১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সুন্দরবন রক্ষার লড়াই

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ, ১৫ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল যখন আমার উপন্যাস লেখার জন্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি। একদিন এক দূর গ্রামের একজন গায়কের সঙ্গে পুকুর ঘাটে বসে গল্প করতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনের গল্পটা আমাকে বলুন। সেই গায়ক অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলেছিল, এক সাইক্লোনের দিনের গল্প। ভোরবেলা হঠাৎ সাইক্লোন হয়ে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সমুদ্রের পানি বাড়তে বাড়তে যখন তার উঠান পর্যন্ত চলে আসে তখন সে একটা গাছের ওপর আশ্রয় নিয়েছিল। এবং দেখছিল তার একমাত্র সম্বল তিনটা গরু যার দুধ বেচে সে জীবিকা নির্বাহ করতো সেই গরুগুলো পানিতে ডুবে যাচ্ছে। যখন এমন অবস্থা এসে দাঁড়ায় যে গরুগুলোকে ছেড়ে না দিলে সেগুলো ডুবে মরে যাবে, তখন সে একে একে সবগুলো গরুর রশি আলগা করে দেয় এবং তাদের প্রাণ রক্ষা করতেই তাদেরকে পানিতে ভেসে যেতে দেয়। গাছের ওপর বসে বসে গরুদের ভেসে যাওয়ার দৃশ্য দেখার সময় সে তার অশ্রু মুছতে থাকে।
বিকালের মধ্যে যখন ঘরের আঙ্গিনা থেকে পানি নেমে যায় তখন সে গাছ থেকে নেমে আসে এবং যেখানে গরুগুলো বাঁধা ছিল সেখানে বসে কাঁদতে থাকে। সে ধরেই নিয়েছিল সর্বনাশী সাইক্লোন তার গরুগুলোর প্রাণ নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তার একটু পরেই সে দেখে গরুগুলো একটা একটা করে বাড়ির দিকে হেঁটে আসছে। একেকটা গরু ফিরে আসে, আর তার মুখের হাসি বাড়তে থাকে। তিনটা গরু যখন এভাবে ফিরে আসে তখন সে খুশিতে কাঁদতে শুরু করে। এই গল্প বলার সময় খুশিতে সেই গায়ক আবার অশ্রু মুছে আমার সামনে বসে।
যারা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের উপকূলীয় অঞ্চল খুলনা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারা সবাই জানেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন অন্যান্য অনেক অঞ্চলের মধ্যে খুলনা অন্যতম। কিন্তু এর মধ্যেও একটা আশার আলো দেখায় সুন্দরবন।
বঙ্গোপসাগর আর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই মিলনস্থলে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। আমরা পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি সুন্দরবন কিভাবে বর্মের মতো সাইক্লোনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাইক্লোনের প্রবণতা বেড়েছে এই অঞ্চলে। এবং আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ও ভারতের অন্যান্য সাইক্লোন প্রবণ অঞ্চলের তুলনায় সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চল সাইক্লোন দ্বারা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তাই সুন্দরবন বাংলাদেশের জন্য এক প্রাকৃতিক বর্ম। সুন্দরবন রক্ষা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সমতুল্য। এই সুন্দরবন রক্ষা করার কথা কাগজে কলমে বহুবার বলা হলেও যা করলে সুন্দরবন রক্ষা করা যায় তা কি করা হচ্ছে?

বাংলাদেশ ও ভারতের মালিকানায় গঠিত বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে তৈরি করতে যাচ্ছে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র। প্রথমে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও ভবিষ্যতে এর ক্ষমতা বাড়িয়ে ২৬৪০ মেগাওয়াট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত হতে যাচ্ছে ৫৬৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ওরিওন বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই দুইটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে। আমাদের পাশের দেশ ভারত, যার মালিকানা রয়েছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে তাদের নিজেদের দেশের ইআইএ গাইডলাইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা কারখানা নির্মাণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে এবং কোম্পানির পক্ষ থেকে সরকার বারবার গণমাধ্যম মারফত দাবি করছে এই কেন্দ্র সুন্দরবনের কোনও ক্ষতি করবে না।

12 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন