২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ধ্বংসের পথে বরিশালের হিজলার ঐতিহ্যবাহী পঞ্চরত্ন মঠ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৩২ অপরাহ্ণ, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে বরিশালের হিজলা উপজেলার ১১৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী পঞ্চরত্ন মঠ। এ সমাধি মন্দিরটির উঁচু চূড়া ও অনন্য নির্মাণশৈলীর আকর্ষণে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আড়াই থেকে ৩০০ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে এ সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সংস্কার ও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে মঠটি এখন হুমকির মধ্যে রয়েছে।

মঠ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ডা. অশোক কুমার ব্যানার্জি বরিশালটাইমসকে জানিয়েছে- ১৮৯৯ সালে জমিদার বরদাকান্ত মিত্র রায় চৌধুরী কাউরিয়া বাজারসংলগ্ন এ মঠ নির্মাণ করেন। এখানে একই পাটাতনের ওপর পাশাপাশি দুটি সমাধি মন্দির রয়েছে। এর একটি বরদাকান্ত মিত্রের বাবা রাম কানাই মিত্র ও অন্যটি তার মায়ের। স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে ব্যতিক্রম ও দৃষ্টিনন্দন এ মঠ তৈরিতে টানা দুই বছর সময় লেগেছিল।

ভূমি থেকে ৮০ ফুট উঁচু এ মঠের চূড়া। মঠটির নির্মাণশিল্পীদের আনা হয়েছিল ভারত থেকে। ১০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত মঠের চারপাশে তিন একর জমি রয়েছে। এর পাশেই রয়েছে জমিদার বাড়ির নাট মন্দির। ১৯৫১ সালে জমিদার বরদাকান্তের বংশধররা দেশান্তর হন। তবে ১৯৭১ সালের পর চারটি পরিবার এ পুরো জমি দখলে নিয়ে নেয়।

অশোক কুমার ব্যানার্জি আরও জানান- উচ্চ আদালতে মামলা করলে দখলে থাকা পরিবার হেরে গেলেও আজও তারা জমি দখল করে আছে। শুধু তা-ই নয়। এরা মঠের স্থাপনারও যথেষ্ট ক্ষতি সাধন করছে। তবে তারা বহু চেষ্টা করে জেলা পরিষদের অনুদান দিয়ে মঠটি পরিচ্ছন্ন করেন।

২০০৯ এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে মঠের ভেঙে ফেলা দরজা-জানালা ও সিঁড়ির ২২টি ধাপের সংস্কার করান। এর পরে বরিশাল ৪ আসনের সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেই অর্থ দিয়ে মঠের সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ করা হয়েছিল।

হিজলা উপজেলা উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক নূরুল আলম রাজু বরিশালটাইমসকে বলেন, ‘এ মঠ ঘিরে একটি মিথ প্রচলিত ছিল। এলাকার মানুষ মনে করত, মঠের চূড়ায় মূল্যবান ধনসম্পদ রক্ষিত আছে। এ ধারণার বশবর্তী হয়ে প্রায় দুই যুগ আগে রাতের আঁধারে এর একটি চূড়া ভেঙে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।’

তিনি আরও জানান- মন্দিরের চারপাশে বারান্দা রয়েছে। ভেতরে রয়েছে দুটি কক্ষ।

রাজু মনে করেন- জমিদার বরদাকান্ত মিত্র রায় চৌধুরীর বাড়ির দখল হওয়া তিন একর সম্পত্তি উদ্ধার করে পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এগিয়ে আসা উচিত।

হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু জাফর রাশেদ বলেন- ‘আমি নিজেও দৃষ্টিনন্দন এ মঠটি দেখতে কয়েকবার গিয়েছি। বাড়ি ও মঠের জায়গা অনেকেই দখল করে আছে। তবে দখলদারদের উচ্ছেদ ও মঠটির উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

তাপস মজুমদার, মুলাদী

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন