আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও বরিশাল নগরীতে স্বশস্ত্র সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত জাগুয়ায় এই অস্ত্রধারীদের ধারাবাহিক সন্ত্রাসের কাছে অসহায় এলাকাবাসী। বিশেষ করে রাতের বেলা স্বশস্ত্র মহড়া দিয়ে বেশ কয়েক দফা সন্ত্রাস সৃষ্টি মাধ্যমে আতঙ্ক সেখানকার মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। সম্প্রতি গভীর রাতে স্থানীয় এক ব্যবসায়ির বাড়িতে স্বশস্ত্র হানা দেওয়ায় এলাকাবাসীর ভেতরে আতঙ্কের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।

কিন্তু চক্রটি অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছে না, পুলিশকে অবহিত করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। ফলে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জাগুয়াবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছে। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়- ভয়ানক এই চক্রটি দিনের বেলা বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থাকে, যারা তাদের চাঁদা না দেয় রাতের বেলা তাদের ঘায়েলের মিশন নেয় সন্ত্রাসীরা। এমনকি বাসাবাড়িতে স্বশস্ত্র হামলা চালিয়েও আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

যার ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (১৫ জুলাই) রাতে চক্রটি দক্ষিণ জাগুয়া জোড়াপোল এলাকার হানা দেয়। সেখানকার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ি কবির বিশ্বাসের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এমনকি সেদিন রাতে ভাঙচুরের পরে গুলিও বর্ষণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে এই চক্রটি একাধিক বাসাবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছিল জানিয়েছে স্থানীয়রা বলছেন- রাত ১২ টার পরপরই বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে নেমে পড়ে অস্ত্রধারীরা।

দিনের বেলা তারা যাদেরকে টার্গেট করে রাতে তাদের বাসাবাড়িতে হানা দেয়। যার ধারাবাহিকতায় গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ব্যবসায়ি কবির বিশ্বাসের বাসা বাড়িতে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলো। ওই ব্যবসায়ি জানিয়েছেন- শনিবার রাতে বাড়ির অদূরে নদীর তীরে দাড়িয়ে মোবাইলে ব্যবসায়িক আলোচনা করছিলেন। ওই সময় অস্ত্রধারীরা তাঁর বাসার গেটের ভেতরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে। এমনকি তার সম্পর্কে স্ত্রীর কাছেও জানতে চায়। কিন্তু তার স্ত্রী দরজা না খুলে জানিয়ে দেন কবির বিশ্বাস বাসায় নেই।

মূলত এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাসার সামনের গেটে হামলা চালায়। বেশ কয়েকটি কোপ দিয়ে ভেঙে ফেলেছে লাইট। খবর পেয়ে কবির বিশ্বাস আসার আগেই মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায় ১০ থেকে ১২ সন্ত্রাসী। কবির বিশ্বাস জানিয়েছেন- সাম্প্রতিকালে তার কাছে একই এলাকার মৃত রহম আলীর ছেলে ইলিয়াস হোসেন মাসুদ হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই ঘটনায় তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যে বিষয়টি পুলিশী তদন্তধীন রয়েছে। যে বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেনি তার স্বজন ও সহযোগীরা।

ব্যবসায়ির দাবি ওই আক্রোশের জেরেই তাকে হত্যার উদ্দেশে এসে হামলা হয়েছে, ছুড়েছে তিন রাউন্ড গুলি। তবে কিন্তু চাঁদা দাবি করা ব্যক্তি সম্প্রতি একটি মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকলেও তার পরিকল্পনাতেই এই হামলা মিশন বাস্তবায়ন করেছেন মো. শাহাদাত হোসেন, সহযোগী সাইফুল ইসলাম খোকন এবং সিদ্দিক খান এমনটাই দাবি করছেন ব্যবসায়ি।

অবশ্য এলাকাবাসীও জোর দিয়ে বলছে এই চক্রটিই রাতের জাগুয়ায় প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আতঙ্ক তৈরি করছে। ওই রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন জানিয়েছেন- খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কিন্তু এর আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে দেখা গেছে ব্যবসায়ির বাসার মূল ফটকে বেশ কয়েকটি কোপের দাগ ও লাইট ভাঙা। কিন্ত ব্যবসায়ির বাসায় গুলি বর্ষণের মতো কোন ঘটনা ঘটেছে কী তা তিনি তদন্ত ছাড়া বলতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। এই ঘটনায় ব্যবসায়ি মঙ্গলবার আদালতে একটি মামলা দায়েরের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে অবহিত করেছেন।

তবে জাগুয়ার বাসিন্দারা তাদের নিরাত্তায় পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এক্ষেত্রে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মূখপাত্র নাসির উদ্দিন মলি¬কের অভিব্যক্তি হচ্ছে- এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে তারা সাথে সাথে অ্যাকশনে গিয়ে থাকেন। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাছাড়া বিষয়টি সম্পর্কে তিনিও খোঁজখবর নেবেন বলে জানিয়েছেন।’’