বার্তা পরিবেশক কলাপাড়া:: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পাখিমারা খালের ওপর নির্মিত সেতুটি ভেঙে পড়েছে। এ সময় সেতুর ওপর থাকা শহিদুল হক ও রুহুল আমিন মৃধা নামে দুই ব্যক্তি খালে পড়ে আহত হয়। তবে তাৎক্ষণিক তারা সাঁতরে তীরে ওঠায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বুধবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে যায়। এতে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আটটি গ্রামের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দূর্ভোগে পড়েছে ওইসব গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা খালের ওপর দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১১৬ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সেতুটি নির্মাণ করে। পুরনো সেতুর মালামাল খুলে এ সেতুটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই সেতু পার হতে মানুষের মধ্যে ছিলো ভয় ও আতংক। কেননা সেতু নির্মানের সময় খালে ঠিকভাবে লোহার খুঁটিগুলো বসানো হয়নি। লাগানো হয়নি খুঁটির সাথে আড়াআড়ি লোহার এ্যাঙ্গেল। এ কারণে সেতুতে মানুষ চলাচল করলেই দুলতো। কিন্তু বুধবার রাতে হঠাৎ মাত্র দুইজন মানুষ নিয়ে সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে তলিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, এ সেতু পার হয়ে পার্শ্ববর্তী মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের তেগাছিয়া গ্রামের মানুষ ছাড়াও কুমিরমারা, পূর্ব কুমির মারা, পাখিমারা, মজিদপুর, এলেমপুর, বাইনতলা, ফরিদগঞ্জ ও সুলতানগঞ্জ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে। কৃষিতে সমৃদ্ধ এসব গ্রাম থেকে সেতুটি ব্যবহার করে সবজি সংগ্রহ করতেন দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেতু ভেঙে পড়ায় এখন সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে সবজি চাষী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া কৃষক রুহুল আমিন মৃধা বরিশালটাইমসকে জানান, পাখিমারা বাজার থেকে সেতু পাড় হয়ে কুমির গ্রামের বাসায় ফিরছিলেন। সেতুর মাঝ বরাবর আসতেই হঠাৎ বিকট শব্দ করে সেতুর কুমিরমারা অংশ ভেঙে পড়তে শুরু করে। তখন ভয়ে পেছনের দিকে দৌড় দিলে তাও ভেঙে পড়ে কাঁত হয়ে গেলে সে খালে পড়ে যায়। খালে কচুড়িপানা থাকায় প্রায় দশ মিনিট অন্ধকারে পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার পর তীরে উঠতে সক্ষম হন।

স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সবজি কিনতেন। এখন সেতু ভেঙে পড়ায় ছোট ডিঙ্গি নৌকার উপর তাদের নির্ভর করতে হবে। এসব নৌকায় চার-পাঁচজনের বেশি মানুষ ওঠানো যায়না। সে ক্ষেত্রে মালামাল পরিবহনে তাঁদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে।

কলেজ শিক্ষার্থী মো.বায়েজিদ জানায়, হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে। তখন খেয়া পার হয়ে ঝড়, বৃষ্টির মধ্যে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে।

নীলগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. নাসির মাহমুদ বরিশালটাইমসকে জানান, সেতটিু ভেঙে পড়ায় বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ডিঙ্গি নৌকায় করে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বরিশালটাইমসকে জানান, সেতু ভেঙে পড়ায় এখন বিকল্প উপায়ে চলাচল অব্যাহত রাখতে ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। একই সাথে সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে এলজিইডিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

কলাপাড়া এলজিইডির প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বরিশালটাইমসকে জানান, পাখিমারা খালে আগে ছিলো কাঠের পুল। উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্তে ছয় বছর আগে একটি পুরনো আয়রণ সেতুর মালামাল দিয়ে ওই খালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে উপজেলার ভেঙে পড়া ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।