বিশ্বে ক্ষুধাপীড়িত মানুষের সংখ্যা তিন বছর ধরে বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বিশ্বে ক্ষুধাপীড়িত মানুষের সংখ্যা ছিল ৮২ কোটি ১০ লাখ, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ। আর ক্ষুধাপীড়িত মানুষ বাড়ার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলোকে।

‘বিশ্বের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চারটি সূচক বিবেচনায় নেওয়া হয়। এগুলো হলো অপুষ্টি, ‘চাইল্ড ওয়েস্টিং’ (উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশু), ‘চাইল্ড স্টান্টিং’ (বয়সের তুলনায় কম উচ্চতার অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশু) ও শিশু মৃত্যুর হার (অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর)।

এই চারটির মধ্যে ‘অপুষ্টি’ সূচকে গত ৯ বছরে বাংলাদেশের সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৯২ সালে অপুষ্টির হার ছিল ৩৬.১ শতাংশ। ২০০০ সালে এসে দাঁড়ায় ২০.৮ শতাংশে। এরপর ২০০৮ সালে আরো খানিকটা কমে পৌঁছে ১৬.৪ শতাংশে। আর এবার (২০১৭) অপুষ্টির হার ১৫.১ শতাংশ।

১৯৯২, ২০০০, ২০০৮ ও ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ‘চাইল্ড ওয়েস্টিং’-এর হার ছিল যথাক্রমে ১৬.১, ১৩.৮, ১৭.৫ ও ১৪.৩ শতাংশ। ‘চাইল্ড স্টান্টিং’ সূচকে এই হার যথাক্রমে ৭১.৫, ৫৪, ৪৩.৩ ও ১৬.১ শতাংশ। আর শিশু মৃত্যুর হার যথাক্রমে ১৩.২, ৮.৮, ৫.৬ ও ৩.৮ শতাংশ। অর্থাৎ চারটি সূচকেই বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি হয়েছে এবং ক্ষুধাপীড়িত মানুষের সংখ্যা কমছে। সব মিলিয়ে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের স্কোর ২৬.৫ (যত কম তত ভালো)। এর আগের বার (২০০৮) স্কোর ছিল ৩২.২। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে তীব্রতার দিক থেকে ‘পরিমিত’ (মডারেট) বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় ১৫ কোটি ১০ লাখ (প্রায় ২২ শতাংশ) পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। স্কুলে পড়া শীর্ণকায় শিশুর হার সবচেয়ে বেশি ভারতে। দেশটির প্রায় ২৫ শতাংশ শিশুর ওজনই প্রয়োজনের তুলনায় কম। তবে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাতেও এই হার অনেক বেশি (প্রায় ১৫ শতাংশ)।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, অঞ্চলভেদে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষুধাপীড়িত মানুষের বাস দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দক্ষিণ সাহারা এলাকায়। এ দুটি অঞ্চলে ক্ষুধাপীড়িত মানুষের হার যথাক্রমে ৩০.৯ ও ২৯.৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনের লেখকরা বলছেন, কয়েক বছর কমার পরও গত তিন বছর ধরে ক্ষুধাপীড়িত মানুষ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। তাঁরা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে এই সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। লেখকরা জানান, গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের তুলনায় বন্যা, দাবদাহ, ঝড় ও খরা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তাঁরা বলেন, ‘প্রতিবেদনটি একটা পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে। সেটা হলো, ক্ষুধা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে যতটুকু সাফল্য এসেছিল, তা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে।’