২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বাবুগঞ্জে নদী ভাঙনরোধে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি হলো পার্কোপাইন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৫৬ অপরাহ্ণ, ২১ জুন ২০১৮

কথা ছিল ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের নদী সিকস্তি মানুষের পাশে দাঁড়াবে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। সুগন্ধা নদী ভাঙনে শতশত বসতবাড়ি আর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হওয়ার পরে সর্বশেষ কথা ছিল উপজেলার প্রধান সড়ক রহমতপুর-বাবুগঞ্জ-মীরগঞ্জ রাস্তাটি রক্ষা করতে নেওয়া হবে কার্যকারী উদ্যোগ। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প রয়ে গেছে লালফিতায় বন্দী। জনপ্রতিনিধি আর উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের সব আশ্বাসই এখন শুভংকরের ফাঁকি বলে মনে করেন বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামবাসী।

এমন নিদারুণ বাস্তবতায় এবার উপজেলার রহমতপুর-বাবুগঞ্জ-মীরগঞ্জ সড়ক রক্ষা ও নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে নিজেরাই আবার উদ্যোগী হয়েছেন ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মানুষ। ওই গ্রামের ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে দলমত নির্বিশেষে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দ্বিতীয় দফায় তৈরি করা হয়েছে পার্কোপাইন। স্থানীয়ভাবে বাঁশ সংগ্রহ করে তা দিয়ে বিশেষ প্রযুক্তির বর্গাকার খাঁচা তৈরি করে তাতে ইটভর্তি করে ফেলা হচ্ছে নদীতে। দ্বিতীয় দফায় তৈরি করা হয়েছে এমন শতাধিক পার্কোপাইন (ইটভর্তি বাঁশের খাঁচা)। তরুণ ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেনের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে গ্রামবাসীর নির্মিত ওই পার্কোপাইন বৃহস্পতিবার সকালে ভাঙন কবলিত এলাকায় ফেলার মাধ্যমে নদী বিরুদ্ধে এই অসম বিশাল কর্মযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মৃধা মুহঃ আকতারুজ্জামান মিলন। তিনি এলাকাবাসীর এই কর্মযজ্ঞের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এসময় তাদের হাতে নগদ কিছু আর্থিক অনুদান তুলে দেন। এসময় সেখানে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল করিম হাওলাদার, ওয়ার্কার্স পার্টির কৃষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম হোসেন, সেনা সদস্য কবির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক তানভির হোসেন মামুন, জাকির হোসেন প্রমুখ ছাড়াও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

নদীতে পার্কোপাইন নিক্ষেপের আগে ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মৃধা মুহঃ আকতারুজ্জামান মিলন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা হয়তো বছরে দুটো বড় প্রকল্প ভাগে পান। কিন্তু নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প থেকে তাদের টাকা কামানোর সুযোগ নেই। তাই তারা জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে নিজেদের আয়-রোজগার ভালো হবে এমন প্রকল্পই গ্রহন করে থাকেন। উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল করিম হাওলাদার জানান, বাবুগঞ্জে আজ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট আর ভাগাভাগি চলছে। নিয়মিত সরকারি কোটি টাকা বরাদ্দের বাইরেও কয়েক কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ আনা হয়েছে। অথচ উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সমস্যা এই নদী ভাঙন রোধে সেখান থেকে একটি টাকাও খরচ করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামবাসীর নদী ভাঙন প্রতিরোধ যুদ্ধের উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী মাহবুবু হোসেন বলেন- বিগত ২০১৭ সালে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রহমতপুর-বাবুগঞ্জ-মীরগঞ্জ সড়কের হাওলাদার ইটভাটার অদূরে আমাদের এই পার্কোপাইন প্রযুক্তি দিয়ে সুগন্ধা নদীর ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের পহেলা জুলাই আমরা প্রথম দফায় নিজেদের টাকায় ২ শতাধিক পার্কোপাইন নদীতে ফেলেছিলাম। তখন সেই প্রথম দফার কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন স্থানীয় বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান। সেদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার রায় সবার সামনে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সেই টাকাটাও পাইনি আমরা। তবুও থেমে থাকিনি। সরকারি সাহায্য না পেলেও নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে রাস্তা ও গ্রাম রক্ষার জন্য সাধ্যমতো নদীর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন