২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ হয়েছে, পুলিশ কারচুপি করেছে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:২৫ অপরাহ্ণ, ১৭ মে ২০১৮

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে খুলনার পাশাপাশি সারা দেশের জনগণ দেখেছে সরকার কীভাবে ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। বিষয়টি জনগণ যাতে উপলব্ধি করতে পারে সেজন্যই বিএনপি কেসিসি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সরকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছে। পুলিশকে দিয়ে ভোট কারচুপি করানো হয়েছে। এতে স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ ও তাদের পোষ্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) দিয়ে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়।

এ অবস্থায় বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। মঙ্গলবার (১৫ মে) অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচন বিষয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির অভিযোগগুলো প্রমাণ হয়েছে। খুলনার জনগণের পাশাপাশি দেশবাসী ভোট কারচুপির বিষয়টি দেখেছে। এখন বিএনপি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।

তিনি বলেন, আমরা বার বার বলে আসছি এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এ ছাড়া এদেশে আর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, কেসিসি নির্বাচনে সংঘটিত অনিয়ম বিষয়ে যখনই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাকে জানানো হয়েছে, তখনই তিনি বলেছেন, তারা এমন কোনো খবর পাননি। পরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে তিনি দেখছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কারচুপি করে জনগণের বিজয় আওয়ামী লীগ ছিনিয়ে নেওয়ার পরও তিনি কী দেখেছেন তা একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। তবে তার পক্ষে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা জনগণ বুঝতে পেরেছে।

এদিকে বুধবার (১৬ মে) ঢাকায় বসে কেসিসি নির্বাচনের খোঁজখবর নিয়েছেন বিএনপি নেতারা। দলীয় প্রার্থীসহ নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের কাছ থেকে তারা নানা অভিযোগ পেয়েছেন। পুরনো কিছু অভিযোগের পাশাপাশি এই নির্বাচনে তাদের চোখে নতুন কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো খুলনার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যদের ভোট কারচুপিতে অংশ নেওয়া। শুধু তাই নয়, অনিয়মের বিষয়গুলো আড়াল করতে ঢাকায় বসে মিডিয়া কন্ট্রোল করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।

মনিটরিং টিমের প্রাপ্ত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, কেসিসি নির্বাচনে সরকার ভোট কারচুপির নতুন স্টাইল দেখিয়েছে। তারা ঢাকায় বসে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছে। খুলনা থেকে কারচুপির যে সংবাদ ঢাকায় এসেছে তা প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। এ কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে অনিয়মের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়। তারা বলেছে, অনিয়মের কোনো খবর তাদের কাছে নেই। তারা ঢাকায় বসে কোনো মিডিয়ায় অনিয়মের কোনো খবর দেখতে পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, শুধু মিডিয়া নিয়ন্ত্রণই নয়, সরকার কেসিসি নির্বাচনে অনিয়মে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। সারা দেশ থেকে সরকার তাদের আদর্শের পুলিশ সদস্যদের খুলনায় জড়ো করেছিল। বিভিন্ন হোটেলে তাদের রাখা হয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন খুলনার পুলিশ কমিশনার। তাদের দিয়ে ভোটকেন্দ্রগুলোতে জাল ভোট দেওয়ানো হয়েছে।

কেসিসি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার যে কারচুপি করবে তা বিএনপি আগেই জেনেছে। শুধু খুলনার ভোটাররা যাতে তা স্বচক্ষে দেখতে পারে সেজন্য বিএনপি প্রার্থী দিয়েছিল। খুলনার জনগণ দেখেছে কীভাবে তাদের ভোট অন্যরা দিয়ে গেছে। কীভাবে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্কুলের বাচ্চারাও বাবার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে জাল ভোট দিয়েছে।

এখন কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করে আসছে। সামনের দিনগুলোতে তা অব্যাহত থাকবে।

বুধবার (১৬ মে) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কেসিসি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে কেএম নুরুল হুদাসহ পুরো কমিশনের পদত্যাগ চেয়েছেন।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন