১ জুন ২০১৮

ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ত্রাণ পূর্ণবাসন ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ১ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা কাজের সিডিউল প্রদানে বাঁধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১১ জুন) দুপুরে এ কাজের দরপত্র ফেলার সময় সরকার দলীয় কিছু ঠিকাদার ও তাদের পক্ষে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মো. সুলতান হোসেন খানকে পুলিশ বাঁধা দেয়।

সাংবাদিক ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীসহ সাধারণ জনগণের সামনে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় উপজেলা চত্ত্বরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সকাল থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষের সামনে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন ছিল।

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সুলতান হোসেন খান এবং ঠিকাদারদের অভিযোগ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সমর্থিত জনৈক মোস্তাক নামের একজন ঠিকাদার নেপথ্যে থেকে পুলিশের সহায়তায় দরপত্র জমাদানে বাঁধা দিচ্ছে।

যদিও পুলিশ বলছে- এই টেন্ডার নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দোল ও উত্তেজনার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে তারা এখানে দায়িত্ব পালন করছে। দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় পর্যন্ত সদর উপজেলা কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাহার আলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোজ্জাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন না।

উপজেলা ত্রাণ পূর্ণবাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- ত্রাণের সেতু কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৭টি ব্রীজ নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৮৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ১০ জুন এ দরপত্র সংগ্রহের শেষ দিন ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস রুমে এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই দরপত্রের বাক্স রাখা হয়। সোমবার ১১ জুন দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন এ ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সুলতান হোসেন খান জানান, সকাল থেকেই আমাদের সরকার দলীয় ঠিকাদারদের এ কাজের দরপত্র জমাদানে বাঁধা দেয়া হচ্ছিল। তাই তারা বাঁধাগ্রস্থ হয়ে আমার কাছে এসে সহযোগিতা চায়। আমি তাদের সাথে গিয়ে দরপত্র বাক্সে ফেলানোর জন্য ইউএনও’র রুমে যেতে চাইলে পুলিশ বাঁধা প্রদান করে।

বরিশালের জনৈক ঠিকাদার মোস্তাক হোসেন শিল্পমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ওপরের নির্দেশের কথা বলে এসব করাচ্ছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মোস্তাকের এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে এ আসনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আমি এর আগেও এহেন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় আমাকে মিথ্যা হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

উপজেলা চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের সময় তার সামনেই ছিলেন ঝালকাঠি সদর থানার ওসি অপারেশন আবুল কালাম আজাদ। দরপত্র জমাদানে উপজেলা চেয়ারম্যান কর্তৃক পুলিশের বাঁধা দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি অপারেশন আবুল কালাম আজাদ বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের পুলিশের বিরুদ্ধে দরপত্র জমায় বাঁধা দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা এখানে এসেছি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দোলের কারণে। এই টেন্ডার নিয়ে দুগ্রুপ অবস্থান নিয়েছে। তাই যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা এড়ানোর জন্য। একথা শুনে উপজেলা চেয়ারম্যান তার কাছে রেখে যাওয়া ঠিকাদারদের নিয়ে তাদের দরপত্র নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার রুমের দিকে রওয়ানা হন। তখন ওসি শোনিত কুমার গাইন, ওসি অপারেশন আবুল কালাম আজাদের ইশারায় পুলিশ পথরোধ করলে বিষয়টি উপস্থিত সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এখন বাঁধা দিচ্ছেন কেন চেয়ারম্যানের এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি আবুল কালাম নীরবে দাড়িয়ে থাকেন।

এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোজ্জাম্মেল হক টেলিফোনে জানান, আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিটিংয়ে আছি। আমার দপ্তরে টেন্ডার কার্যক্রম চলছে। নিরাপত্তায় পুলিশ রয়েছে। তবে পুলিশ টেন্ডারে বাঁধা দিচ্ছে কিনা সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঠিকাদার মোস্তাক হোসেনের ০১৯১১০০০৪৪৪ নম্বরে একাধিকার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন