২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

ভোলায় আসিডদগ্ধ দুই বোনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ঢাকায় প্রেরণ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০০ অপরাহ্ণ, ১৭ মে ২০১৮

ভোলায় ঘুমন্ত অবস্থায় দুই বোনের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনার তিন দিন পরও অভিযুক্ত মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় তার সহপাঠীসহ স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

এমন বাস্তবতায় অ্যাসিডদগ্ধ দুই বোনের অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে গত বুধবার রাতে বরিশাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সরকারি তেমন কোনো সহায়তা না পাওয়ায় হিমসিম খাচ্ছে রং মিস্ত্রি বাবা হেলাল রাঢ়ী। ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে গজারিয়া বাজার এলাকার বালিয়া খুশিয়া গ্রামের হেলাল রাড়ির দুই মেয়ে সদ্য এসএসসি পাশ তানজিম আক্তার মালা (১৬) এবং মারজিয়া (৭) গত সোমবার রাতে খাবার খেয়ে দুই বোন একসঙ্গে ঘুমাতে যায়। রাত আনুমানিক ২টার দিকে হঠাৎ করে দুর্বৃত্তের ছোড়া অ্যাসিডে তানজিম আক্তার মালার মুখ মণ্ডল, দুই চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানসহ প্রায় ৬০ শতাংশ ঝলসে যায়।

এ ছাড়া তার ছোট বোন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী মারজিয়ার বুক, হাত ও পেটসহ বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। এ সময় তাদের চিৎকার শুনে পরিবারের সদস্যরা গুরুতর অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে রাতেই ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। অ্যাসিড আক্রান্ত মালার একটি চোখের অবস্থা গুরুতর। পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় তাকে ভোলা থেকে মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার অবস্থা অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বুধবার রাতে ঢাকার মিরপুরে সিআরপি হাসপাতালে পাঠান।

এদিকে, বৃহস্পতিবার হেলাল রাঢ়ীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে- অ্যাসিড হামলার শিকার মালা ও তার বোন ঘুমিয়ে ছিল সেই কক্ষের বিছানায় অ্যাসিডের চিহ্ন পড়ে রয়েছে। অ্যাসিডে খাটের বিছানা চাদর, তোশক, বালিশ পুড়ে গেছে। তাদের বাড়িতে এখন কেউ নেই। মুমূর্ষু মালা ও মারজিয়াকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় রয়েছেন।

মালার সহপাঠীরা জানিয়েছে, এ বছর আবদুল মন্নান মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের থেকে মালা এসএসসি পাশ করে। স্কুলে লেখাপড়া করার সময় একই এলাকার ব্যবসায়ী ওমর ফারুকের ছেলে রাজিবের সঙ্গে তার প্রেমের সর্ম্পক ছিল। গত দুই মাস আগে সেই সর্ম্পক ভেঙে যায়। এ ঘটনার পর রাজিব মালাকে হুমকিও দেয়। এসব ঘটনা মালার সহপাঠীরাও জানতো। কিন্তু এ ধরনের অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা যে ঘটবে তা কেউ ধারণা করতে পারেনি। তারা এ ঘটনার দ্রুত বিচার চান।

অপরদিকে অভিযুক্ত রাজিবের মা বরিশালটাইমসকে বলেন- রাজিব এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তার ছেলে অনার্স ফাইনাল দিয়ে ঢাকায় একটি বেসকারি কম্পানিতে চাকরি করেন। কিন্তু তার ঠিকানা দেননি। ঘটনার দিন তার ছেলে ঢাকায় ছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।

উত্তর দিঘলদী আবদুল মন্নান মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম আলাউদ্দিন বরিশালটাইমসকে বলেন, তার বিদ্যালয়ের ছাত্রী মালা অত্যন্ত ভদ্র ছাত্রী ছিল। এ বছর সে এসএসসি পাশ করে। তিনি অসহায় পরিবারটির দুই মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান।

ভোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছগির মিয়া বরিশালটাইমসকে জানান, অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় এ পর্যন্ত ইউসুফ নামে মালাদের বাড়ির এক যুবককে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত রাজিবের পিতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রধান আসামিকে ধরার জন্য তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন