২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

নির্ধারিত সময়েই শেষ হবে লেবুখালি সেতু নির্মাণ কাজ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০০ অপরাহ্ণ, ১৮ মে ২০১৭

সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই লেবুখালি সেতুর কাজ শেষ করার জোর প্রস্তুতি চলছে। আকাঙ্খার এই সেতুটির কাজ শেষ হলে একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সাথে যোগাযোগ অকেটা সহজ হবে। মাত্র ২ থেকে আড়াই ঘণ্টায় বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যাওয়া সম্ভব।

যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিশ্র“তি রয়েছে তাদের মেয়াদে সেতুটির কাজ শেষ করার। যে কারণে অনেকটা দ্রুত গতিতেই এগিয়ে চলছে বরিশাল কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাড়কের লেবুখালি পয়েন্টের পায়রা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ।

বরিশাল কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাড়কে এটিই সর্বশেষ সেতু। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, বরগুনার আমতলী ও সাগরকন্যা কুয়াকাটার সাথে সরাসরি যোগাযোগে আর কোনো বাধা থাকবে না। পাশাপাশি এসব রুটে যাতায়তের সময়ও কমে আসবে।

একটা সময় ছিল যখন বরিশাল থেকে সড়কপথে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় যেতে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা লেগে যেতো। বরিশাল থেকে কুয়াকাটার ১০৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কপথের ৫টি পয়েন্টে ছিলো ফেরি। এ কারণে ঘাটেঘাটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হতো যাত্রীদের।

অর্ধযুগের একটু বেশি সময়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহর সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীর ওপরে শেখ কামাল, হাজীপুরে সোনাতলা নদীর উপরে শেখ জামাল ও শিববাড়িয়া নদীর ওপরে শেখ রাসেল সেতু ও বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর ওপর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবত সেতু ও খয়েবাবাদ সেতু নির্মিত হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজতর হয়েছে। বেঁচে গেছে অর্ধেক সময়।

তারপরও বরিশাল জেলার সীমান্তবর্তী ও পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলাধীন লেবুখালী ফেরিঘাট পয়েন্টে দুর্ভোগ থেকে গেছে নিত্যসঙ্গী।পুরনো জরাজীর্ণ ফেরি, যানজট, সংশ্লিষ্ট মহলের স্বেচ্ছাচারিতা, নদীভাঙন, বৈরি আবহাওয়া সবকিছু মিলে চরম ভোগান্তি ভুগিয়ে চলছে এই ফেরিঘাটটির ব্যবহারকারীদের।

এহেন দুর্ভোগ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে গত বছর লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা নদীর উপরেএকটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকারের সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়। আর এখন সেই সেতু নির্মাণের কাজ অনেকটাই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

আর এতেই উন্নয়নের হাওয়া লেগে গেছে গোটা এলাকাজুড়ে। শিল্প উদ্যোক্তারা খুঁজছেন জমি। তাই রাতারাতি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জমির দাম। তাই সেতুটির নির্মাণ শেষ হলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থিক উন্নয়ন হবে। সেইসঙ্গে বাড়বে জীবনযাত্রার মান।

স্থানীয় বাসিন্দারা বরিশালটাইমসকে বলছেন, এই সেতুটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে কুয়াকাটা এবং নির্মাণাধীন পায়রা বন্দরের সাথে বরিশালসহ সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সুবিস্তৃত ও সহজতর হবে। পায়রা বন্দরের পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সার্বিক উন্নয়ন সাধনও সহজেই সম্ভবপর হবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যেতে যে সময় লাগে, তার  অর্ধেক সময়ে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসা যাবে। আর পদ্মা সেতু হয়ে গেলে তো সময়ের ব্যবধান যাবে আরও কমে!

সড়ক যোগাযোগ ও সেতুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল থেকে কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা নদীর ওপর ১ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৪শ’ ৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৯.৭৬ মিটার প্রশস্ত সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় গত বছরের ২৪ জুলাই। পর্যটন চাহিদার কথা মাথায় রেখে তৃতীয় কর্নফুলী সেতুর আদলে এক্সটা ডোজ কাবল স্টেইড পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে এতে। কুয়েত সরকারের আর্থিক সহায়তায় চার লেন বিশিষ্ট সেতুটির নির্মাণকাজ করছে চীনা প্রকৌশল সংস্থা লং জিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

চার লেন বিশিষ্ট নান্দনিক শোভামণ্ডিত এই সেতুটি দাঁড়িয়ে থাকবে ৩৫০টি পাইলের উপরে। চীনা ও ভারতীয়সহ অর্ধ শতাধিক বিদশি প্রকৌশলী ও কারিগরের উপস্থিতিতে এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক পাইল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৬ ভাগের মতো। সব কিছু ঠিক থাকলে নির্ধারিত ৩৩ মাসে, ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিলের মধ্যে, সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।

সড়ক যোগাযোগ ও সেতু বিভাগের পায়রা সেতু প্রকল্পের কনসালট্যান্ট ও আবাসিক প্রকৌশলী মনোজিত কুমার সাহা বরিশালটাইমসকে জানান, পায়রা নদীর ওপর লেবুখালি পয়েন্টে সেতুর কাজ যথানিয়মে এগিয়ে চলছে। প্রথমে বরিশাল প্রান্তে কাজ শুরু হলেও এখন দুই প্রান্তেই কাজ চলছে। পায়রা বন্দর ও পর্যটন এলাকার বিষয়টি মাথায় রেখে করা  নকশা অনুযায়ী সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সেতুটি যান চলাচলের জন্য নির্ধারিত সময়েই খুলে দেয়া হবে।”

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন