১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

‘সেহরি’ নয় ‘সাহরি’ খেয়ে রোজা রাখুন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, ২৫ মে ২০১৮

রমজান মাস উপলক্ষে মুসলিম পরিবারে যে কয়টি বিশেষ বাড়তি আয়োজন হয়, তার মধ্যে সাহরি অন্যতম। বছরের অন্য সময় মুসলিম পরিবারে সাহরির আয়োজন হয় না। সাহরি আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ ঘুম থেকে জেগে ওঠা, নিদ্রাভঙ্গ করা বা রাত্রি জাগরণ। রমজান মাসে বা অন্য যেকোনো সময়ে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুবেহ সাদিকের আগে অর্থাৎ শেষরাতে যা কিছু খাওয়া হয় পরিভাষায় তাকেই সাহরি বলা হয়। বাংলাদেশে এই শব্দটির ভুল প্রচলন রয়েছে। অধিকাংশ বাংলাদেশি ‘সাহরি’ না বলে ‘সেহরি’ বলেন। এটা প্রচলিত ভুল।

শুধু সাধারণ মানুষই নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ছাপানো রমজানের ক্যালেন্ডার বা সময়সূচিতে ‘সেহরি’ শব্দ উলে­খ করা হয়। সেহরি শব্দটি ‘সেহর’ মূল শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো জাদু বা ম্যাজিক। সুতরাং সেহরি খাওয়ার মানে হলো- জাদুবিষয়ক কোনো কিছু খাওয়া (লিসানুল আরব)। আর সাহরি খাওয়া মানে হলো- রোজা রাখার উদ্দেশ্যে শেষরাতে কিছু খাওয়া বা পান করা। সুতরাং ‘সেহরি’ নয় ‘সাহরি’ খেয়ে রোজা রাখুন। রোজা রাখার জন্য সাহরি খাওয়া সুন্নত। বরকতময় আমল।

রসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরির মধ্যে বরকত নিহিত রয়েছে। (বোখারি ও মুসলিম) ক্ষুধা না থাকলেও শেষরাতে অন্তত দু-একটি খেজুর অথবা দুধ বা কোনো পানীয় খাওয়া উচিত। এতে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে মুসলমানরা মূলত রোজা রাখার প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। হাদিসে এসেছে, তোমরা সাহরি খাও! যদি তা এক ঢোক পানিও হয়।

সাহরি খাওয়ার সময়সীমা বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৭) রমজান মাসে যথাসম্ভব দেরি করে সাহরি খাওয়া ভালো। হজরত জায়িদ ইবনে সাবিত (রা.) বলেছেন, আমরা রসুলের (সা.) সঙ্গে সাহরি খেয়েছি। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সাহরি খাওয়া ও ফজরের নামাজের মধ্যে কী পরিমাণ সময় ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, ৫০ আয়াত তেলাওয়াতের সমান সময় ব্যবধান ছিল। সুতরাং রাতের শেষভাগে সাহরি খাওয়া উত্তম।

সাহরি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মুসলমানের রোজার পরিচয় হলো সাহরি। কারণ ইহুদি-খ্রিস্টানরা সাহরি না খেয়ে রোজা রাখে। আর মুসলমানরা সাহরি খেয়ে রোজা পালন করে। তাই মুসলিম-অমুসলিম উভয়ের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি। রসুল (সা.) নিজে সাহরি খেয়েছেন এবং অন্যদের খাওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। সাহাবায়ে কিরামও সাহরি খেয়ে রোজা রাখতেন। এতে প্রমাণিত হয়, ইসলামী শরিয়তে সাহরির গুরুত্ব অপরিসীম।

সুতরাং ইচ্ছাকৃত সাহরি খাওয়া বর্জন করা কোনো মুসলমানের জন্য শোভনীয় নয়। হালে এসে বাংলাদেশে ‘সেহরি পার্টি’ নামে সংস্কৃতিরূপী এক অপসাংস্কৃতিক ধারা চালু হয়েছে। করপোরেট, খেলাধুলা, বিনোদন জগৎসহ বিভিন্ন পেশার সেলিব্রেটিদের সঙ্গে দল বেঁধে রেস্টুরেন্টে হাজির হয়ে চলে দলবদ্ধ খাওয়াদাওয়া এবং চলে গল্প-গান ও আড্ডাবাজি। বরকত লাভের একটি নববী আমলকে নিয়ে এ ধরনের আয়োজন অযৌক্তিক। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এমন সব অহেতুক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন