২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

সংবাদের কাউন্টারে বরিশালের বন্দর থানার ওসি!, তোলপাড়

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৩১ পূর্বাহ্ণ, ২৮ মে ২০১৮

এবার তপ্ত আগুনে ‘ঘি’ ঢাললেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা হায়দার। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের পাল্টা পদক্ষেপে প্রতিবাদস্বরূপ নিজের অবস্থান কৌশলে তুলে ধরলেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ তার এক দিনের মাথায় সেই সংবাদের প্রতিবাদ নিয়ে বরিশালে ঢের আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। যদিও সেই প্রতিবাদটি ওসি নিজেই সাংবাদিক ডেকে দিলেও কিছুটা কৌশল নিয়েছেন। হারুন নামে রেণুপোনা চোরাকারবারির নামটি ব্যবহার করেছেন তিনি।

অথচ এই হারুন প্রতিবাদ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তাহলে থানার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা কিভাবে পুলিশের নিয়ম নীতির বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ দিলেন এই বিষয়টি খোদ থানা পুলিশও আলোচনা সমালোচনার খোরাক জুগিয়েছে।

বিশেষ করে ওসির এই চৌর্যবৃত্তির ঘটনায় থানা পুলিশের অনেক কর্মকর্তা অস্বস্তিতে রয়েছেন। কিন্তু ওসি বলে কথা। অনেকে বিরুদ্ধাচারণ করলেও শীর্ষ কর্মকর্তার প্রকাশে কেউ মুখ খোলার সাহস নিচ্ছে না বা দেখাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে- ওই থানার মুন্সি ফাইজুলের মাধ্যমে গত শুক্রবার বন্দর থানার দুই সাংবাদিককে ডেকে নেন ওসি গোলাম মোস্তফা হায়দার। পরবর্তীতে থানা কম্পাউন্ডে আলোচনা সেরে সেই দুই সাংবাদিককে ম্যানেজ করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে সমসাময়িক সময়ে প্রকাশিত ‘‘লাখ টাকায় ম্যানেজ ওসি’’ শিরোনামের খবরটির একটি প্রতিবাদ পত্রিকায় তুলে ধরার আবেদন জানান।

পরদিন শনিবার বরিশালের দুটি পত্রিকায় ওসি সেই প্রতিবাদটি ফলাও করে প্রকাশ করে। কিন্তু বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে- প্রকাশিত প্রতিবাদটিতে রেণুপোনা পাচারকারী হারুনের নামটি ব্যবহার করা হয়। থানা পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য সাম্প্রতিকালে বরিশাল সদর উপজেলার নেহালগঞ্জ থেকে গভীর রাতে রেণুপোনা পাচারকালে সাংবাদিকদের কৌশলতায় তা আটকে যায়। কিন্তু ওই সময় থানা পুলিশ সাংবাদিকদের তাড়িয়ে সেই রেণুপোনা ভর্তি ট্রাকটি ছেড়ে দিতে নানা উদ্যোগ নেয়।

সেই সময় সাংবাদিকদের পাল্টা পদক্ষেপের কারণে একপর্যায়ে পুলিশের সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এমনকি ওই দিন পুলিশ ও রেণুপোনা পাচারকারীদের সখ্যতা ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সাংবাদিকদের অনুমানে আসে। সেই ঘটনায় পুরো বিষয়টি তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। যদিও সাংবাদ প্রকাশের আগে সাংবাদিক ম্যানেজে থানা পুলিশের মুন্সি নানা প্রস্তাব দেন। সেখানে ব্যর্থ হয়ে দুই দিনের মাথায় সেই সংবাদের কাউন্টার দিলেন প্রতিবাদে।

অবশ্য প্রথম দিনের সেই সংবাদের পরপরই বন্দর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা হায়দারের চেয়ারটি অনেকাংশে নড়বড়ে হয়ে যায়। অনেকটা স্বচ্ছ মনের মানুষ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহফুজুর রহমান পুরো বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখার পরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও পুলিশ কমিশনার ওই সময় বলেছিলেন- পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটির সত্যতা নিশ্চিতে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

অবশ্য পুলিশ কমিশনার এখন বলছেন- ওসির প্রতিবাদের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এখন নতুন করে আবার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। এমন বাস্তবতায় অনুমেয় এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিষিয়ে উঠতে পারে ওসির ভবিষ্যত। সেক্ষেত্রে তার চেয়ারটি হারানোর আশঙ্কাই বেশি। সেই সাথে ফেঁসে যেতে পারেন পুরো ঘটনার অনুঘটক মুন্সি ফাইজুল। কারণ ওই থানায় অপরাধীদের সাথে অধিকাংশ আর্থিক লেনদেন এই ফাইজুলের মাধ্যমেই করে থাকেন ওসি।

তাছাড়া রেণুপোনা পাচারকারীদের রাতে সহযোগিতা দিয়ে লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশের অপরাপর কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে। মূলত এই ঘটনাই বেশি মাত্রায় চেয়ার হারানোর ভয়ে রয়েছেন ওসি। এখন তার বিতর্কিত কর্মকান্ডগুলোকে আড়ালে রাখতে তুলে ধরলেন প্রতিবাদ। তবে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কাউন্টার প্রতিবাদ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ওসি বলছেন বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন।

কিন্তু পত্রিকায় কথিত প্রতিবাদকারী হারুন বলছেন- প্রতিবাদ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। যদি কোন প্রতিবাদ এসে থাকে তা বন্দর থানা পুলিশের ওসি বা মুন্সি দিয়েছেন। এমতাবস্থায় বন্দর থানায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় জানা গেছে- ওসি মুন্সিকে দিয়ে সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে প্রতিবাদ ছাপিয়েছেন।

এবার আবারও ওসিকে প্রশ্ন করা হলে এ প্রতিবেদককে বিষয়টি চেপে গিয়ে আপোষরফার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত আরও একটি প্রতিবেদন অর্থাৎ ‘আটক রেণুপোনা চোরাকারবারি ও ব্যবহৃত ট্রাকটি কৌশলে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে প্রতিবেদনটি পড়তে চোখ রাখুন…

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন