২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল সিটিতে সরোয়ার-সাদিকের লড়াই!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩২ অপরাহ্ণ, ২৩ জুন ২০১৮

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেছে। এখান থেকে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে লড়বেন দলের মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এই নেতার বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হয়নি এখনও। তবে আভাস পাওয়া গেছে সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার আবার নামছেন ভোটের লড়াইয়ে।

সরোয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- দল তাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে। আর দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি ফরম নিয়ে তা জমাও দিয়েছেন।

২০১৩ সালে বরিশালে আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনকে হারিয়ে মেয়র হওয়া আহসান হাবিব কামালের অবস্থান দলে জোরালো নয়। তাকে প্রার্থী না করার পক্ষে প্রকাশ্যেই অবস্থান দলের একটি বড় অংশের। তা ছাড়া কামালের করপোরেশন পরিচালনায় সন্তুষ্ট নন খোদ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই। নানা সময় তাদের আন্দোলন মোকাবেলা করতে হয়েছে মেয়রকে। এই অবস্থায় নগরবাসী কতটা সন্তুষ্ট, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

খুলনা এবং গাজীপুরেও বিএনপি ২০১৩ সালে জয়ী মেয়রকে মনোনয়ন দেয়নি। গাজীপুরে বর্তমান মেয়র এম এ মান্নানের শারীরিক অসুস্থতা থাকলেও খুলনার মেয়র মনিরুজ্জামান মনি মনোনয়নের বিবেচনাতেই আসেননি।

পাঁচ বছর আগে জয়ী বিএনপির ওই দুই মেয়রের পাশাপাশি বরিশালেও কাঙ্খিত উন্নয়ন করতে পারেননি, এটি প্রকাশ্যেই বলাবলি হচ্ছে। এই অবস্থায় অন্য দুই মহানগরের পাশাপাশি বরিশালেও প্রার্থী বদল হচ্ছে বিএনপির-এটি অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন নেতারা।

এই অবস্থায় ঘুরে ফিরে বেশ কিছুদিন ধরেই আসছিল সরোয়ারের নাম। তিনি প্রার্থী হলে নৌকা প্রতীকে সাদিকের সঙ্গে জমজমাট লড়াইয়ের প্রত্যাশাই করা হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক’র (সুজন) বরিশাল সভাপতি শাহ সাজেদা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগে সাদিক আব্দুল্লাহ ও বিএনপিতে মজিবর রহমান সরোয়ার দুইজনেই দুই দলে শক্ত প্রার্থী। এই দুইজন নির্বাচন করলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বরিশালে। হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচন দেখবে বরিশাল নগরবাসী।’

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি এসএম ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মজিবর রহমান সরোয়ার ও সাদিক আব্দুল্লাহ দুইজনেই জনপ্রিয় নেতা। এই দুইজন নির্বাচন করলে আকর্ষণীয় নির্বাচন হবে এবারে।’

বরিশাল মহানগরীতে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান দেখা গেছে- ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে। আর সরোয়ারও এখান থেকে সংসদ নির্বাচন এবং সিটি নির্বাচনে জিতেছেন একাধিকবার।

২০০৮ সালে বিএনপির তিন প্রার্থী এবং একজন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগাভাগির সুযোগে নগণ্য সংখ্যক ভোটে জিতেন আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হীরন। তিনি পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীতে দৃশ্যমান উন্নয়নও করেন। তারপরেও ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি ২২ হাজার ভোটে পরাজিত হন বিএনপির কামালের কাছে।

তবে হিরন হারলেও তিনি আগের নির্বাচনের তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছেন। আর বিএনপির তখন একক প্রার্থী থাকায় পাঁচ বছর আগের মতো ভোট ভাগাভাগির সুবিধা আর তিনি পাননি।

বরিশালে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানো হিরনের হাত ধরেই। কিন্তু ২০১৪ দশম সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস পর থেকে বরিশালে নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। আর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার আত্মীয় আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ এই সময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশা করছি এবার সিটি নির্বাচনে সাদিক আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সিটি করপোরেশনের এই মেয়র পদটি উপহার দেবেন। তাছাড়া সাদিক আব্দুল্লাহ তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে রয়েছেন। জনগণ তাকে চায়। অর্থাৎ সাদিক আব্দুল্লাহর মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর উন্নয়ন হবে সেটা জনগণও বোঝে।’

সাদিক আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নির্বাচনে কোনো ইশতেহার দেব না। জনগণ যেটা চায় সেটাই ইশতেহার। আমি জনগণের জন্য কাজ করছি, কাজ করব। নগরীর উন্নয়ন করাই মূল লক্ষ্য আমার।’

প্রয়াত মেয়র হীরনের স্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ হিরণ বলেন, ‘আমি চাই আমার স্বামী শওকত হোসেন হিরণের অসমাপ্ত কাজগুলো আমার ছোটভাই সাদিক সম্পন্ন করুক। নরগরবাসীর উন্নয়নের জন্য সাদিকের বিকল্প নেই।’

নিজের প্রার্থিতা সম্পর্কে বিএনপি নেতা সরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলের মহাসচিব আমাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। বাকিটা দলই জানে।’

সরোয়ার প্রার্থী হচ্ছেন-এই খবর চাওর হয়ে গেছে বিএনপিতে। মহানগর যুবদলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান শামীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরোয়ার ভাই যদি নির্বাচনে করে থাকেন, সেটা আমাদের জন্য আনন্দদায়ক। বিএনপির এই সিট আমরা পুনরায় বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দেব।’

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জনি বলেন, ‘আমাদের নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার নির্বাচন করলে সেখানে জয়ের বিকল্প কিছু দেখছি না। আমরা সর্বোচ্চ নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা করব বরিশাল নগরী জুড়ে। এমনিতেই মজিবর রহমান সরোয়ারের জনপ্রিয়তা অনেক।’

বিএনপির বরিশাল দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীন বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আমরা প্রকাশ্যে সব কিছু করতে পারছি না। তবে আমাদের তৃনমূলের নেতা কর্মীরা ঠিকই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভোটের ঘাঁটি বিবেচনায় আমরা চুপচাপ বসে নেই।’’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন