২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

২৮ বছর পর ফেরা মিসরের সামনে উজ্জীবিত উরুগুয়ে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৩৮ অপরাহ্ণ, ১৫ জুন ২০১৮

সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দেশগুলোর মধ্যে লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়েই কেবল পড়েছিল সহজতম গ্রুপে। কিন্তু উদ্বোধনী দিনে রাশিয়ার উড়ন্ত ফুটবল দেখার পর ‘এ’ গ্রুপকে সহজ বলার সুযোগ নেই। এবারের আসরের দুর্বলতম দল রাশিয়া ৫-০ গোলে জেতায় অনেকটাই জটিল হয়েছে মিসর,উরগুয়ে আর সৌদি আরবকে নিয়ে এই গ্রুপটি।

‘এ’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য সম্ভাব্য দুই দেশ ধরা হচ্ছিল মোহামেদ সালাহর মিসর এবং প্রথম বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই নিজেদের মুখোমুখি এই দুই দল। এই ম্যাচের ফলাফলই ঠিক করে দেবে এই গ্রুপের ভাগ্য, এমনটাই ছিল সকলের ধারণা। কিন্তু স্বাগতিক রাশিয়ার দুর্দান্ত ফুটবলে সবাই নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।

মিসরের বিশ্বকাপ সম্ভাবনার পুরোটাই ঘুরছে দেশটির সেরা তারকা মোহামেদ সালাহকে কেন্দ্র করে। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে কঙ্গোর বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো গোল করে দেশটির ‘রাজা’ বনে গেছেন তিনি। দীর্ঘ ২৮ বছর পর মিসরকে বিশ্বকাপের মূল পর্বে তোলায়, তার প্রতি মিসরের মানুষের প্রত্যাশার পারদটাও বেশ উঁচু।

কিন্তু এই সালাহকে নিয়েই ছিল মিসরের যত সংশয়। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে পাওয়া চোটের কারণে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অনিশ্চিত ছিলেন তিনি। তবে ম্যাচের আগেরদিন মিসরের কোচ জানিয়েছেন খেলার জন্য শতভাগ প্রস্তুত সালাহ। তার দলের কোচ কুপার বলেন, ‘আমি আপনাদের শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে সালাহ উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচেই খেলবে। সে অত্যন্ত সাহসী ফুটবলার। আমরাও তাকে আত্মবিশ্বাস দিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে ইনজুরি কাটিয়ে সালাহ ফিরলেও চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন উরগুয়ের ৩২ বছর বয়সী ডিফেন্ডার দিয়েগো গোডিন। কেননা উরগুয়ের প্রস্তুতি দলভিত্তিক, কোন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ভিত্তিক নয়। গোডিন বলেন, ‘আমরা এই টুর্নামেন্টের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি মোটেও একজন খেলোয়াড়কে ভিত্তি করে নয়। সালাহ মিশরের সেরা খেলোয়াড়, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি তার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে নয়।’

লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পেতে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি উরগুয়েকে। ১৮ ম্যাচে ৯ জয় নিয়ে খুব সহজেই রাশিয়ার টিকিট পেয়েছিল তারা। অন্যদিকে ৬ ম্যাচে মাত্র ১টিতে হারলেও, রাশিয়া বিশ্বকাপের নিশ্চয়তা পেতে সালাহর মিসরকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল বাছাইপর্বের একদম শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। যেখানে কঙ্গোর বিপক্ষে শেষ মূহুর্তে পেনাল্টিতে গোল করে ফারাওদের স্বপ্নপূরণ করেন সালাহ।

তবে সাম্প্রতিক ফর্মটা মোটেও ভাল যাচ্ছেনা মিসরের। নিজেদের শেষ পাঁচটি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি তারা। হেরেছে কুয়েত, পর্তুগাল ও বেলজিয়ামের কাছে, জিততে পারেনি গ্রিস কিংবা কলম্বিয়ার বিপক্ষেও। অন্যদিকে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে উরুগুয়ে। নিজেদের সবশেষ সাত ম্যাচে অপরাজিত তারা।

এছাড়াও লুইস সুয়ারেজ-এডিনসন কাভানিদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাবে বিশ্বকাপে আফ্রিকান দলগুলোর বিপক্ষে উরুগুয়ের অতীত পরিসংখ্যান। এর আগে বিশ্বকাপে ৩ বার আফ্রিকান দলের বিপক্ষে খেলে ১ টি জয় ২টি ড্র করে উরুগুয়ে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ৮ ম্যাচে কেবল ১টিতে হেরেছে তারা।

অন্যদিকে ১৯৯০ সালে সবশেশ বিশ্বকাপ খেলা মিসর এখনো পর্যন্ত কোন জয় পায়নি। ২ ম্যাচ খেলে হেরেছে ২টিতেই, গোল হজম করেছে মোট ৬টি। সালাহসহ মিসরের বর্তমান স্কোয়াডের অনেক খেলোয়াড়ের সেসময় জন্মই হয়নি। তাই ফারাওদের বিশ্বকাপের অতীত ইতিহাস মাথায় না রাখলেও চলে।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সবাইকে মুগ্ধ করে মূল পর্বে আসা মিসরের লক্ষ্য কেবল অতীত ইতিহাস বদলে দেয়াই নয়, নতুন করে নিজেদের ইতিহাস লেখা। উরুগুয়ের সামনে লক্ষ্যটা নিজেদের সমৃদ্ধ অতীত ফিরিয়ে আনা। ১৯৩০ এবং ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ জয়ীরা গত ৬ আসরে মাত্র একবার দ্বিতীয় রাউন্ডের বাঁধা পেরুতে পেরেছিল। রাশিয়া বিশ্বকাপে তারা চাইবে দ্বিতীয় রাউন্ডের ফারা কাটিয়ে উজ্জীবিত ফুটবল খেলে নিজেদের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ করতে।

একাতেরিনবার্গ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে মিসর এবং উরুগুয়ে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন