ডাক্তার, নার্স ও শয্যা সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে জেলার ১৮লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ভোলা সদর হাসপাতাটি। এতে রোগীরা ঠিকমত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। বর্তমানে ২২ চিকিৎসকের বিপরীতে ৬ এবং ৫৬ নার্সের বিপরীতে ৪০ জন নার্স থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। শুক্রবার (০৭ জুলাই) রাত পর্যন্ত ১০০ বেডের হাসপাতালটিতে ২১৫ জন রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।

শুক্রবার রাতে ভোলা সদর হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন, সার্জারী ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শয্যার সংকটের কারণে মেঝেতে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব ওয়ার্ডে গড়ে দুই জন করে নার্স থাকার কথা থাকলেও নার্স রয়েছে মাত্র একজন করে। এতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা।

মেডিসিন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত স্টাফ নার্স নাজনিন আক্তার বলেন, হাসপাতালে যে পরিমান নার্স থাকার কথা সেই সংখ্যক নার্স নেই, যে কারণে রোগীদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার জনবলও নেই।’

 

মেডিসিন ওয়ার্ডে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে আছিয়া, মনি, বিবি ফাতেমা, আসমা, আমেনা ও নামিনসহ একাধিক রোগী। তাদের স্বজনরা জানান, বেড না থাকায় ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে আমাদের মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।

মেডিসিন ওয়ার্ডে ২৪টি বেডের বিপরীতে ৪০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে বহু রোগী কষ্ট করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মহিলা সার্জারী ওয়ার্ডের প্রায় একই অবস্থায়। সেখানকার দায়িত্বরত নার্স ইশরাত জাহান বলেন, ওয়ার্ডে ১৬টি বেড থাকলেও সেখানে রোগী রয়েছে ৩২জন।

শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ২৪টি বেডে রোগী রয়েছে ৪০ জন। ধারণ ক্ষমতা চেয়ে দ্বিগুন বেশী রোগী থাকায় চিকিৎসা নিতে কষ্ট হচ্ছে রোগীদের।

ইলিশা ইউনিয়নের চর মনসা থেকে আসা এক রোগী মা বলেন, একটি বেডে দুটি শিশুকে রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে আমাদের না ধরনের সমস্যা হচ্ছে। একই অবস্থা অধিকাংশ বেডের। একটি বেডে দুটি করে শিশু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স শাহনাজ বলেন, একজন নার্স ও একজন স্টুডেন্ট দিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এসব ওয়ার্ডে দিনের বেলায় ৩ জন এবং রাতের বেলায় অন্তত দুইজন করে স্টাফ নার্স থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নার্স সংকটের কারণে আমাদের সব রোগীকে চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে পুরুষ মেডিসিন ও সার্জারী ওয়ার্ডে রোগীদের তেমন চাপ না থাকলেও ডাক্তার ও নার্স সংকটে কারণে অনেকেই ঠিকমত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রোগীদের।

জানতে চাইলে ভোলা সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শরিফুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকট থাকায় আমাদের রোগীদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবুও আমরা রোগীদের সাধ্যমত চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি। হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র ৬ জন চিকিৎসক রয়েছে। রয়েছে নার্সের সংকট। বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

সূত্র জানিয়েছে, ১০০ বেডের ভোলা সদর হাসপাতাটিতে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২১৫ জন রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। জেলঅর ৬টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে আসতে হয় রোগীদের। কিন্তু প্রায়শই শয্যা সংকটে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের। এতে সেবা কার্যক্রম অনেকটা ভেঙে পড়ার উপক্রম। গরমের দিনে ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের।”