বিক্রি করতে না পেরে হাটে লাউ ফেলে যাচ্ছেন কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: রাজশাহীর বাঘায় লাউ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। হাট থেকে বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন আনেকে। দুই একজন আবার অবিক্রিত সেই লাউ ফেলে রেখে যাচ্ছেন হাটেই। এমন ঘটনা ঘটেছে শনিবার উপজেলার আড়ানী পৌর হাটে।জানা যায়, আড়ানী গোচর মহল্লার হাবিবুর রহমান এক বিঘা জমিতে লাউ আবাদ করেছেন।

তার এই লাউ চাষ করতে সার, বীজ, সেচ, শ্রমিক, মাচা তৈরিসহ খরচ হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। প্রথমদিকে তিনি প্রতিপিস দেড়-দুই কেজি ওজনের একটি লাউ বিক্রি করেছেন ৪০-৪৫ টাকায়। মাঝামাঝি সময়ে বিক্রি করেছেন ২৫-৩৫ টাকা প্রতি পিচ। শেষ সময়ে ৫-১০ টাকা বিক্রি করেছেন। কিন্তু শনিবার হাটে কোনো ক্রেতা না পাওয়ায় বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে গেছেন।

তিনি শনিবার জমি থেকে ১৬০টি লাউ তুলেছিলেন। লাউ তুলতে শ্রমিক খরচ হয় ১৬০ টাকা। বাড়ি থেকে হাটে নিতে ভ্যানভাড়া খরচ হয়েছে ১০০ টাকা। বিক্রি না হওয়ায় বাড়িতে নিয়ে ভ্যান খরচ হয়েছে ১০০ টাকা। তার মোট খরচ হয়েছে ৩৬০ টাকা। হাবিবুর রহমান আরও বলেন, লাউয়ের জমিতে এখনো ৪০০ পিচ লাউ ঝুলে আছে। এগুলো তুলে বিক্রি না করলে মাচা ভেঙে ক্ষতির মুখে পড়বো। উপজেলার গোচর গ্রামের লাউচাষি লালটু বলেন, হাটে সকালে এক দোকানিকে ৩৬টি লাউ দিয়েছি। বিক্রি শেষে কত টাকা দেবে কিছুই জানিনা। জমিতে কিছু লাউ রয়েছে।

আড়ানী কুশাবাড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন জমি থেকে ৭৫টি লাউ তুলে হাটে আনেন। সেসব লাউ বিক্রি করতে আড়ানী হাটের সবজি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামকে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন বিক্রি করতে না পারলে টাকা দেবেন না। এতে রাজি হয়ে রেখে এসেছেন।উপজেলার চক বাউসা গ্রামের নাজমুল হোসেন দেড় বিঘা জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, লাউ নিয়ে বিক্রি করতে না পেরে আড়তে রেখে আসছি। লাউ বিক্রি না হলে লাউয়ের ভারে মাচা ভেঙে যাবে। এমন ভেবে কিছু লাউ মানুষকে ফ্রি দিয়েছি।

উপজেলার বাউসা মিয়াপাড়া গ্রামের পাইকারী লাউ ব্যবসায়ী সুজন আলী বলেন, গত সপ্তাহে ৬০০ লাউ নিয়ে ঢাকায় গিয়ে গড়ে ৭ টাকা করে দরে বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। বাঘা ও আড়ানীর হাটে লাউ কিনিনি। হাটে পাইকারি লাউ কেনার কোনো ক্রেতা ছিল না। তাই শনিবার হাটে লাউ কিনিনি।

লাউ ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন, মঙ্গলবার প্রতি পিচ সাড়ে ৬ টাকায় ২০০ লাউ কিনে ভ্যানে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেছি। এতে লাভ হয়নি, তবে কোনোমতে বিক্রি শেষ করেছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় ৭৮ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। মৌসুমে শুরুতে লাউয়ের দাম ভালো ছিল, শীত কমে যাওয়ার কারণে লাউয়ের চাহিদা কমে গেছে। তবে চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে লাউয়ের উৎপাদন হয়েছে।