১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে শেষ সময়ে চলছে মেয়রপুত্রের লুটপাট!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:১৮ অপরাহ্ণ, ১৩ জুন ২০১৮

মেয়াদের শেষ সময় লুটেপুটে খাচ্ছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) বিদায়ী মেয়র আহসান হাবিব কামালের একমাত্র পুত্র কামরুল আহসান রূপন। নামে-বেনামে বিসিসি’র বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিয়ে নামমাত্র কাজ করে বাকী পুরো টাকাই লাভ করছেন তিনি।

রূপনের বিরুদ্ধে গত প্রায় ৫ বছরে নগরীর ফোরলেনের সৌন্দর্যবর্ধন, বিভিন্ন মোড়ে ইলেক্ট্রিক কাজ ও টাওয়ার স্থাপন, সড়ক সংস্কার ও মেরামতসহ বেনামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ নিয়ে নামমাত্র কাজ করে বাকী টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওপেন সিক্রেট।

সবশেষ বরিশাল নগরীর আমতলা পানির ট্যাংকি সংলগ্ন লেকে ৬টি প্যাডেল বোট সরবরাহের ১০ কাজও বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। কাজটি অনেক পুরনো হলেও সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তড়িঘড়ি করে ৬টি প্যাডেল বোট সরবরাহ করা হয় কিছুদিন আগে। যুবদল নেতা মোমেন সিকদারের মালিকানাধীন মেসার্স মিতুসী ট্রেডার্সের নামে ১০ লাখ টাকায় সরবরাহ করা ওই প্যাডেল বোট একেবারে নিম্নমানের বলে জানিয়েছেন আমতলা লেকের তদারককারী মো. হীরা সরদার। তিনি বলেন, যে উদ্দেশ বোটগুলো আনা হয়েছে। এই নিম্নমানের বোট দিয়ে সেই উদ্দেশ সাধিত হবেনা। প্লাস্টিকের তৈরী বোটগুলো পাকা লেকের ঘাটলায় থামানোর সময় ধাক্কা লেগে ভেঙে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুরুদ্দিন নুরু বরিশালটাইমসকে জানান, সদা চোখে দেখলেই বোঝা যায় প্লাস্টিকের তৈরী বোটগুলো কতটা নাজুক এবং হালকা। এটি বুঝতে কোন বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। নারী ও শিশুদের নিয়ে ওই বোটে উঠলে পুরো পরিবার সহ ডুবে মরতে হতে পারে বলে আশংকা করেন তিনি।

আমতলা লেকে প্যাডেল বোটগুলো আনা হলেও এগুলো কোন পদ্ধতিতে চলবে। কারা পরিচালনা করবে সেসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এ কারণে ৬টি বোট রশিতে বেঁধে ভাসিয়ে রাখা হয়েছে আমতলা লেকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বেঁধে রাখা ৬টি বোটের দুটিতে ইতিমধ্যে পানি উঠে হেলে গেছে।

মিতুসী ট্রেডাসের নামে ৬টি বোট সরবরাহের কাজটি আড়ালে থেকে করেছেন মেয়র পুত্র কামরুল আহসান রূপন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে রূপনের প্রধন সহযোগী বিএনপি কর্মী মো. রুবেলের নাম। ছদ্ম পরিচয়ে রুবেলের সাথে কথা বলে জানা গেছে- তিনি নন, তার এক মামা এই কাজ করছেন। তবে মামার নাম প্রকাশ করেননি তিনি। আমতলা লেকে সরবরাহ করা বোটগুলো নারায়নগঞ্জ থেকে কেনা হয়েছে উল্লেখ করা হলেও কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। এখানে সরবরাহ করা একেকটি বোটের দাম ১ লাখ টাকার বেশী দাম পড়েছে দাবী তথাকথিত ঠিকাদার রুবেলের। এই বোটগুলোতে ২০ বছরের ওয়ারেন্টি রয়েছে বলে তার দাবি। এর চেয়ে কমে ৮০ হাজার টাকায়ও প্যাডেল বোট পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।

সিটি কর্পোরেশনের একজন প্রকৌশলী নাম না প্রকাশের শর্তে বরিশালটাইমসকে বলেন, এই ধরনের প্যাডেল বোট সাধারণত ফাইবারে তৈরী শক্ত এবং মজবুত হয়। কিন্তু আমতলা লেকে সরবরাহ করা বোটগুলো পুরোটাই প্লাস্টিকের তৈরী। ৬টি প্লাস্টিকের বোট কিনতে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকার বেশী খরচ হয়নি বলে দাবি ওই প্রকৌশলী। এই বোট চালু হলে আমতলা লেকের পানিতে ডুবে নারী ও শিশুদের প্রাণহানীর আশংকা রয়েছে বলে জানান ওই প্রকৌশলী।

এ বিষয়ে মোমেন সিকদারের বক্তব্য জানার চেস্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

তবে মোমেন সিকদারের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মোমেন সিকদার তার দুটি লাইসেন্স সাধারণত কাউকে দেন না। একমাত্র মেয়র পুত্র রূপন মোমেন সিকদারের লাইসেন্সে গত ৫ বছরের বেনামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন। রূপনের বেশীরভাগ কাজ নিম্নমানের, ক্ষেত্র বিশেষ নামমাত্র হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে মোমেন সিকদারের লাইসেন্স বিতর্কে পড়েছে। সব শেষ আমতলা লেকে নিম্নমানের প্যাডেল বোট সরবরাহ করে ফের বিতর্কে মোমেন সিকদারের মিতুসী ট্রেডার্স। কিন্তু রূপন মেয়র পুত্র হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিচুজ্জামান বরিশালটাইমসকে জানান, প্যাডেল বোট সরবরাহের এই কাজটি অনেক আগের। তাকে ক্যাটালগ না দেখিয়ে, এ্যাপ্রুভ না করিয়েই ঠিকাদার হঠাৎ করে প্যাডেল বোট সরবরাহ করেছেন। তিনি এই বিষয়ে ঠিকাদারকে প্রশ্ন করলে ঠিকাদার উল্টো তাকে বলেন, মেয়র সাহেব ক্যাটালগ দেখেছেন। তিনিই স্যাম্পল এ্যাপ্রুভ করেছেন।

সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল বরিশালটাইমসকে বলেন, লেকের একপাশের রেলিং নির্মাণের কাজ বাকি আছে। ওই কাজ সম্পন্ন হলেই লেকে প্যাডেল বোট চালু হবে।

মেয়র বলেন, লেকে সরবরাহ করা প্যাডেল বোটগুলো খুবই ভালো। এর মাপ, থিকনেস এবং ফিটনেস সবই ভালো আছে। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই বলে দাবি মেয়র কামালের।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন