বার্তা পরিবেশক, বরিশাল ও ঝালকাঠি:: ঝালকাঠিতে এক নারীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও নির্যাতনের পরে চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা এবং শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপুসহ ৬ জনের নামে আদালতে মামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ নির্যাতিত নারী (৩০) বাদী হয়ে মামলাটি করেন। জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল্লাহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বাদীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের আদেশ দিয়েছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলো- আনিসুর রহমান তাপুর বড় বোন সেলিনা আক্তার লাকি, ছোট বোন আইরীন পারভীন এ্যানি, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রাখি আক্তার এবং ফাতেমা শরীফ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, বছরখানেক আগে স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকিকে তালাক দেন তার স্বামী শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন খান। এরপর গত ১০ জুলাই তিনি মামলার বাদীকে বিয়ে করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয় প্রথম স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন। গত ৩০ আগস্ট সন্ধায় প্রথম স্ত্রী সেলিনা, তার ভাই ঝালকাঠি শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু ও তার সহযোগী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকাসহ ৮-১০ জন সশস্ত্র অবস্থায় তাদের বাসায় যায়। ঘরে ঢুকে তারা মামলার বাদীকে মারধর করে এবং ওয়্যারড্রব ভেঙে নগদ দুই লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এরপর অভিযুক্তরা ওই নারীকে অপহরণ করে হিলটন নামে শহরের একটি আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়। এসময় ভুক্তভোগীর চুল কেটে দেয় অভিযুক্তরা। পরে হত্যার হুমকি দিয়ে ওই নারীর কাছ থেকে কয়েকটি সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়।

এরপর নির্যাতিত নারীর ভাইকে ফোন করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় আসামিরা। পরের দিন দুপুরে মুক্তিপণের টাকা দিলে প্রায় অচেতন অবস্থায় ওই নারীকে ভাইয়ের হাতে তুলে দেয় আসামিরা।

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী নারী ঝালকাঠির সাংসাদিকদের বলেন- সারারাত নির্যাতনের একপর্যায়ে শারমিন মৌসুমি কেকা, তাপু, তার বোন ও সহযোগিরা মিলে আমাকে দিয়ে কিছু কাগজপত্রে সই নেয়। তারা আমাকে মামলা না করার জন্য হুমকি দেয়। ভয়ে আমি ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাও করাতে পারিনি।

ওই নারীর স্বামী বলেন, কেকা ও তাপুর ভয়ে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে রেখে আসলে সেখানেও লোক পাঠিয়ে আসামিরা তাকেসহ তার গোটা পরিবারকে হুমকি দেয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে গুম ও খুনের হুমকিও দেয় তারা। আমরা ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। মামলা করার পরেও আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

এ বিষয়ে মামলার আসামি ঝালকাঠি শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু সাংবাদিকদের বলেন- আমার বোনকে সঠিক নিয়মে তালাক দেওয়া হয়নি। সে এখনও বোরহানের স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।

নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। এ ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো।

ঘটনার আরেক অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা বলেন- এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর। তাদের পারিবারিক ঘটনায় আমাকে অহেতুক জড়ানো হয়েছে। সামনের পৌরসভা নির্বাচনে আমি মেয়র প্রার্থী, তাই আমাকে রাজনৈকিভাবে হেয় করার জন্য মামলায় জড়ানো হয়েছে।

ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন- মামলার কাগজপত্র এখনও হাতে এসে পৌঁছায়নি। আদালতের আদেশ হাতে পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।