একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে দেশের গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আজ শুক্রবার গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়’ অনুষ্ঠানে ফ্রন্টের নেতারা এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মতবিনিময় শেষে ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনটা থেকে আমরা তিন ঘণ্টা সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। মূল্যবান হয়েছে। কেননা, তারা বিভিন্ন ব্যাপারে তাদের মতামত দিয়েছেন। আমাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।’

কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে তারা কী আশা করেন— যদি দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হয়, সরকারের যেমন কর্তব্য আছে, আমরা যারা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি আছি, যারা নির্বাচন করতে যাচ্ছি, পরিবেশ রক্ষা করা যাকে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। সম্পাদকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে কী কী জিনিস তারা অতীতে দেখেছেন।’

ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন জানান, তারা মনে করেন— আমাদেরকে এবার যেগুলো থেকে বিরত থাকতে হয়, সবাইকে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করতে হয়, যে জনগণ সত্যিকার অর্থে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং নির্বাচন যেন সত্যিকার অর্থে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। যেটা আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থে মূল্যবান মনে করি এবং আমাদের সে চেষ্টা থাকবে। সরকারের যেসব জিনিস আমরা চিহ্নিত করেছি, আশা করবো সংবাদপত্র এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখবে।

এ সময় বিএনপির মহাসচিব ও ফ্রন্টের মুখপাত্র ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা সহযোগিতা দরকার, সবই চেয়েছি।’

বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তুজা বলেন, ‘মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অনেক সাংবাদিক পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচনে থাকতে হবে। নির্বাচনে সমান সুযোগ তৈরির করার জন্য প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দেখা করতে পারে। দেখা করার সুযোগ আছে, বারবার যেতে পারবেন।’

গোলাম মোর্তুজা আরও বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে, বিএনপিসহ তাদের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার আছে ও গ্রেপ্তার হচ্ছে, সেগুলো যেন গণমাধ্যম তুলে ধরে, সে ব্যাপারে তারা সহযোগিতা চেয়েছে।’

এর আগে ঐক্যফ্রন্টের মতবিনিময় চলাকালে বেরিয়ে আসেন আমাদের নতুন সময় সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান ও বিডি নিউজের সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদী।

সাংবাদিকদেরকে নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘মতবিনিময়ে আমার প্রশ্ন এবং বক্তব্য ছিল, ঐক্যফ্রন্টের যে জনসভাগুলো হয়েছে, সেখানে আমি দেখেছি যে, পবিত্র কোরআন, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। এছাড়া, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়। এগুলো তাদের ঐক্যবদ্ধ চিন্তার ফল কি না? এগুলোতে সবাই একমত কি না? এছাড়া, আমি উনাদের কাছে জানতে চেয়েছি, ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড এবং ২১ আগস্টের বিষয়ে কোনো ঐক্যবদ্ধ চিন্তা আছে কি না? আর এগুলো নির্বাচনের আগে আমাদের সামনে লিখিতভাবে উপস্থাপন করবেন কি না?’

নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমার আরেকটি প্রশ্ন ছিল, এই নির্বাচনের পর বাংলাদেশের জীবনে দুটি বিশাল উদযাপন আছে। একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। আরেকটি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী। নির্বাচনে বিজয়ী হোন বা পরাজিত হন, এই উৎসবগুলো সবাই মিলে পালন করবেন কি না? এসব বিষয়ে তারা বলেছেন, এ বিষয়ে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন। ’

বিডি নিউজ সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন ছিল, নির্বাচনে যদি জয়ী হন, তাহলে আপনাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি।’

তৌফিক ইমরোজ খালেদী বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই ঐক্যফ্রন্ট যদি বিজয়ী হয়, তাহলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? এটা তাদের পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু সেটা তারা এখনো করেননি।’

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান জানতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কি না। ড. কামাল হোসেন উত্তরে বলেন, ‘নির্বাচন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা সরে যেতে পারি না।’

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় গুলশানের হোটেল লেকশোরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন— প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, হলিড সম্পাদক সৈয়দ কামালউদ্দিন, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান তৌফিক ইমরোজ খালিদী, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর, আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, দিনকাল সম্পাদক রেজোয়ান সিদ্দিকী।

এছাড়া বাংলাদেশ প্রতিদিনের আবু তাহের, বাংলাদেশের খবরের সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, ইনকিলাবের মুন্সি আবদুল মান্নান, নিউজ টুডের মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, ডেইলি স্টারের সাখাওয়াত হোসেন লিটন, যুগান্তরের মাসুদ করীম, সমকালের লোটন একরাম, সাপ্তাহিকের গোলাম মোর্তজাসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা মতবিনিময়ে অংশ নেন। এছাড়া ভয়েস অব আমেরিকার আমীর খসরু, রয়টার্সের সিরাজুল ইসলাম কাদির, এএফপির শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে।