২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ভান্ডারিয়ায় প্রতারকের মিথ্যে মামলা নিয়ে বিপাকে পুলিশ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৪৮ অপরাহ্ণ, ২৩ জুন ২০১৮

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পুলিশের কথিত সোর্স ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এক প্রতারক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা হামলার মামলা দায়ের করে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ওই সাজানো মামলায় ১০জন আসামীর ৯জনের জামিন হলেও একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি ১৫ দিন হাজতবাস করে গত ২১ জুন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

মামলায় অন্যায় ভাবে হয়রানির শিকার পরিবারটির অভিযোগ ভান্ডারিয়া থানা পুলিশের সোর্স ও কথিত সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ হাওলাদার ওরফে ডালিম সড়ক দুর্ঘটনাকে হত্যা চেষ্টার বানোয়াট অভিযোগ এনে প্রতিপক্ষ ১০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। আর মামলাটি গ্রহণ করে বিব্রত সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে ভান্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহাবুদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, মিথ্যা মামলা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভুল তথ্য দিয়ে কাউকে হয়রানি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজখবর জানা গেছে- ভান্ডারিয়া থানার সামনে গেটের বিপরীত পাশে ‘দৈনিক বঙ্গজননী’ পত্রিকার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে নিজেকে ওই পত্রিকার প্রতিনিধির পরিচয় ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দেন ডালিম। তার বাড়ি ভান্ডারিয়ার উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়ানের পশারিবুনিয়া গ্রামের মো. আব্দুর সালাম হাওলাদারের ছেলে। তার সাথে ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়া উপজেলার বানাই গ্রামের মৃত ইসহাকের আলীর পরিবারের সাথে আরিফ বিল্লাহর দীর্ঘ দিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও আদালত আরিফ বিল্লাহ বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। যে কারণে স্থানীয়রা তাকে ‘ঠগা ডালিম’ বলে ডেকে থাকেন।

প্রতিপক্ষদের সাথে মামলায় হেরে এই আরিফ বিল্লাহ নতুন করে হয়রানির ফন্দি আঁটেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১৩ মে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ২২দিন পরে প্রতিপক্ষদের ঘায়েল করার উদ্দেশ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার সাজানো অভিযোগ এনে গত ০৩ জুন ভান্ডারিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ১৩ মে রাত আনুমানিক ৯টায় তাকে দক্ষিণ পূর্ব রাজপাশা ১২৬ নম্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আটকে হত্যার উদ্দেশে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষ ফোরকান মোল্লা, ফারুক মোল্লা, ইব্রাহিম হাওলাদার, কাওসার হাওলাদার, মাসুম হাওলাদার, মানিক হাওলাদার, আবদুর রশিদ হাওলাদার, সেলিম হাওলাদার, সোহেল হাওলাদার ও রফিক হাওলাদার।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- এই ১০ জনই পরস্পরে আত্মীয়। মামলা দায়েরের পর বাদী আরিফ বিল্লাহকে সাথে নিয়ে থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল কাইয়ূম অভিযান চালিয়ে মামলার ১ নম্বর আসামী ফোরকান মোল্লাকে গ্রেফতার করেন । মামলায় ৫জন সাক্ষীর মধ্যে তার পিতা প্রধান হিসেবে বাকী সাক্ষীদের বাড়ি ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়া উপজেলার বানাই গ্রামে (ঘটনাস্থল থেকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে)।

সাক্ষীগণের মধ্যে ৪জন সাক্ষী আসামীদের পূর্বকার জমিজমার মামলার আসামী। কিন্তু ঘটনাস্থলসহ ওই এলাকার কোন সাক্ষী নেই। উল্লেখ্য ডালিম বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে প্রতারণা, পত্রিকায় খবর প্রকাশসহ পুলিশের ভয় দেখিয়ে বহু মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এটা ছিল তার কাছে নিত্য দিনের ঘটনা। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানি ও প্রবাসী স্ত্রীদের সাথে পরকীয়া করে ছবি তুলে তাদের সবকিছু কেড়ে সর্বশান্ত করে ওই সকল পরিবারকে। অপরদিকে মাদক দিয়ে ধাওয়া ইউনিয়ানের রিক্সা চালক শহিদুলের পরিবার নিঃস্ব করে এই ডালিম। এদিকে বিদ্যুৎ সংযোগের দেওয়া নাম করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগি পরিবারের অভিযোগে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলে তা হলে তাকে মাদকসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে বলে হুমকি প্রদান করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে- ১৩ মে আরিফ বিল্লাহ কে কেউ হত্যা হামলা চালাননি। এমন কি তার ওপর কেউ হত্যা চেষ্টাও চালাননি। মূলত ১৩ মে রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন আরিফ। রাত ৯ টার দিকে আরিফ বিল্লাহ ওরফে ডালিম ভান্ডরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ওই দিনের ভর্তি রেজিষ্টারে তার নাম ও আহত হওয়ার কারণ উল্লেখ রয়েছে।

আরিফ বিল্লাহকে চিকিৎসা প্রদানকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রঞ্জন কুমার বর্মণ বলেন- আরিফ বিল্লাহকে চিকিৎসা দিয়েছি যখন তখন তিনি জানিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। কারও সাথে কোন মারামারি বা তাকে কেউ আক্রমন চালিয়েছে এমন কোন তথ্য জানায়নি। পাশাপাশি আরিফ বিল্লাহর জখম খুব গুরুতরও ছিল না। সামান্য কেটেছিড়ে গেছে বলে জানান এই চিকিৎসক।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে- সর্বশেষ থানা থেকে আহতর বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেখানে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখ করেই প্রত্যয়ন দেওয়া হবে। সাজানো মামলায় হয়রানির শিকার মো. ইব্রাহিম হাওলাদার অভিযোগ করেন- মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের অন্যায় ভাবে হয়রানি করেছে। আরিফ বিল্লাহ পুলিশের সোর্স আর সাংবাদিক এমন পরিচয় দিয়ে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। মিথ্যা মামলায় বাকি ৯ জনকে আদালত জামিন দিলেও ১৫দিন হাজতবাস শেষে ফারুক মোল্লা মুক্তি পেয়েছেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভান্ডারিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল কাইউম বলেন- থানায় অভিযোগ নিয়ে আসলে তা খতিয়ে দেখার দরকার পড়ে না। আইন অনুযায়ী অভিযোগ পেলেই গ্রহণ করতে হয়। তারপরে আসামী আটক করে তা খতিয়ে দেখতে হয়।

এ কারণে ওই মামলাটি নিতে হয়েছিল। তিনি বলেন- যাছাই বাছাই ছাড়া মামলাটি গ্রহণ করা যথার্থ ছিল না। এখন আদালতের মাধ্যমে মামলাটির সুরাহা হবে।’’

11 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন