২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

নৌযানে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বরিশালে ফিরছে মানুষ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৪০ অপরাহ্ণ, ১৪ জুন ২০১৮

বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে বুধবার (১৩ জুন) থেকে নৌপথে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে’ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) গার্মেন্টসসহ সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের ঢল নামবে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতে। এ বাড়তি চাপ সামাল দিতে লঞ্চগুলো ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌপথে যাত্রা করবে।

এমতাবস্থায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- ঈদে বাড়তি লাভের আশায় তড়িঘড়ি একাধিক কোম্পানির লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ মেরামত করে স্পেশাল সার্ভিসে যুক্ত করা হয়েছে।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বড় লঞ্চে সর্বোচ্চ ১৫শ’ যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। অথচ ঈদ উপলক্ষে ওই লঞ্চই ৬ থেকে ৭ হাজার যাত্রী পরিবহন করে থাকে। প্রভাবশালী লঞ্চ মালিকদের লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহন করে থাকে আরো বেশি। এছাড়া পর্যাপ্ত বয়া, বিকন বাতি ও মার্কার সংকট রয়েছে প্রথম শ্রেণির ঢাকা-বরিশাল নৌপথে। পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা ও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবোচর নির্ণয়ে সমস্যা হওয়ায় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন লঞ্চ চালকরা। এছাড়া আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতার কারণে নৌযানের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কাও রয়েছে।

লঞ্চ চালকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঢাকা-বরিশাল নৌপথের বরিশাল অংশের চরবাড়িয়া, চরমোনাই, ভাসানচর, হিজলা, কালীগঞ্জ হয়ে লালখারাবাদ পর্যন্ত একাধিক বাঁক এবং অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। এসব স্থানে প্রয়োজনীয় বিকন বাতি, বয়া নেই। এছাড়া পটুয়াখালী থেকে ঢাকা রুটে বরিশাল অংশের নদীপথের শ্রীপুর ও দুর্গাপাশার চারটিস্থানে দীর্ঘদিন থেকে বিকন বাতি জ্বলে না।

সুন্দরবন লঞ্চের মাস্টার জামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বরিশাল ও পটুয়াখালী থেকে ঢাকা নৌপথে রাতের বেলা যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো চলাচল করে। তাই পর্যাপ্ত বয়া, বিকন বাতি ও মার্কার প্রয়োজন। নতুবা ঈদ উপলক্ষে নতুন চালকরা যাত্রী বোঝাই নৌযান নিয়ে সংকেত চিহ্ন দেখতে না পেয়ে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। লঞ্চ মালিকরা জানান, বয়া ও বিকন বাতি পর্যাপ্ত না থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগেই জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

একাধিক লঞ্চ মালিক জানান, একাধিক কোম্পানির বিলাসবহুল লঞ্চ বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যুক্ত হওয়ায় আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতার কারনে নৌযানের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক মাসের দুর্ঘটনায় নতুন লঞ্চ মালিকদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে।

বিলাসবহুল লঞ্চের মাস্টাররা সাংবাদিকদের জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর লঞ্চগুলো যতই দুর্ঘটনা এড়াতে চাক না কেন অপর লঞ্চের সংঘর্ষ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তার উপর মালবাহী কার্গো চলাচল করে কোনো প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে। গত কয়েকদিন ধরেই দমকা ও ঝড়ো হাওয়ায় সাবধানতার সাথে লঞ্চ পরিচালনা করতে হচ্ছে বলে জানান পারাবত-১২ লঞ্চের মাস্টার ফারুক হোসেন।

বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, আগের তুলনায় নৌ দুর্ঘটনা অনেক কমেছে। তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি নৌ দুঘর্টনা যাত্রী থেকে শুরু করে লঞ্চ স্টাফদের মধ্যেও ভীতি’র সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে- গত এক বছরে নৌ-দুঘর্টনায় যাত্রী আহতসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা নিয়ে কেউ ভাবছেন না। সম্প্রতি মেঘনায় হিজলা উপজেলার মিয়ারচর নামকস্থানে গভীর রাতে বরিশালগামী যাত্রীবাহী কীর্তনখোলা-২ লঞ্চের সাথে সুন্দরবন-১০ লঞ্চের সংঘর্ষ, মাঝ নদীতে বেঁধে রাখা কার্গোর সাথে সদ্য নির্মিত কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের সংঘর্ষ এবং পারাবত-১২ লঞ্চের সাথে সুন্দরবন-১১ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনায় যাত্রীরা আতংকিত হয়ে পড়ে।

এ সময় সাধারণ যাত্রীদের মাঝে আতংকটা বেশি কাজ করছে। কারণ স্বাভাবিক সময়ে দুর্ঘটনায় লঞ্চে যে যাত্রী থাকে ঈদে যাত্রী থাকে ধারন ক্ষমতার কয়েকগুন। এ সময় দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের প্রানহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে যাত্রীদের আশংকা।

দু’লঞ্চের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশাল নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, দুর্ঘটনার পর অল্প সময়ের মধ্যে লঞ্চ মালিকরা বৈঠক করে তা সুরাহা করে ফেলেন। এতে বিআইডব্লিউটিএ পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চ দুর্ঘটনার পর তিনি কঠোর সিদ্ধান্ত দিলেও লঞ্চ মালিক ও বিআইডব্লিউটিএ’র সদিচ্ছা না থাকার কারনে তা বাস্তবায়িত হয় না। তিনি বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও প্রত্যেক লঞ্চে মাস্টারকক্ষে সকল দুর্ঘটনা লিখে রাখতে বললেও তা মানা হচ্ছে না। দুর্ঘটনার বিবরণ ও শাস্তি লিখে রাখলে মাস্টারগণ সচেতন এবং নিজেরা সংযত হয়ে লঞ্চ পরিচালনা করতেন।

তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, দুর্ঘটনায় শাস্তির ব্যবস্থা এবং লঞ্চ পরিচালনা নির্দেশনা মান্য করতে বাধ্য করতে হবে। তা না হলে বেপরোয়া লঞ্চ মালিক ও মাস্টারদের ঠেকানো যাবে না এবং বার বার দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন