২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পটুয়াখালীতে যুবদল নেতার হাতে নৌকা প্রতীক, বাবা বিএনপি নেতা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:০৬ অপরাহ্ণ, ১০ মার্চ ২০১৮

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের যুবদল নেতা শাহজাদা পারভেজ ওরফে টিনুকে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতিকে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ এলাকাবাসী। ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতির ছেলে যুবদল নেতাকে দেয়া নৌকার হাল এবং তার গায়ে মুজিব কোট পরিহিত অবস্থায় দেখতে রাজি নন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। এর প্রতিবাদে তারা গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ওই ইউনিয়ন। ক্ষুব্ধ ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।

ধানখালী ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী অভিযোগ করে জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ধানখালী ডিগ্রী কলেজ মাঠে এক বর্ধিত সভায় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী যাচাই করার সিদ্ধান্ত হয়। ভোট গ্রহণে ৮ নম্বর ধানখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার ২৩ ভোট, সদ্য স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগ দেয়া যুবদল নেতা ১৭ ভোট, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বিশ্বাস ৯ ভোট এবং বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ গাজী ২ ভোট পান।

ওই সভার পরবর্তীতে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতারা শাহজাদা পারভেজ টিনুকে বিএনপি পরিবারের সদস্য বলে মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ছায়ালিপি প্রেরণ করেন। এতে আরও উল্লেখ করা হয় অর্থের মাধ্যমে যুবদল নেতা শাহজাদা পারভেজকে মাত্র একমাস পূর্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সমর্থকরা জানান, বঙ্গবন্ধুর আমল থেকেই নিঃস্বার্থভাবে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট দেই। কিন্তু এখন এ কি দেখছি আমরা। বিএনপি নেতার ছেলে যুবদল নেতাকে ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে মনোনীত করা হলো। সে এখন মুজিব কোট গায়ে দিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। বিএনপির আমলে এই টিনু ও তার বাবা এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করেছে। এও আমাদের দেখতে হয়।

এদিকে ধানখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল কমিটির একটি তালিকার ১৯ নম্বরে শাহজাদা পারভেজ এর নাম দেখা গেছে এমন প্রশ্নে শাহজাদা মিয়া টিনু বলেন, এটি মিথ্যা এবং বানোয়াট। আমার পিতা আলতাফ হোসেন বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ধানখালী ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতিও ছিলেন। কিন্তু আমি ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগের কোন কমিটির তালিকায় তার নাম আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে ২০১৪ সালের আগে তিনি ব্যবসা করতেন।

অপরদিকে ধানখালী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাহিন মোল্লা জানান, শাহাজাদা পারভেজ ২০০৪ সালে যুবদলের কমিটিতে সদস্য ছিলেন।

ধানখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রিড়া সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার জানান, আমি তৃনমুল নেতাদের দেয়া ভোটে ২৩ ভোট এবং সদ্য স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগ দেয়া যুবদল নেতা ১৭ ভোট লাভ করেছে। পটুয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. উজ্জল বোস, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফিরোজ সিকদার অর্থের বিনিময়ে যুবদল নেতা পারভেজকে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করেছেন এবং একই প্রক্রিয়ায় তারা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী টিনু কম ভোট পেলেও আমার নামের স্থানে তার নাম লিখে নকল কাগজ কেন্দ্রে পাঠায়।

কলাপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল-আমীন জানান, নীতিগতভাবে যে ব্যক্তি ভোট বেশি পেয়েছে তার মনোনয়ন পাওয়া উচিৎ। স্রষ্টার প্রদত্ত নিয়ম আছে যে, যার তৌফিক আছে তিনিই উপযুক্ত মর্যাদা পাবে। যেটা হয়েছে সেটা অস্বাভাবিক বলে আমার মনে হয়।

এদিকে কলাপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফিরোজ সিকদার বলেন, শাহজাদা পারভেজ কখোন বিএনপি করেনি এবং তিনি বিএনপি পরিবারের সদস্যও নয়।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট উজ্জল বোস বলেন, “শাহজাদা পারভেজ ২০১৪ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাথে জড়িত রয়েছে। তিনি বিএনপির কেউ নন। অর্থনৈতিক সুবিধা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অর্থ নিয়ে আমি কাউকে মনোনয়ন দিতে পারিনা। শাহজাদা আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত বলেই তৃণমূল ভোটে অংশ নিতে পেরেছেন। পটুয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহনুর হক বেপারী জানান, বিষয়টি আমার জানা নাই।

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, তৃণমূলে যে ভোটগ্রহণ হয়েছে তার মূল তালিকা আদৌ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানো হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। তার কারণ যুবদল নেতা টিনু ১৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। আর টিনুর মন্তব্যের কলামে লেখা ছিল তিনি যুবদলের সদস্য এবং বিএনপি পরিবারের। তার বাবা বিএনপি নেতা। যা হয়েছে তা দলের পরিপন্থি বলে আমার মনে হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ্ব কাজী আলমগীর হোসেন জানান, কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী মনোনীত করেছে। সেখানে আমার কোন বক্তব্য নেই। তবে জেলায় মোট ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীদের তালিতা তৈরী করে কেন্দ্রে কাগজ পাঠানো হয়েছে। সেখানে ৬টি ইউনিয়নেই ভোটে যারা প্রথম হয়েছে তারা মনোনয়ন পেয়েছেন।

শুধু একটি মাত্র ইউনিয়ন ধানখালীতে দ্বিতীয় ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে বিষয়টি আমি শুনে খোঁজ খবর নিয়ে দলের হাইকমান্ডে জানিয়েছি। আমার কথা ছিল এরকম যেহেতু বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সেহেতু বিষয়টি নিয়ে হাইকমান্ডের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’’

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন