২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

নলছিটিতে ইউপি চেয়ারম্যানের অপকর্মের বিরুদ্ধে মেম্বারদের সংবাদ সম্মেলন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:১৪ অপরাহ্ণ, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা মো. মাসুদুর রহমান সালামের অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পরিষদের দুইজন মেম্বার। স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানি, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব কারাগারে এক যুবককে নির্যাতন, আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মীয়করণ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে চেয়ারম্যান তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নলছিটি সাংবাদিক ফোরাম কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বর জহিরুল ইসলাম নান্টু খান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, মাসুদুর রহমান সালাম নামমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি এলাকায় আসেন না। ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। বর্তমানে স্থানীয় কয়েকজন সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে চেয়ারম্যানবাহিনী। যাদের কাছে এলাকাবাসী জিম্মি। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে বা প্রতিবাদ করলে গ্রামছাড়াসহ নানা রকম হুমকিতে থাকতে হয় ইউনিয়নবাসীকে।

বছরখানেক আগে চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সালামের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান সালাম  উত্তর রানাপাশা গ্রামের মৃত আফজাল কাজীর মেয়ে লাইজু আক্তার নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মেয়েটির পরিবার রাজি হয়নি। গত ৫ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান সালামের লাঠিয়াল বাহিনী লাঠিসোটা, দা-কুড়াল, বর্শাসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র নিয়ে ওই পরীক্ষার্থীর বাড়িতে হামলা চালায়। ঘরে ঢুকে ভাংচুর চালিয়ে তার বৃদ্ধ দাদিকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে লাইজুকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালায় চেয়ারম্যানবাহিনী। এ ঘটনায় ঝালকাঠি রিপোটার্স ইউনিটি কার্যালযে সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারম্যানের বিচার দাবি করে পিতৃহারা ওই কিশোরী।

বছর খানেক আগে একটি  মারামারি ঘটনায় সালিস বৈঠকে স্থানীয় নলবুনিয়া গ্রামে নূরু মোল্লার ছেলে জহিরুলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউপি চেয়ারম্যান। সালিসেই সেই টাকা না দিতে পারায় ওই যুবককে ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব কারাগারে পোরেন চেয়ারম্যান সালাম। পরবর্তীতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই কক্ষের তালা ভেঙে যুবককে মুক্ত করেন ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য।

চেয়ারম্যানের দোসর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ মোল্লা উপজেলার ভেরনবাড়িয়া গ্রামে ফসলি জমিতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছেন অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। ইটভাটায় দেদারসে পোড়াচ্ছেন কয়লার পরিবর্তে কাঠ। হামিদ মোল্লা বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে অনেকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বরিশাল জেলা জজ আদালতে তার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা চলমান রয়েছে। তিনি আপন চাচী শ্বাশুড়িকে বিয়ে করে এলাকায় হাস্যরসের সৃষ্টি করেছেন।

চেয়ারম্যান সালামের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে মেম্বার নান্টুু খান লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওযার পর মাসুদুর রহমান সালাম ভিজিডি’র ১৬ বস্তা ও ভিজিএফ’র ৪৫ বস্তা চাল আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কর্মসৃজন কর্মসূচি, এলজিএসপি, টিআর ও কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা আতœসাতের করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, চেয়ারম্যান সালাম ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি হামিদ মোল্লার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তার (জহিরুল ইসলাম নান্টু খান) ও সাইদুল ইসলাম মন্টুর বিরুদ্ধে ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সংসদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর দৃষ্টি আকর্ষন করে জহিরুল ইসলাম নান্টু খান এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে রানাপাশা ইউনিয়নের ওয়ার্ডের মেম্বার সাইদুল ইসলাম মন্টু উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে রানাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুর রহমান সালামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন