হৃদয় হোসেন মুন্না, বেতাগী:: বরগুনার বেতাগীতে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে গত তিন দিন ধরে অপ্রয়োজনীয় চলাফেরায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। দোকানপাটের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। স্বল্পপাল্লার গণপরিবহন, সব প্রকার অটোরিকশা, অটোবাইক ও ইজিবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। লোকজন চলাচলও করছে সীমিত আকারে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষদের কর্মসংস্থান কমে গেছে। বন্ধ হয়েগেছে দিনমজুর-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে দেড় লাখ জনসংখ্যা অধ্যূষিত এখানকার অনেক খেটে খাওয়া মানুষ।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে লেগেছে করোনার ঢেউ। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এ জনপদেও। প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। এতে বিপাকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রেণির সাধারণ দিনমজুর মানুষেরা। পাশাপাশি এই শ্রেণির মানুষ রয়েছে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। খেটে খাওয়া এসব দিন মজুরদের কাছে এখন করোনা ঝুঁকির চেয়েও জরুরি তিনবেলা খাবার জোগাড় করা। আর তাই মানুষ যখন ভাইরাস থেকে রেহাই পেতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে, তখন তারা জীবিকার তাগিদে রাস্তায় ছুঁটে বেড়াচ্ছে উদভ্রান্তের মত। তারা আতঙ্কের চেয়ে তীব্র খাদ্য সংকটের শঙ্কায় রয়েছে।

গত তিন দিন ধরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও ভাইরাস আতঙ্কে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে খুব একটা বের হচ্ছে না। ফলে উপজেলার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ব্যাটারি চালিত অটো ও রিকশাসহ ক্ষুদ্র যানবাহন চালকরা রাস্তায় নামলেও তেমন যাত্রী পাচ্ছেন না। করোনা আতঙ্কে হাট-বাজারেও মানুষ নেই। এতে খেটে খাওয়া মানুষেরা হয়ে পড়ছেন বেকার। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলুসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য দিন দিন বেড়ে চলায় দিনের আয়ে যাদের রাতের খাওয়া চলে, কাজ না থাকায় তাদের কপালে বাড়ছে-দুশ্চিন্তাার ভাঁজ। তারা বলছেন, বাজারে যার লাগে ৫ কেজি সে কিনছে ১ বস্তা, গরিবের ঘরে তো দুই দিনের খাবারও নাই। সব বন্ধ করে দিলে আমরা কী করে খাব। আমরা করোনায় মরব না, মরব পেটের ক্ষুধায়।

একদিকে কাজের অভাবে ইনকাম বন্ধ অন্যদিকে সাধারণ মানুষর দৈনন্দিন খাদ্যপণ্য মজুদের প্রতিযোগিতায় বিপাকে পড়েছে এসব সাধারণ শ্রমজীবী, অটো, রিকশাচালকসহ সাধারণ দিনমজুররা। উপজেলার ১টি পৌরসভা সহ ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এমনই কিছু শ্রমজীবী-দিনমজুরের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের দুভার্বনার কথা।

উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের দিনমজুর নুরুল হক বলেন, ‘ভাইরাসের ভয়ে ঘরে বইসা থাকলে খাবার জুটবে না। আর সব জিনিসের যে দাম বাড়ছে তাতে এমনিতেই না খাইয়া মরা লাগবে।’ অটো চালক মো: ফারুক বলেন, করোনার কারনে রাস্তায় যাত্রী না থাকায় আয় রোজগার প্রায় বন্ধ। সারা দিনে যে কয় টাকা ইনকাম করি তা দিয়ে চাউল কিনতে পারমু না।

সরে জমিনে দেখা যায়, খাওয়া মানুষগুলো পেটের দায়ে দিকভ্রান্তের মত এদিক সেদিক ছুটার ফলে কোনভাবেই খেয়াল রাখতে পারছে না স্বাস্থ্যের দিকে। তৈরি হচ্ছে ভয়ংকর স্বাস্থ্য ঝুঁকি। যা থেকে ঘটতে পারে ভয়ংকর কিছু। তারাও চান অন্য সকলের মত স্বাস্থ্য সূরক্ষা। তবে তারও আগে চান পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘরে বসে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেতে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে নিয়মিত হাত ধুতে হবে, জনসমাগম এড়াতে হবে, এই বার্তাগুলো নানা মাধ্যমে তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে ঠিকই-কিন্তু মানার যেন সুযোগ নেই!

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রাজীব আহসান জানান, এ বিষয় এখানো সরকারি কোন দিক নিদের্শনা পাওয়া যাযনি। তবে কোন মানুষ যাতে না খেয়ে না থাকে স্থানীয়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।
ক্যাপশন: বেতাগীতে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ব্যাটারি চালিত অটো ও রিকশাসহ ক্ষুদ্র যানবাহন চালকরা রাস্তায় নামলেও যাত্রীর না থাকায় অপেক্ষামান খালি যানবাহন।