২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত সেই ৬ বিএম কলেজছাত্রীকে হল ত্যাগের নির্দেশ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৪০ অপরাহ্ণ, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে সিগারেট খাওয়ার ছবি ঢেকে রাখার উদ্দেশে তান্ডব চালানো ৬ ছাত্রীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কলেজ প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হল ছাড়ার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ মো: শফিকুর রহমান সিকদার। মূলত বিএম কলেজে স্নাতক বা স্নাতোকত্তরের শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা প্রদান করতে পারছে না কয়েক যুগ ধরে। এ নিয়ে বছরের পর বছর আন্দোলন চললেও সুর্নিদিষ্ট কোন সমাধানে আসতে পারেনি কলেজ প্রশাসন। পরবর্তীতে বিধান করা হয়, স্নাতক শ্রেণীর নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা প্রদান করা হবে। এছাড়া ডিগ্রী বা অনিয়মিতদের কলেজের হোস্টেলে থাকতে পারবে না।

বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী নিবাসের সুপার প্রফেসর আবু সাদেক মোঃ শাহ আলম বলেছেন, ডিগ্রী পাস কোর্সের কোন ছাত্রী বনমালী ছাত্রী নিবাসে থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু বিধান বাদ দিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ে জোর করে ডিগ্ররি ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী ছাত্রীনিবাসে থাকত। এমনকি সেখানে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করত। মাদক সে্বনের সেই ছবি ঘটনাক্রমে বাইরে বেড়িয়ে আসলে বেকায়দায় পরে জান্নাত। জান্নাতের ওই ছবি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় অনেকটা চাপের মধ্যে পরে ছাত্রীনিবাসে। তাই ছবি প্রকাশ ঠেকাতে ঝুমুর হঠাও আন্দোলন শুরু করে। তারই অংশ হিসেবে ২২ এপ্রিল তান্ডব চালিয়ে ঝুমুরকে মারধর ও তার তৈজসপত্র রাস্তায় নিয়ে পুড়ে ফেলে।

ঝুমুর দাবী করেছেন, বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাস সরকারি প্রতিষ্ঠানের হওয়ায় সাধারণত এখানে পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা বাহীনী কোন অভিযান পরিচালনা করত না। সেই সুযোগে জান্নাত, ফাতেমা, ইভা, ঐশী, শারমিন মিলে ইয়াবা চক্রের সাথে জড়িয়ে পরে। তার দাবী অনুসারে, এরা ইয়াবা বিক্রি না করলেও নিয়মিত সেবন করত। তবে জান্নাত এই বক্তব্য প্রত্যাখান করেছে।

জান্নাত দাবী করেছেন, ছাত্রীদেরকে জিম্মি করা, মাদক পাচার এবং নবাগত ছাত্রীদের মারধর করত ঝুমুর। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, ২২ এপ্রিলের ঘটনাটি ঘটেছে একটি আড্ডার ছবি বাইরে ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে। জানা গেছে, স¤প্রতি এই ছয়জন একটি কক্ষে আড্ডারছলে ‘ইজি লাইট’ ব্রান্ডের সিগারেট পান করছিল। কৌশলে কেউ সেই ছবিটি মুঠোফোনে তুলে রাখে।

ওদিকে ঝুমুর দাবী করেছে, সিগারেট সেবন জান্নাতুলের কাছে সামান্য বিষয়। এই সার্কেল অত্যান্ত রাখঢাক বজায় রাখে। ২২ এপ্রিল মারধরের শিকার এই ছাত্রীর দাবী, ও (জান্নাত) তার ছেলে বন্ধুদের এসব ছবি মেসেঞ্জারে পাঠাত। হয়তো কারও সাথে সর্ম্পক ভেঙ্গে যাওয়ায় ওই ছেলে জান্নাতের সিগারেট পান’র ছবি বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেসব খতিয়ে না দেখে আমাকে সন্দেহ করছে যে আমি ওই আড্ডার ছবি তুলে বাইরে প্রকাশ করেছি। সেই ধারণা থেকেই আমাকে সংঘবদ্ধ হয়ে ফাতেমা, শারমীন, ইভা, ঐশী ও জান্নাত মিলে আমার কক্ষে মারধর করে। এতে আমার হাত কেটে গেছে এবং মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হই।

মীম জানিয়েছেন, ঘটনার সূত্রপাত মূলত আমাকে ছাত্রী হোস্টেলে খেতে বাধ্য করার মাধ্যমে শুরু হয়। এই ছাত্রী দাবী করেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে আবু মিযার হোটেল থেকে খাবার এনে খাই। কিন্তু মুনিরা ও সাদিয়ার পরামর্শে ঝুমুর আমাদের বন্ধু হওয়া সত্যেও চাপ দিয়ে আসছিল যেন আমি হোস্টেলে খাওয়া শুরু করি। কিন্তু আমার শরীরে অপারেশনের কারনে তা সম্ভব হয়নি। এই অপারগতার কথা জানা সত্যেও সে (ঝুমুর) তিনদিন আমাকে বিভিন্ন কক্ষে আটকেছে মারধর করবে বলে।

জান্নাতুল মীম বলেন, সিগারেট পানের যে ছবিটি সেটি মূলত আমাকে ব্লাকমেইল করার জন্য। এর মূল কাহিনী হল, কিছুদিন আগে ঝুমুরের বয়ফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে যায়। তখন সে নিজে আত্মহত্যা করবে বলে চেষ্টা চালায়। ফার্মেসী থেকে বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ এনে খেয়ে শুধু ঘুমাত। তখন ওকে আমি মানসিক সাপোর্ট দিয়েছি। সেসময়ে ওর অপর এক বন্ধুর মাধ্যমে সিগারেট নিয়ে আসে রুমে। সেই সিগারেট আমার হাতে দিয়ে গোপনে ছবি তুলে রাখে পরে প্রচার করে, জান্নাত যদি কথা না শোনে তাহলে এই ছবি বাইরে ভাইরাল করে দেব।

এদিকে হঠাৎ উত্তপ্ত করে ফেলাার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত অনুসন্ধান চালিয়ে নৈরাজ্যকারী ছয়জনকে সনাক্ত করে কলেজ প্রশাসন। কলেজ প্রশাসনের বক্তব্য হল, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা কেউ ঘটাচ্ছে সেবিষয়ে কলেজ প্রশাসনকে না জানিয়ে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়াটাও অন্যায়। যারা সেদিন আন্দোলনের নামে তান্ডব চালিয়েছে তারা অন্য পথেও সমাধানে আসতে পারত। সেখানে হল সুপার রয়েছে তার কাছে গেলেও সমাধান আসত কিন্তু তা না করে বাইরের কতিপয় মানুষের উস্কানিতে পরিবেশের অবনতি করেছে।
ছাত্রী নিবাস ছাড়তে নির্দেশ পাওযা ওউ ছয় নৈরাজ্যকারী হল, জান্নাতুল ফেরদৌস, রহিমা আফরোজ ইভা, ফাতিমা শিমু, শাকিলা, তানজিলা আক্তার মিষ্টি ও শারমিন আক্তারকে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

হল ছাড়ার নির্দেশপ্রাপ্ত ফাতেমা শিমু জানান, তদন্ত করার স্বার্থে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের আর কিছুই জানা নেই।

এই বিষয়ে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার জানান, শিক্ষক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যারা মারামারির ঘটনায় জড়িত তাদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে যাতে কোনো সমস্যা না হয় এই কারণে তাদের নেমে যেতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন