প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম, একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে, সে আশা আমাদের পূরণ হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, একটা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে প্রত্যাশা আমাদের পূরণ হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কালকে (গতকাল বুধবার) রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমাদানের মধ্যদিয়ে তা স্পষ্ট হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কে এম নুরুল হুদা।

তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী সকলেই সুশৃঙ্খলভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ৫-৭ জনের বেশি লোকজন নিয়ে আসেননি। তবে বাইরে অনেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে এসেছিলেন। তা আসলে শোডাউনের পর্যায়ে পড়ে না।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা সার্বিকভাবে বিশ্বাস করতে চাই, যারা রাজনীতি করেন, যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা নির্বাচনী আইন, আচরণ বিধি মেনে প্রচারণা চালাবেন। সে ধরনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বুধবার (২৮ নভেম্বর) সারাদেশে ৩০০ আসনে ৩ হাজার ৫৬ জনের মনোনয়ন ফরম দাখিল হয়েছে। যা রেকর্ড সংখ্যক। এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার যে প্রত্যয়, তারই প্রতিফলন ৩ হাজার ৫৬ জনের মনোনয়ন দাখিল ‘

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘যারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করবেন তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন আপনারা। সেখানে আপনারা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বার্তা নিয়ে যাবেন।’

‘আমাদের নির্বাচনের কার্যক্রম যেভাবে পরিচালিত হয় তা আপনারা জানেন। কারণ ইতোপূর্বে কোনো না কোনো পর্যায়ে আপনারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই নির্বাচন কীভাবে করতে হয়, কীভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হয় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে আপনারা তা ভালোভাবে জানেন। আপনারা মাঠে গিয়ে ৭ লাখ পোলিং এজেন্ট, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেবেন।’

‘সেই নির্বাচনে সবাইকে আপনারা উদ্বুদ্ধ করবেন। নির্বাচনের গুরুত্ব কী, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা কীভাবে বজায় রাখতে হবে, সকলের প্রতি সমান সুযোগ, সমান আচরণ, সমদৃষ্টিভঙ্গি, প্রত্যেকটা প্রার্থীর অভিযোগ সমানভাবে পক্ষপাতহীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের প্রশিক্ষণই আপনারা দেবেন’-যোগ করেন সিইসি।

কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচনের দায়িত্বে যারা নিযুক্ত থাকবেন তাদের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারি ও প্রিজাইডিং অফিসাররা। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্তদের কাছাকাছি আপনারা প্রশিক্ষকরা যাচ্ছেন। তাই আপনাদের ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

দল নয় প্রার্থীকে গুরুত্ব দেবার নির্দেশ সিইসির

সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, প্রার্থীকে প্রার্থী হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। একজন প্রার্থী যখন নির্বাচনের মাঠে নামবেন তখন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের তাকে কেবল একজন প্রার্থী হিসেবে দেখতে হবে। কারণ দলের বাইরেও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘প্রার্থীরা যখন থেকে নির্বাচনের মাঠে যাবেন তখন থেকে তার পরিচয় প্রার্থী। তখন আর দল বা একক ব্যক্তির কোনো পরিচয় নেই। তিনি শুধু একটি মার্কা বা প্রতীকের প্রার্থী। ফলে তিনি যেই হোন না কেন, যে দলেরই হোন না কেন তাকে অন্য সবার সঙ্গে সমানভাবে দেখতে হবে।’

অনুষ্ঠানে নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন। দিনব্যাপী কর্মশালায় ৪ শতাধিক সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবে নির্বাচন কমিশন।