২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

হাড়খাটুনি দিয়েও কৃষকদের ধানে লোকসান

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:০২ অপরাহ্ণ, ১৯ মে ২০১৬

বরিশাল: মোস্তফা শেখ ধান ক্ষেতে হাড়খাটুনি দিয়েছেন পুরো মৌসুম। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু ধান বিক্রি করতে গিয়েই মন খারাপ। মৌসুম শেষে লাভের দেখা নেই। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বরইবুনিয়া গ্রামের কৃষক মোস্তফা শেখ। নিজের ও বর্গা জমি মিলিয়ে চলতি বছর ৩ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেন।

একর প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার টাকা। প্রতি একরে ধান পেয়েছে ৪৫ থেকে ৪৭ মণ। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ২১ হাজার টাকা।

আর বর্গাজমিতে কৃষকের খরচ বেড়ে দাড়ায় ২০ হাজার টাকার ওপর। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাদ দিলে কৃষকের কোনো লাভ থাকে না। মোস্তফা শেখ বলেন, ধানের মণ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হলে পুষিয়ে নেওয়া যেত।

শুধু মোস্তফা শেখ নয় জেলার প্রায় সকল বোরো চাষিই হতাশায় রয়েছেন। চলতি বছর বোরো ধানের বাজারে দাম কম থাকায় চরম হতাশ এসব চাষিরা।

জেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতি মণ ধান জাতভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায়। অথচ একজন কৃষি শ্রমিকের প্রতিদিনের মজুরিই ৪০০ টাকা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫১ হাজার একর জমিতে হাইব্রিডের ২৮টি জাত, উচ্চফলনশীল (উফশী) বোরোর ১৯টি জাত এবং এবং পাঁচ জাতের স্থানীয় বোরো ধান চাষ হয়েছে।

জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, নেছারাবাদ ও মঠবাড়িয়ায় বোরো চাষ হয়। বর্তমানে মাঠে বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর একর প্রতি গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ মণ ধান ফলেছে। আর ধানের বাজারদর মণপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।

জেলার প্রধান ধান বাজার শ্রীরামকাঠি, মাটিভাঙা, পাঁচপাড়া, দুর্গাপুর এলাকার কৃষকদের অভিযোগ একই, ধান চাষে লোকসান হচ্ছে।

সদর উপজেলার শিকারপুর এলাকার ধীমান মিস্ত্রী, দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক মজনু তালুকদার, নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের আনছার হাওলাদার, মাটিভাঙা গ্রামের আল আমিন জানান, এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানের দরপতন হওয়ায় কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

লোকসান হলেও ধান চাষ কেন করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক অমলেশ রায় জানান, বাপ-দাদার জমি ফেলে রাখা যায় না। আবার অন্য ফসলও হয় না। এক প্রকার বাধ্য হয়েই কৃষকেরা বোরো ধান চাষ করছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ধানের ফলন আশানুরূপ। প্রাথমিক হিসাবে হাইব্রিড বোরো জাতের ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে (২.৪৭ একর) ৪.৬৫ টন চাল এবং উচ্চ ফলনশীল জাতে ৩.৬৬ টন চাল।

মঠবাড়িয়া উপজেলার ছোট সিংগা গ্রামের বাবুল হাওলাদার বলেন, বোরো চাষ করে ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কয়েকবছর ধরে আমি বোরো চাষ বন্ধ করে দিয়েছি। একসময় বোরো আবাদ করে লাভবান হলেও বর্তমানে ধানের দরপতন হওয়ায় অনেক কৃষক বোরো চাষ লোকসান সম্মুখীন হয়েছেন। এ কারণে অনেক কৃষক বোরো ধান আবাদ না করে জমিতে রবি শস্য আবাদ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পিরোজপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচারলক আবুল হোসেন তালুকদার জানান, ধানের বাজার মূল্য কম হলেও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের লোকসান হবে না। ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে সরকার সার ও যন্ত্রপাতি ভর্তুকি দিচ্ছে। যাতে ধানের উৎপাদন খরচ কমে যায়। এ বছর সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ২৩ টাকা দরে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে কৃষক ধানে ন্যায্য মূল্যে পাবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় শিগগিরই ধান ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কৃষকরা ধান কিছুদিন ঘরে রাখতে পারলে লাভবান হবেন।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন