২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ভাড়া করে শোকপ্রকাশ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:২৮ অপরাহ্ণ, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নাম বিভ্রাট শব্দটির সাথে সকলের পরিচয় আছে বলেই আমার ধারনা। আমার কিছু মজার অভিজ্ঞতা আছে এই বিষয়ে। আমার বাবা-মা শখ করে আমাকে ডন নামে ডাকতেন, নতুন সুর্যের আগমনী সংবাদ বয়ে আনার আশায় বোধহয় রেখেছিলেন নামটা। কারণ, আমার জন্ম হয়েছিল দেশের রাজনীতির এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে। আয়ুব খান তখন দেশের উপর জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে বসেছে। কিন্ত গ্রামের বাড়িতে আমার নাম ছিল হীরা। আর একটু বড় হবার পর আমাকে অনেকেই আজিজ নামে ডাকতো। সমস্যা বেধে গেলো মেরীন একাডেমীতে যাবার পর। ওখানে সবাই নামের শেষ অংশ ধরে ডাকতো, সামাদ। সে সময় মোবাইলের যুগ না। বাসায় ল্যান্ড ফোন। তাও আবার থাকতো বাবার বিছানার পাশে। জাহাজ থেকে বা মেরীন একাডেমী থেকে বাসায় এলে জাহাজী বন্ধুরা ফোন দিয়ে সামাদ কে চাইতো। বাবা ধরতেন ফোন। বাবাও বলতেন, হ্যাঁ সামাদ বলছি। শুরু হয়ে যেত অপর প্রান্ত থেকে বন্ধুসুলভ স্ল্যাং ভাষার প্রয়োগ। এক দুই লাইন পরেই বাবা বুঝতেন আমার ফোন। ডেকে দিতেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন যায়গায় অনেক গোত্রেই একটা প্রথা প্রচলিত আছে। শোক প্রকাশের জন্য তারা মানুষ ভাড়া করে আনে। এই ভাড়াটে মানুষগুলো শোকের মাতম করে, আশেপাশের মানুষজনকে বোধহয় জানান দেয়, এই বাড়ির মানুষ কতটা শোকাহত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এরকম অন্তজ শ্রেণীর একটি গোত্র আছে, “শব্দকর ঢুকলা”। তারাও তাদের শোকের দিনে তাদের গোত্রের যত জনকে পারে একত্রিত করে এবং ভয়াবহ শব্দে পাড়া প্রতিবেশী শুনিয়ে শোকের মাতম করে।

আমাদের দেশের রাজনৈতিক সমাজেও আজকাল এমনই কিছু সদ্যজাত ঢুকলা রাজনীতিবিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন আসার এক/দেড় বছর আগেই তারা এবং তাদের কিছু নিজস্ব সাঙ্গপাঙ্গরা মাতন শুরু করে দেয়, বারে বারে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলে, দলীয় প্রধান যতদিন জীবিত আছেন ততদিন দলীয় প্রতীক তার পকেটে আছে, দলীয় প্রতীক তার বাড়ির ঘাটে বাঁধা আছে ইত্যাদি। তারা বোধহয় মনে করেন, জনপ্রতিনিধি হতে হলে জনগণ কোন বিষয়ই না, জনগণের পাশে যাবারও প্রয়োজন নেই, শুধু দলীয় প্রতীকটাই জরুরী, এরপর দলের দায়িত্ব তাকে জনপ্রতিনিধি বানানো। তাদের মাতন আবার আজকাল এককাঠি সরেস হয়ে উঠেছে। শুধু নিজেরা বলেই ক্ষান্ত হন না, কিছু লোক ভাড়া করে আনেন তাদের কথাগুলোকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য।

আমি আবার সহজ কথা সোজা বলতেই পছন্দ করি। ভাড়া করেই হোক আর নিজেই হোক, এই মাতম কোন কাজে আসবে না। আপনারা কেন জনবিচ্ছিন হয়ে পড়েছেন সেটা আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন। দল কখনোই কোন জনবিচ্ছিন্ন প্রার্থির দায়িত্ব নেবে না, ভাড়া করা লোক দিয়ে মাতম করালেও না। নতুন নতুন সাঁতার শিখেই গভীর নদী পারি দিয়ে সাহসী হয়ে উঠেছেন সেটা ভাল কথা।   কিন্ত ঐ সদ্য শেখা সাঁতার এবারের সাগর পারি দিতে কোন কাজে আসবে না। এখনো সময় আছে, লুটপাটের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে জনগণের প্রাপ্য জনগণকে বুঝিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিন, জনতার মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন।

“একটা নতুন সূর্যোদয়ের
অপেক্ষাতে আছি,
একটা নতুন সূর্যোদয়ের
প্রতীক্ষাতে বাঁচি।”

*লেখক: খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদের সন্তান এবং আওয়ামী লীগ নেতা।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন