১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালে রেড অ্যালার্ট!, আতঙ্কিত অপরাধীরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:০৩ পূর্বাহ্ণ, ২১ মে ২০১৮

মাদক ব্যবসায়ি কিংবা সন্ত্রাসী দমন প্রশ্নে অনেকটা নড়েচড় বসেছে বরিশাল পুলিশ। আইনশৃঙ্কলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মহল্লা বিশেষ বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নজরদারি। পাশাপাশি সন্ধ্যা রাত থেকে সকাল পর্যন্ত শহরে প্রবেশদ্বারগুলোতে বসানো হয়েছে পুলিশি চেকপোষ্ট। সেসব স্থানে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পাশাপাশি যানবাহনেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

এক্ষেত্রে বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে- পুলিশের এমন নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টি নিরপরাধ মানুষকেও এক ধরণের ভীতির মধ্যে ফেলেছে। বিশেষ করে রাত ৮ টার পর শহরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে পোশাকধারী পুলিশের আনাগোনায় সেই ভীতি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যদিও পুলিশের এই কড়াকড়ি আরোপে মাদক ব্যবসায়ি বা সন্ত্রাসীরা আপাতত গাঢাকা দিয়েছে। বিশেষ করে শনিবার ভোর রাতে বরিশাল সদর উপজেলা শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নে ডিবি পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবুল কাশেম নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় শহরের অপরাধীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। অবশ্য ওই ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণায় আতঙ্ক আরও দ্বিগুন যোগ হয়েছে।

এমন বাস্তবতায় বলা যাচ্ছে- পুলিশের কড়াকড়ি আরোপে বরিশাল নগরীতে এক ধরণের অঘোষিত ‘‘রেড অ্যালার্ট’’ জারি হয়েছে। এক্ষেত্রে বরিশাল পুলিশের ভাষ্য হচ্ছে- হেডকোয়াটারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ি নগরবাসীর নিরাপত্তায় এ ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসী বা মাদক ব্যবসায়িদের নগরীতে অবাধ বিচরণের বিষয়টি অনুমানে নিয়ে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের যেসব কর্মকর্তা ছুটিতে ছিলেন তাদের ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে স্ব স্ব কর্মস্থলে। এমনকি তাদের নতুন দিকনির্দেশনা দিয়ে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে বলা হয়েছে।

বলা বাহুল্য যে সাম্প্রতিকালে পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন বদলিজনিত কারণে বরিশাল ছাড়ার পর ভারপ্রাপ্ত কমিশনার হিসেবে মো. মাহফুজুর রহমানের দিকনির্দেশনায় এখানকার পুলিশ বেশিমাত্রায় তৎপরতা বাড়িয়েছে।

বিশেষ করে বরিশাল শহরে চলাচলরত অবৈধ বা কাগজপত্রবিহীন মোটরসাইকেলগুলোর বিরুদ্ধেও এক ধরণের নিষেধজ্ঞা তুলেছে। সমসাময়িক সময়ের বরিশাল শহরে অভিযান চালিয়ে ১ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল আরোহীর বিরুদ্ধে মামলা করে জরিমানা নিয়েছে। সেই অভিযানে বাদ পড়েনি পুলিশ বা সাংবাদিকদের গাড়িও। অবশ্য পুলিশের এই অভিযানকে সমপোযোগি বলে খোদ সাংবাদিক নেতারাও সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও রোববার পর্যন্ত বড় কোন সন্ত্রাসী বা মাদক ব্যবসায়িকে আটকের খবর দিতে পারেনি পুলিশ। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে শান্ত বরিশালকে মাদক ব্যবসায়ি বা সন্ত্রাসীরা যেন কোন মতে অশান্ত করে না তুলতে পারে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে নগরীর প্রবেশদ্বার কাশিপুর, নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী এলাকায় রাতের বেলা বসানো হচ্ছে পুলিশি চেকপোষ্ট। এই দুটি চেকপোষ্টে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের গভীর রাত পর্যন্ত তদারকি করছেন সহকারি কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। ফলে বরিশাল শহরে এখন মাদক ব্যবসায়ি বা সন্ত্রাসীদের আনাগোনা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

এমন বাস্তবতায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহফুজুর রহমান অভিযানের ধারবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়টি অবহিত করে জানিয়েছেন- প্রধানমন্ত্রী মাদক বা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি দেখিয়ে যেতে বলেছেন। যেই বিষয়টি খোদ আইজিপি ও র‌্যাবের মহাপরিচালককে ডেকে নিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। মূলত এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা নির্দেশনার আলোকে বরিশাল র‌্যাব পুলিশ মাদক ব্যবসায়ি বা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে। তাছাড়া আগামীতে সিটি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুন্দর পরিবেশ গড়ার ক্ষেত্রে এই দুটি অপরাধ রহিত করতে জনগণও স্বোচ্চার হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে এসব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকবে বরিশাল পুলিশ এমনটাই জানিয়েছেন কমিশনার মাহফুজুর রহমান।

অনুরুপ প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারি কমিশনার (এসি) নাসিরউদ্দিন মল্লিক জানিয়েছেন- নগরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিমও মাঠে রয়েছে। যাতে করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বা মাদক চোরাচালান করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে।’’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন