১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরগুনাসহ ১০ জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১২ মাদক বিক্রেতা নিহত

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৪৮ অপরাহ্ণ, ২৬ মে ২০১৮

সারাদেশে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আজও ১২ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে এসব বন্দুকযুদ্ধ হয় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। এদের মধ্যে কুমিল্লায় ২, ময়মনসিংহে ১, চাঁদপুরে ১, দিনাজপুরে ২, জয়পুরহাটে ১, বরগুনায় ১, ঠাকুরগাঁওয়ে ১, ফেনীতে ১, পাবনায় ১ ও কুড়িগ্রামে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের সবার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা রয়েছে।

গতকাল শুক্রবারও সারাদেশে বন্দুকযুদ্ধে ১১ মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

বরগুনা

বরগুনায় ছগির খান নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে সদর উপজেলার ৪ নম্বর কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জাকিরতবক এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুজ জামান বরিশালটাইমসকে জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে ছগির খান মারা গেছেন।

কুমিল্লা

কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবুল (৪০) ও আলমাস (৩৬) নামের দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা ও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহ জাহান কবির জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে ব্রাহ্মণপাড়া-দেবিদ্বার সার্কেলের এএসসি শেখ মোহাম্মদ সেলিম ও তিনি (ওসি) সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপজেলার বাগরা এলাকায় অবস্থান নেন। রাত দেড়টার দিকে মাদক ব্যবসায়ী বাবুল ও আলমাস তাদের সহযোগীদের নিয়ে সেখানে পৌঁছালে তাদের আটকের চেষ্টা করে পুলিশ। এসময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে ১৬ রাউন্ড গুলি চালায়।

উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ী বাবুল ও আলমাস গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে উভয়ের মৃত্যু হয়। নিহত বাবুলের বিরুদ্ধে ১৬টি ও আলমাসের বিরুদ্ধে ৮টি মাদকের মামলা রয়েছে।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আঠাবাড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহজাহান মিয়া (৩০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত শাহজাহানের বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম খান জানান, শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জের আঠাবাড়ি তেলওয়ারী গন্ডিমোড়ে আবুল খায়েরের গ্যারেজের পশ্চিমে ফাঁকা রাস্তায় কয়েকজন মাদক বিক্রেতা মাদক ভাগাভাগি করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ যৌথভাবে মাদক বিরোধী অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা সদস্যরা প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ পরে এবং পরে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থল তল্লাশি করে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহজাহানকে আটক করা হয়। গুরুতর আহত শাহজাহানকে রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গ্রাম হেরোইন, ৫টি গুলির খোসা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

চাঁদপুর

চাঁদপুরের কচুয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবলু (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বাবলু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, রাতে একাধিক মামলার আসামি ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বাবলুকে উপজেলার ১১নম্বর দক্ষিণ গোহাট ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রাম থেকে আটক করা হয়। থানায় নিয়ে আসার পথে একই উপজেলার ১০নম্বর উত্তর গোহাট ইউনিয়নের ব্রিক ফিল্ডের কাছে বাবলুর সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং ককটেল নিক্ষেপ করে তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে গোলাগুলি হয়। এ সময় বাবলু গুলিবিদ্ধ হলে তাকে কচুয়া হাসপাতালে নেয়া হয় কিন্তু সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।

দিনাজপুর

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন ও সদর উপজেলার রামসাগরে দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গুলি বিনিময়ে আরও এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন, বীরগঞ্জ উপজেলার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা সাবদারুল ইসলাম (৪২) ও নিহত আবদুস সালাম ওই এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ১৩ দিনাজপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক (সিও) মেজর তালুকদার নাজমুছ সাকিব জানান, শুক্রবার ভোরে বীরগঞ্জে বিপুল মাদক পাচারের খবর পেয়ে র‌্যাব অভিযান চালায়। এ সময় র‌্যাবকে লক্ষ্য করে সাবদারুল গুলি ছুড়লে র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। পরে তার কাছে একটি বিদেশি পিস্তল, চার রাউন্ড তাজা গুলি, এক রাউন্ড গুলির খোসা, প্রায় দুই কেজি গাঁজা ও ১০০ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়। এ ঘটনায় আহত হন দুই র‌্যাব সদস্য।

এদিকে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেদওয়ানুর রহিম জানান, রাতে রামসাগর এলাকায় দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি টহল দল সেখানে গেলে আবদুস সালামকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক আবদুস সালামকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ফেনসিডিল, চারটি হাত বোমা, একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

জয়পুরহাট

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভীমপুর এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রেন্টু মিয়া (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে র‌্যাব। রেন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ৭ টি মাদক মামলা রয়েছে।

র‌্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম হোসেন জানান, একদল মাদক ব্যবসায়ী জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভীমপুর এলাকায় অবস্থান করছে খবর পেয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে ওই এলাকায় র‌্যাব অভিযান চালায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায় এবং মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে রেন্টু মিয়াকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোবারক হোসেন কুট্টি (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। শনিবার ভোরে সদর উপজেলার ১৯নং বেগুনবাড়ি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মাদকের প্রায় ১৫টির মামলা রয়েছে।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে সদর উপজেলার পশ্চিম বেগুনবাড়ি ইউনিয়নে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় কুট্টিসহ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে মোবারক হোসেন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। ঘটনাস্থল বিস্ফোরিত ৫টি ককটেল, বন্দুকের কার্তুজ ও বেশকিছু দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

ফেনী

ফেনীর রুহিতিয়া এলাকা থেকে কবির হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কবির রুহিতিয়া ব্রিকফিল্ড এলাকায় নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদ খাঁন চৌধুরী বলেন, ভোর ৪টার দিকে সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের রুহিতিয়া ব্রিকফিল্ড এলাকায় গোলগুলির খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার পরিচয় মেলে। নিহত কবির একজন ডাকাত। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, মাদকসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক, একটি গুলি ও গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।

পাবনা

পাবনা সদর থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আব্দুর রহমান নামে একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহত আব্দুর রহমান চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, আব্দুর রহমানকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য নেয়। পরে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে তাকে নিয়ে শহরের দোগাছী ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় আব্দুর রহমান পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

মাদক ব্যবসায়ীদের ছোড়া ককটেলের আঘাতে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি দেশি শাটারগান, তিন রাউন্ড গুলি, চার রাউন্ড গুলির খালি খোসা ও দুইশ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে।

কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দক্ষিণ বাঁশজানি সীমান্তে শনিবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইব্রাহিম হোসেন (৩৭) নামে এক মাদক চোরাকারবারী নিহত হয়েছেন। পুলিশ এ সময় ৫ কেজি গাঁজা, দেশীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। এ সময় এএসআই নাদের ও আইয়ুব নামে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির জানান, ভোরে ভারতীয় সীমান্তঘেষা দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রামে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য উদ্ধারে গেলে মাদক চোরাকারবারীরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে মাদক পাচার সিন্ডিকেট প্রধান ইব্রাহীমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে পাঠান। সেখানে সকাল সোয়া ৯টায় তার মৃত্যু হয়।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন