বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ যাত্রাপালা। এক সময় যাত্রাপালা বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল। যাত্রাপালার মধ্যে ঐতিহাসিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি উঠে আসতো সামাজিক নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের প্রতিচিত্র।

গত শতকের নব্বই দশক পর্যন্ত যাত্রা একটি জনপ্রিয় শিল্প মাধ্যম হিসেবে এ দেশের দর্শকমহলে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে যাত্রাশিল্প তার অবস্থান হারিয়েছে। তবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যাত্রাশিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে হাতে নিয়েছে নানবিধ কার্যক্রম।

এরই ধারাবাহিকতায় বরিশালসহ দেশের ৬৪ জেলায় নির্মিত হচ্ছে একটি করে দেশীয় যাত্রাপালা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে ৬৪টি দেশীয় যাত্রাপালা নির্বাচন করে জেলায় পাঠানো হয়েছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে পালাগুলোর নির্মাণ ও মঞ্চায়ন কার্যক্রম শেষ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

নতুন উদ্যোগে এই ৬৪টি পালার মধ্যে নবাব সিরাজউদ্দৌলা, আলোমতি ও প্রেমকুমার, বনবাসী রূপবান, বিরহী দেওয়ান, রাখাল বন্ধু, শাপমোচন, লাইলি মজনু, সুজন বেদের ঘাট, গুনাইবিবি, ক্ষণিকের দুনিয়ায়, কারবালার কান্না, কমলা সুন্দরী, দাতা হাতেম তায়ী, মধুমালা, সোহরাব রুস্তম, কাঞ্চনমালা, আলিফ লায়লা উল্লেখযোগ্য।

এ প্রসঙ্গে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন- শিল্প সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন। আর তার ইতিবাচক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যাত্রাশিল্পের হারানো গৌরব আবার ফিরে পাবে বলেই আশা করছি।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে ‘যাত্রা শিল্পের নবযাত্রা’ প্রতিপাদ্যে যাত্রা-নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক যাত্রাদল নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে এবং এখন পর্যন্ত ১০৬টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। যাত্রাদল নিবন্ধনের জন্য গত ১২ ও ১৩ নভেম্বর (২০১৮) ১০ম যাত্রানুষ্ঠান আয়োজনও করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ইতোমধ্যে ‘ঈশা খাঁ’ শিরোনামে একটি প্রত্নযাত্রা নির্মাণ এবং মুনীর চৌধুরী রচিত ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটককে যাত্রাপালায় রূপান্তর করে মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করেছে। আর বর্তমানে পাঁচটি যাত্রাপালা নির্মাণ কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।

জেলাভিত্তিক ৬৪টি দেশীয় যাত্রাপালা নির্মাণের বিবরণীতে জেলার ক্রমানুসারে যাত্রাপালার নাম এবং পালাকারের বিবরণী সংযুক্ত রয়েছে।’