১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

হারিয়ে যেতে বসেছে ঝালকাঠির শীতলপাটি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:০১ পূর্বাহ্ণ, ০৩ জুন ২০১৮

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে প্রাণিকুল দিশেহারা। ঠিক তখনই স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দেয় একটি শীতলপাটি। আবহমানকাল ধরে বাংলায় গ্রীষ্মকালে মানুষ শীতলপাটি ও হাতপাখা ব্যবহার করে আসছেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও প্লাস্টিক পণ্যের দৌরাত্ম্যে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে শীতলপাটি শিল্প।

তবে পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রাখতে এখনো শীতলপাটি ও পাখা তৈরি করছেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি ও সাংগর গ্রামের দুই শতাধিক কারিগর। তারা জানান, রাষ্ট্রীয় সহায়তা না পেলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের বিশখালী নদীর তীরে হাইলাকাঠি গ্রামে এখনো চাষ করা হয় শীতলপাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল পাইতরা গাছ। তা ছাড়া উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের সাংগর গ্রামেও রয়েছে এ গাছের চাষ। গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদের ছাল বা বাকল দিয়ে তৈরি হয় শীতলপাটি।

সরেজমিন রাজাপুরের হাইলাকাঠি গ্রামে দেখা যায়, বাগান থেকে পাইতরা গাছ কেটে প্রথমে বেতি তৈরি করা হয়। পরে সেই বেতি রোদে শুকানো হয়। পরে রঙিন পানিতে ভিজিয়ে আবারও রোদে শুকানো হয়। সবশেষ পাটি তৈরি করার আগে হালকা পানি দিয়ে ভিজিয়ে বেতি নরম করে পাটি তৈরি করা হয়। পাটি তৈরির এ কাঁচামাল প্রস্তুত করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে।

পরে সেই বেতি দিয়ে একটি পাটি তৈরি করতে একজন কারিগরের ৪-৫ দিন সময় লাগে। আর যদি পাটিতে নকশা তৈরি করতে হয় তবে সময় লাগে ৭ থেকে ১০ দিন। একটি শীতলপাটি তৈরি করতে একজন শিল্পির যে মেধা ও সুজনশীলতার প্রকাশ পায় তারই স্বীকৃতি সরূপ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে ইউনেসকোর ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ এর (আইসিএইচ) ১২তম অধিবেশনে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে শীতল পাটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

হাইলাকাঠি শীতল পাটি উন্নয়ন প্রকল্প সমিতির সভাপতি তাপস পাটিকর বরিশালটাইমসকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ গ্রামে আমরা শীতলপাটি তৈরি করছি। এক যুগ আগেও এ গ্রামে শতাধিক পরিবারে প্রায় তিন শতাধিক কারিগর এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু এখন লাভ কম হওয়ায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

স্বপন পাটিকর জানান, একটি পাটি তৈরি করতে যে টাকা ও শ্রম বিনিয়োগ করতে হয় সেই তুলনায় দাম পাই না। একটি ভালো পাটি তৈরি করতে কমপক্ষে ৫০০ টাকা ও একজন কারিগরের পাঁচদিন সময় লাগে। একটি পাটি ১২০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি করি। ঝালকাঠিতে মহাজনরা তা ৩-৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

ঝালকাঠি বিসিক উপ-ব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ বরিশালটাইমসকে জানান, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিসিকের পক্ষ থেকে আমরা স্বল্পসুদে ঋণ দিয়ে তাদের সহায়তা করতে পারি। যদি তারা এগিয়ে আসেন। জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, এর মধ্যে শীতলপাটি ও পেয়ারাকে জেলার ব্রান্ডিং পণ্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। ৪০ জন নারী কারিগরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যাতে কারিগররা পাটি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কলমদানি, সুন্দর শোপিসসহ আকর্ষণীয় পণ্য তৈরি করতে পারে। এ শিল্পের উন্নয়নে সরকারের আরও পরিকল্পনা রয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন