১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল সওজের সবকটি ফেরিই চলাচল অনপুযোগী, মাঝ পথে ভোগান্তি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১০ অপরাহ্ণ, ১২ মার্চ ২০১৭

বরিশাল বিভাগে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওয়াতাধীন সবগুলো ফেরিই চলাচল অনপুযোগী হয়ে পড়েছে। যানবাহন পারাপারকারী ফেরিগুলোর নতুন ইঞ্জিন না কেনায় মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন মেরামত করে সচল রাখা হচ্ছে ফেরি সার্ভিস।

এসব ইঞ্জিন চলতিপথে আকস্মিক যখন তখন বিকল হয়ে যাচ্ছে। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।

বরিশাল বিভাগীয় সওজ সূত্র নিশ্চিত করেছে- ১৮টি ফেরির সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। ফেরির ইঞ্জিনের মেয়াদ কোনটার এক দশক কোনটার দেড়যুগ পার হয়েছে। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় আরও কয়েকটি ঘাটে ফেরির চাহিদা থাকলেও যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’

তবে সঙ্কট নিরসনে সম্প্রতি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) জমা দেওয়া হয়েছে। এক বছরের মধ্যে নতুন ইঞ্জিন পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সওজের ফেরি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের বরিশাল সার্কেলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামসুল হক।’’
সওজ সূত্র জানায়- বরিশাল জেলায় লক্ষ্মীপাশা, গোমা, নেহালগঞ্জ, বেলতলা, মীরগঞ্জ ও বানারীপাড়ায় ৬টি ফেরি রয়েছে। পিরোজপুর জেলার চরখালী, বেকুটিয়া ও আমড়াঝুড়িতে ফেরি চলাচল করছে ৩টি। পটুয়াখালী জেলায় লেবুখালী, বগা, গলাচিপা, পায়রাকুঞ্জ ও নলুয়াবাহেরচর মিলিয়ে ফেরি রয়েছে ৫টি।’’

বরগুনা জেলার আমতলী ও বড়ইতলীতে ২টি ফেরি চলছে। আর ঝালকাঠী জেলার ষাটপাকিয়া ও আমুয়াতে রয়েছে ২টি ফেরি।

এরমধ্যে লেবুখালী, চরখালী, আমতলী ও বেকুটিয়া ব্যস্ততম ফেরিঘাট। এ ঘাটগুলো দিয়ে ২৪ ঘণ্টাই যানবাহন পারাপার হয়। এই ঘাটগুলোতে ৩১৫ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-১ ফেরি রয়েছে। অপরগুলোয় ২০০ অশ্ব শক্তির ইউটি টাইপ-২ ফেরি চলাচল করছে।’’

ফেরি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইংল্যান্ডে নির্মিত ফেরির ইঞ্জিন বেশিরভাগই ১৯৮০ থেকে ’৮২ সালের মধ্যে আনা হয়েছিল। সাড়ে তিন দশক পার হওয়াতে ইঞ্জিনের সিলিন্ডার, পিস্টন, লার্নারে সমস্যা বেশি দেখা দেয়। ২৫ বছর পাড় হলেই ইঞ্জিনের অশ্বশক্তি কমে আসে। এজন্য কখনও কখনও স্রোতের বিপরীতে কুলিয়ে ওঠে না ফেরিগুলো। বাড়তি চাপ পড়ায় ইঞ্জিন সিস হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে ফেরি বিকল হয়।’’

চরখালি, বেকুটিয়া, আমড়াঝুড়ি ব্যস্ততম ঘাটের দায়িত্বে থাকা এই প্রকৌশলী আরও জানান, গুরুত্বপূর্ণ ঘাটগুলোর জন্য বাড়তি ইঞ্জিন মেরামত করে রাখেন তারা। নতুন ইঞ্জিন পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুরানো ইঞ্জিন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে যন্ত্রাংশ লাগিয়ে চলার উপযোগী করেন। যা আবার দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই বিকল হয়।’’

খরচ বাঁচাতে ইজারাদারদের সময়মতো ইঞ্জিনের মবিল পরিবর্তন না করার কারণেও ইঞ্জিন বিকল হয় বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহা. শামসুল হক বরিশাল বলেন- ‘কেবল ইঞ্জিন নয় ফেরির অবকাঠামোও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ৩১৫ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-১ ফেরির ধারণ ক্ষমতা ১১০ মেট্রিকটন যা ১২টি গাড়ি বহন করতে পারে। আর ২০০ অশ্ব শক্তির ইউটি টাইপ-২ ফেরির ধারণ ক্ষমতা রয়েছে কেবল ৭০ টন, এ ফেরি গাড়ি নিতে পারে ৬টি।’’ বর্তমানে পাথর বা রডবাহী ট্রাকের ওজন হয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টন হওয়ায় অতিরিক্ত মাল বহন করতে গিয়েই ফেরিগুলো দ্রুত কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।’

তারপরেও গুরুত্ব বিবেচনা করে চরখালী ঘাটে নতুন ফেরি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শামসুল হক বরিশালটাইমসকে বলেন, ‘স্বরুপকাঠি, শ্রীরামকাঠি, বেতাগী ও কাঁঠালিয়া উপজেলার মাঝখানে ১টি ফেরি এবং মেহেন্দিগঞ্জ আর হিজলা উপজেলায় ১টি করে নতুন ফেরির আবেদন আছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ে নতুন ফেরির জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এক বছরের মধ্যে নতুন ফেরি পাওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে।’’

তবে ব্যস্ততম ঘাটগুলোয় সময় উপযোগী ৩০০ টন ধারণ ক্ষমতার ফেরি সরবরাহ করা উচিত বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

পিরোজপুর থেকে আসা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থী তানিয়া তাবাসুমের সাথে ফেরি বিকল হওয়ার দুর্ভোগ নিয়ে কথা হয়। বেকুটিয়ার ফেরি বিকল হওয়াতে ৫ ঘণ্টা আটকে ছিলেন জানিয়ে তিনি বরিশালটাইমসকে বলেন- ‘পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যতক্ষণে ফেরি সচল না হয়, ততক্ষণ অপেক্ষা করা ছাড়া কোন পথ ছিল না।’

কুয়াকাটাগামী যাত্রী আফজাল হোসেন বরিশালটাইমসকে বলেন- ‘ররিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে এখন শুধু লেবুখালিতে ফেরি রয়েছে। এই ফেরি বিকল হলে ট্রলারে পাড়ি দিয়ে ওপাড়ে ওঠে কখনও বা বিকল্প যানে বাড়তি টাকা খরচ করে গন্তব্যে যেতে হয়।’’

আমতলী হয়ে বরগুনাগামী যাত্রী সোহরাব হোসেন বরিশালটাইসকে বলেন- ‘ফেরি বিকল হলে প্রমত্তা পায়রা নদীতে ট্রলারে অতিরিক্ত বোঝাই হয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয় যাত্রীদের। কাজের তাড়া থাকায় জীবনের ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না।’

কেবল যাত্রীরাই নয়, ফেরি বিকল হলে ভোগান্তি পোহাতে হয় বাস চালকদেরও।

মো. রবিউল নামে এক বাস চালক বরিশালটাইমসকে বলেন, বেকুটিয়া আর চরখালী ফেরিঘাটে দুটি করে ফেরির প্রয়োজন হয়। সেখানে একটি করে ফেরি চলাচল করে, আবার ফেরি ছাড়ার বিষয়টিও ইজারাদারের মর্জির ওপর নির্ভর করে। ইঞ্জিন বিকল হলে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় আমাদের। এতে কখনও কখনও যাত্রীদের সাথে বচসা থেকে বাস কন্ডাক্টরদের হাতাহাতি বাঁধে। আর এই সুযোগে যাত্রীদের কেউ কেউ ট্রলার বা নৌকাযোগে পাড় হয়ে ভাড়া না দিয়েই চলে যায়।’
পাথরঘাটার মাছ ব্যবসায়ী লিটন বরিশালটাইমসকে বলেন, বরগুনা, পাথরঘাটার মাছ ব্যবসায়ীরা সড়ক পথে চরখালীর ফেরি পার হয়ে খুলনা বা অন্যত্র মাছের চালান পাঠান। ফেরি বিকল হলে তাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।’’

এতে গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ায় মাছের কাঙ্খিত বাজার দর পাওয়া যায় না।’ তাই বিকল্প ফেরির ব্যবস্থা রাখার দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।’’

12 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন