২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ভোলায় গাছের সাথে বেঁধে যুবতীকে নির্যাতন!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:১১ পূর্বাহ্ণ, ০৭ মে ২০১৬

বরিশাল: ভোলার চরফ্যাশেন উপজেলায় নুর নাহার বেগম নামে এক যুবতীকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকেও আলোচনা-সমালোনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু সেই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম কাজল রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এমতাবস্থায় পুলিশের দাবি, নির্যাতনকারী কাজল ঘটনার পরপরই গাঢাকা দিয়েছেন। যে কারণে তাকে গ্রেপ্তারে সফলতা আসছে না। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য হচ্ছে, উপজেলা যুবলীগের সদস্য কাজল এলাকায়ই রয়েছেন। এবং তাকে প্রতিনিয়ত দেখাও যাচ্ছে। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন দলীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় পুলিশ গ্রেপ্তার করনি বা করছে না।

ফলে পুলিশের এহেন ভুমিকা নিয়ে নানামূখী প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেই সাথে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি পুলিশের নিরব থাকার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এক ধরণের নিরব প্রতিবাদ চলছে। বিশেষ করে গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকারও তার ফেসবুকের পেইজে এ বিষয়টি নিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন।

নির্যাতনের শিকার সেই যুবতী মাটিতে পড়ে থাকা ছবিসহ দেয়া ইমরান এইচ সরকারের পোষ্টটিতে উলে¬খ করা হয়েছে, সুপারী গাছের সাথে বেঁধে একজন নারীকে এভাবে নির্যাতন তো মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়! আপনাদের ক্ষমতা আছে বলে কি যা ইচ্ছা তাই করে যাবেন, আর আমরা গুম-খুন হবার ভয়ে চুপ করে থাকবো?

ভোলার চরফ্যাশনে কি কোনো সাহসী পুলিশ নেই, যারা যুবলীগ নেতা কাজলের হাতে হাতকড়া পরাবে? এই মগের মুল¬ুকে কি কেউ নেই একটু মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মতো?

ইমরান এইচ সরকারের ওই পোষ্টটি ১০হাজার ৫৪বার শেয়ার হয়েছে। সেই সাথে লাইক এবং কমেন্টের সংখ্যাও অগনিত।

এছাড়াও বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে ওই নারীর ছবি পোষ্ট করে প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতার বিচার দাবি করা হচ্ছে।

ঘটনায় প্রকাশ- চরফ্যাশন উপজেলার সাবেক নীলকোমল বর্তমান নুরাবাদ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নজির মাঝিরহাট এলাকার নজির মাঝির ছেলে যুবলীগ নেতা মো. কামরুল ইসলাম কাজলের (৩০) সাথে প্রায় এক বছর ধরে পাশ্ববর্তী এলাকার মো. মনিরের স্ত্রী যুবতী বয়সী নুর নাহার বেগমের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। সেই বিষয়টি স্বামী মনির টের পেলে নাহারকে তার বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে চলে যান। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাজল আর নুর নাহারের পরকীয়া প্রেম সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে উঠে।’

এ বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে কাজল তাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতেন। এমনকি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভোলা, বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন বাসায় রেখে স্বামী-স্ত্রীর মতো রাত কাটিয়েছেন।

কিন্তু বধুবার বিয়ের দাবি নিয়ে গেলে কাজল ও তার পরিবারের লোকজন ওই যুবতীর ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে তাকে বাড়ির পাশে একটি সুপারী গাছের সাথে বেঁধে কয়েক দফা মারধর করে ফেলে রাখে। এতে ওই যুবতী গুরুতর আহত হলে উদ্ধার করে চরফ্যাশন সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নুর নাহার স্থানীয় মিডিয়াকর্মীদের জানিয়েছে, কাজলের কারণে তার ভেঙে গেছে। এখন কাজল তাকে বিবাহ না করলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন পথ নেই। যে কারণে বাধ্য হয়ে বুধবার তার বাড়িতে বিয়ের দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাজল বিয়ে করা তো দুরের কথা উল্টো তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে।

তাই ওই যুবতী কাজলের বিচার চেয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার সংশি¬ষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু এঘটনায় পুলিশের ভুমিকা রহস্যজনক হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। যুবলীগ নেতা কাজলের শাস্তি দাবিতে ফুঁসে উঠেছে।

তবে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সমূলে অস্বীকার করে সংশি¬ষ্ট চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুলের জানিয়েছেন, অভিযুক্ত কাজলকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। কিন্তু ঘটনার পরপরই তিনি গাঢাকা দেয়ায় গ্রেপ্তারে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে বিষয়টি বেশ আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেছে সে কথা স্বীকার করে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলছেন, নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেয়া হয়েছে। এমনকি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

যদিও এতে কোন কর্মকর্তার গাফলতি বা ব্যর্থতা থাকে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন