২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

নলছিটির মুড়ি পল্লীতে ব্যস্ততা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৯ অপরাহ্ণ, ২০ মে ২০১৮

রমজানের ইফতারীতে মুড়ির বিকল্প নেই। তাই রমজান এলেই ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়ন এলাকা ও তৎসংলগ্ন ১২টি গ্রামের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কোনো ধরণের রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই হাতে ভেজে উৎপাদিত মুড়ি সুস্বাদু হওয়ায় দেশ জুড়ে এর চাহিদা রয়েছে। এ ইউনিয়নের তিমিরকাঠি, জুড়কাঠি, ভরতকাঠি, দপদপিয়াসহ ১২ গ্রামে সারাবছর ধরেই চলে মুড়ি ভাজার কাজ হয়। তবে রমজান আসতে না আসতেই এ মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাই এসব গ্রামে এখন দিন-রাত মোটা চালের মোটা মুড়ি ভাজার কাজ চলছে।

জানা যায়, গত কয়েক যুগ ধরে এসব গ্রামের কয়েকশ পরিবার মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। প্রতিটি পরিবারে একজন নারী মুড়ি ভাজার মূল ভূমিকায় রয়েছেন। যাকে পরিবারের অন্য সদস্যরা সহায়তা করে থাকেন। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার ছাড়া এসব মুড়ি এখন বরিশাল, ঢাকা ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রসিদ্ধ। উৎপাদনের ব্যাপকতার কারণে এ গ্রামগুলো এখন মুড়ি পল্লী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

মুড়ি ভাজার কৌশলেন বিষয়ে দক্ষিণ তিমিনকাঠি গ্রামের কাজল রেখা জানান, মুড়ি ভাজতে হলে হাতের টেকনিক জানাটা অনেক দরকার। পাশাপাশি মুড়ি ভাজার উপজোগী মাটির চুলা ও সরঞ্জামের গুরুত্বও অনেক। প্রথমে মোটা চাল লবণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাটির পাত্রে হালকা ভাজেন। এক্ষেত্রে ৫০ কেজি বস্তার চালের জন্য এক কেজি লবণের প্রয়োজন হয়। চাল ভাজার পাশাপাশি অন্য মাটির পাত্রে বালির মিশ্রণ গরম করতে হয়। এরপর মাটির অন্য পাতিলের মধ্যে গরম বালি ঢেলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ভাজা চাল ঢেলে দেন। ১০-১৫ সেকেন্ডের নারাচাড়ায় তৈরি হয়ে যায় ভালো মানের মুড়ি।

তিনি বলেন, চুলার তাপ ও সংসারের কাজের জন্য রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যেই ভাজার কাজ শেষ করতে চেষ্টা করেন সবাই। একদিনে কেউ ৫০ কেজি, অনেকে আবার ১শ কেজি চালের মুড়িও ভাজেন।

ওই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব হাবিব সরদার বরিমালটাইমসকে বলেন, বুঝ শক্তি হবার পর থেকে দেখি মুড়ি ভাজতে। বাবার কাছে শুনেছি তার পূর্ব পুরুষ থেকেই মুড়ি ভাজার কাজ চলছে। তিনি বলেন, আড়তদারদের দেয়া চালে ৫০ কেজির এক বস্তা চালে ৪২-৪৩ কেজি মুড়ি হয়। মুড়ি ভাজার লাকড়ি, হাড়ি-পাতিলের খরচ দিয়ে ৫০ কেজি মুড়ি ভেজে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪০০ টাকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে খরচ বাদে টেকে মাত্র ২৫০ টাকা।

আব্দুস সোবাহান হাওলাদার বরিশালটাইমসকে জানান, স্কুল পড়ুয়া ছেলে ইমরান ছোটবেলা থেকেই মুড়ি ভাজার কাজে মাকে সাহায্য করছে। আমি কোনো আড়তদারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নই। ৪-৫ জন পাইকার এসে আমার মুড়ি নিয়ে যায়। তিনি জানান, যে কষ্ট সে অনুযায়ী শ্রমমূল্য না পেলেও এটি একটি শিল্পের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মুড়ি ভাজার কাজের সঙ্গে অনেক পরিবার জড়িয়ে যাচ্ছে। এর অর্থেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ।

স্থানীয় আড়ৎ মেসার্স খান ব্রাদার্সের প্রোপ্রাইটর মো. শহিদুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে জানান, এ অঞ্চলের হাতে ভাজা মোটা মুড়ির জনপ্রিয়তা ও কদর সবসময়ই। কিন্তু মেশিনে ভাজা চিকন মুড়ির কারণে কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে তাদের কম দামে মুড়ি বিক্রি করতে হয়, আর শ্রমিকরাও কম টাকা পাচ্ছেন।

তিনি বলেন- এ অঞ্চলের চার থেকে পাঁচটি আড়ৎ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল যেমন, চট্টগ্রাম, মাগুরা, ফরিদপুর, ঢাকা, সিলেট, টাঙ্গাইল থেকে পাইকার এসে আমাদের কাছ থেকে কিনে নেয়। প্রতিটি আড়তে বর্তমান রমজান মাসে দিনে ৩৫ থেকে ৪০ মন মুড়ি বিক্রি হয়। রোজার আগে এতো চাপ বেড়ে যায় যে, দক্ষ জনবল থাকার পরও চাহিদা অনুযায়ী মুড়ি ভাজা সম্ভব হয় না। আগে ভেজে জমানোও যায় না কারণ নেতিয়ে গেলে ক্রেতারা নিতে চান না।

সরেজমিনে দেখা গেছে- এ অঞ্চল থেকে এখন প্রতিদিন দেড় থেকে তিনশ মণ মুড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। যা কেজি প্রতি ৮০ টাকা দরে আড়তদাররা বিক্রি করছেন।

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন