২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

তিনি থাকেন এলাকায়, অথচ ভ্রমণ ভাতা তুলেছেন ১৩ লাখ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩৪ অপরাহ্ণ, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়ে কর্মস্থলে যা খশি তাই করে বেড়াচ্ছেন তিনি। সরকারের দুটি দফতর থেকে সুবিধা ভোগ, নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত না হওয়া; আর স্কুলে উপস্থিত হলেও ক্লাশ না করে খোশগল্প করে সময় পার করাই স্বভাব তার। কেউ জানতে চাইলে বলেন- তিনি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র লোক। আর তাতেই সমস্ত অপরাধ মাফ (!) এই তথ্য বরিশাল সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগমের।

২০০৯ সালের নির্বাচনে সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়েছিলেন সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষিকা রেহেনা বেগম। নির্বাচনের পর থেকেই তিনি রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়া কোথাও স¤পৃক্ত না হলেও সরকারী তহবিল থেকে উত্তোলন করে নিয়েছে ভ্রমণভাতা। যার পরিমান ১৩ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- ভ্রমণ ভাতা উত্তোলন করেলেও সেই টাকায় তিনি দেশের বাইরে তো দূরের কথা রাজধানীতেও যাননি। যদিও বিধান রয়েছে- একজন ব্যক্তি সরকারি দুটি দফতর থেকে একযোগে সুযোগ-সুবিধা বা বেতন ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন না।

অথচ অসাধ্য সাধন করছেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম। এর একটাই কারণ, তিনি যে স্কুলে চাকুরি করেন তার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হচ্ছেন মহানগর আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

অভিযোগ রয়েছে- সাদিক আব্দুল্লাহ’র ‘সুনজরে’ অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন এই জনপ্রতিনিধি ও স্কুল শিক্ষিকা।

সূত্রমতে- বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদে কর্মরত রয়েছেন রেহানা।

রেহানা পারভীন বেগম, স্কুলটি আমাদের জমিতে প্রতিষ্ঠিত। এরপ্রতি সবসময়েই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ থাকে। সাদিক আব্দুল্লাহ’র বিষয়ে বলেন, তিনি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর স্কুলটির লেখাপড়ার মান উন্নয়ন হয়েছে।

অপরদিকে স্কুলের হাজিরা খাতায় দেখা গেছে- প্রত্যেকদিনই বিদ্যালয়ে উপস্থিতির স্বাক্ষর করা রেহানা পারভীনের। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে- অনেক শিক্ষার্থী তাকে ওই স্কুলের শিক্ষক কিনা সেটাই জানেন না। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন (নিরাপত্তার কারণে শিক্ষার্থীদের নাম উহ্য রাখা হল) তারা রেহানা বেগমকে চেয়ারম্যান হিসেবে জানেন। মাঝে মাঝে স্কুলে আসেন। গল্প করে আবার চলে যান বলে জানান।

জানা গেছে- মাসে হাতে গোনা কয়েকদিন স্কুলে এসে একসাথে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন এই স্কুর শিক্ষিকা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের রোববার, দ্বিতীয় সপ্তাহের বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে রেহানা বেগমকে পাওয়া যায়নি। তবে তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় প্রদান করলে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন রেহানার সাথে। তড়িঘরি করে রেহানা স্কুলে এসে উপস্থিত হন।

ভাইস চেয়ারম্যান জানান- পার্টির কাজে শহরে গিয়েছিলেন তিনি। ক্লাশ না করা অথচ বেতন ঠিকমত তুলে নেওযার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সকল অবিযোগ অস্বীকার করে বলেন- তিনি স্কুলে তার ক্লাশ ঠিকমতই নেন। একইসাথে বলেন- যা একটু অনিয়ম হয় তা আগামী নির্বাচনের পর আর হবে না।

কারণ আগামী নির্বাচনে তিনি আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন না। রেহানা বেগম স্বীকার করেন- উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের সম্মানি ভাতা ও কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক উভয় পদ থেকেই তিনি সরকারি টাকা উত্তোলন করেন।

এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শপিকুল ইসলাম বলেন- তিনি আমাদের স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা।

ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে একবার শুনেছি স্কুল থেকে পদত্যাগ করবেন। পরে আর সেসব কিছু দেখিনি। বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি ওকিবহাল নন বলে জানান।

একই সাথে জানান, কোন ক্ষমতাবলে উভয় স্থান থেকে সরকারি সুবিধা গ্রহণ করছেন তা জেনে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। সম্প্রতি হুমায়ূন কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে এই কর্মকর্তা বলেন- ১৯৯৯ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন রয়েছে বলে জানান। তবে ক্লাশ না করাটা অন্যায়। এটা উচিত নয়Ñ বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির।

এ ব্যাপারে কথা হয় সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন জোবাইদা আক্তারের সাথে। তিনি জানান- বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খতিয়ে দেখবো।’’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন