২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বরিশালের দিকে ধেয়ে আসছে ‘রোয়ানু’

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৪০ অপরাহ্ণ, ১৯ মে ২০১৬

বরিশাল: পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ রূপ নিয়েছে। পটুয়াখালির পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সেটি অবস্থান করছে। আগামী রোববার নাগাদ ঘুর্ণিঝড়টি বরিশালের দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ পটুয়াখালিতে আঘাত হানার সম্ভবনা রয়েছে।

 

আর যদি এমনটি হয়, তাহলে এ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। বিশেষ করে বেশি মাত্রায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দ্বীপ জেলা ভোলার এবং পটুয়াখালির উপকূলীয় এলাকার মানুষ। যে কারণে দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতিস্বরূপ প্রতিটি জেলায় জরুরী সভা করেছে প্রশাসন।

 

বিভাগীয় জেলা শহর বরিশালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সভা করে সকলকে নিরাপদ স্থান এবং সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।’ বৃহস্পতিবার বিকেল বরিশাল জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুর নাহার আফরোজ, জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদুজ্জামান এবং ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আঞ্চলিক উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ প্রমূখ। এছাড়া বরিশালের সকল উপজেলাগুলোতেও ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশাল জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে সম্ভাব্য সবধরনের প্রস্তুতি।

 

এর অংশ হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উপজেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার পাশাপাশি সকল উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। এদিকে, উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে, বাংলাদেশ বেতারে সতর্কতা সংকেত বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে স্বেচ্ছাসেবকরা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার কাজের জন্য ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে অবস্থান করছে। জেলা প্রশাসনের ভান্ডারে পর্যাপ্ত ত্রান মজুদ রয়েছে এছাড়া উপজেলা শুকনো খাবার প্রেরণ করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’

 

এ অঞ্চলের সবগুলো জেলা থেকে খবর এসেছে ফায়ার সার্ভিস, আনসার ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্ট, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিদ্যুৎ, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

 

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার বার্তা বরিশাল আবহাওয়া অফিস বলছে, বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি গভীর নিন্মচাপ অবস্থান করছে। নিম্নচাপটি আরো শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’তে রূপ নিয়েছে। এটি পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। যে কারণে স্থানীয় নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। অবশ্য সতর্ক সংকেত থাকায় বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকেই বরিশালের নৌরুটে ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বন্দর বিভাগ।
এদিকে, ঘূর্নিঝড় ‘রোয়ানু’ মেকাবেলায় ভোলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসক বাসভবনে জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। সভায় জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ঘূর্নিঝড় মোকাবেলায় জেলায় ১০ হাজার ২০০ সেচ্ছসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোলা হয়েছে ১১টি কন্ট্রোল রুম। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৯২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলার ৫ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।এদিকে, ঝড় মোকাবেলায় ভোলা-লক্ষীপুর ও ভোলা বরিশাল রুটের ফেরী চলাচলসহ জেলার অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার রুটের সকল নৌ-যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

 

 

শুক্রবার থেকে সরকারি দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, ত্রান শাখাসহ এবং ৭ উপজেলার  ১১কন্ট্রোল রুম কাজ করবে। সিপিসি ও রেডক্রিসেন্ট কর্মীদের দুর্গম  ও উপকূলবর্তী এলাকায়  প্রচার-প্রচারাভিযান চালাতে বলা হয়েছে। এছাড়াও নিরাপদ আশ্রয় আসতে বলা হয়েছে নৌযানগুলোতে। উপকূলের দ্বীপ চরে বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো আসতে বলা হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক মনোয়ার হোসেন, জেলা তথ্য অফিসার নুরুল আমিন, জেলা সিভিল সার্জন ডা: ফরিদ আহমেদ, প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার কর্মকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী তোফায়েল হোসেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ছাইয়াদুজ্জামান, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার, ভোলা প্রেসক্লাব সভাপতি এম হাবিবুর রহমান, সিপিপি উপ-পরিচালক মো: সাহাবুদ্দিন, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারন সম্পাদক আজিজুল ইসলাম, পৌর ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঞ্জুরুল আলম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: ইউনুস, দেশটিভি প্রতিনিধি ছোটন সাহা, রেডক্রিসেন্টের উপ-প্রধান আদিল হোসেন তপু প্রমুখ। এদিকে, ঘূর্নিঝড় প্রভাবে দুপুর থেকেই ভোলায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছিলো।

 

দিনভর ভারী বর্ষন ও দমকা হাওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় জেলায় ৪ নাম্বার সতর্কতা সংকেত জারী করা হয়েছে। এতে উপকূলে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ঝড়ের প্রভাবে মেঘনার পানি ২. ৮৬ ও তেতুলিয়ার পানি ২.৩০ মিটার উপর দিয়ে প্রভাবিত হয়। এতে নিম্মাঞ্চল প¬াবিত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার দুপুরের পর ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। জেলা ডেক্রিসেন্ট এর ৪ শতাধিক কর্মী দুর্যোগ মোকাবেলায় এলাকায় এলাকায় মাইকিং করছে। এছাড়াও বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট ও ব্রাক সেচ্চাসেবীরা মাঠে রয়েছে। অন্যদিকে কোস্টগার্ড দক্ষিণাঞ্চলীয় জোনের সদস্যরা ঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।

13 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন