বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ময়লার স্তূপে ৩৩টি অপরিণত শিশুর (ফিটাস) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গাইনি ওয়ার্ড ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স জোৎস্না আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক বরাবর সব সাধারণ নার্সিং কর্মকর্তাদের ব্যানারে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

হাসপাতালে সব নার্সিং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর সংবলিত ওই স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে- হাসপাতালের ডাস্টবিনে অপরিণত মানবদেহের গর্ভকালীন বিভিন্ন বয়সের নমুনা (যা দীর্ঘদিনের ব্যবহারে পরিত্যাক্ত) পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত উল্লেখিত উপকরণসমূহ অপসারণের প্রক্রিয়া অমানবিক ও যথাযথ না হওয়ায় কাজে অবহেলার কারণ দেখিয়ে গাইনি ওয়ার্ড ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স জোৎস্না আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

কিন্তু গাইনি ওয়ার্ড ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স জোৎস্না আক্তারের বক্তব্য অনুযায়ী, গর্ভকালীন বিভিন্ন বয়সের অপরিণত মানবদেহের পরিত্যাক্ত নমুনাগুলো কখনোই তার তদারকি বা দায়িত্বে ছিলো না এবং এ যাবৎ গাইনি ওয়ার্ডের কোনো ইনচার্জরা এ সব নমুনা সংরক্ষণের দায়িত্বে ছিলো না। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অপরিণত মানব দেহের মেডিকেল শিক্ষাকাজে ব্যবহারে অনুপযোগী নমুনাসমূহ নির্দিষ্ট ল্যাব থেকে অপসারণের ক্ষেত্রে গাইনি ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স জোৎস্না আক্তার অবগত ছিলেন না।

স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে- এ ঘটনায় সিনিয়র স্টাফ নার্স জোৎস্না আক্তারকে সাময়িক বরখাস্তে সাধারণ সব নার্সিং কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে জোৎস্না আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত যুক্তিযুক্ত নয়। এ অবস্থায় জোৎস্না আক্তারকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার এবং তার প্রতি সুবিচার করার দাবি জানিয়েছেন সব নার্সিং কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে নার্সিং কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার জানান, যে রুমের দায়িত্বে কখনোই নার্সিং স্টাফরা ছিলেন সে রুমের দায়ভার কেন নিবেন। আর গাইনি বিভাগের প্রধান রুম পরিষ্কারের কথা বলেছেন, তাই ওয়ার্ড ইনচার্জ আয়া দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কি রাখতে হবে ফেলতে তা তারাই জানেন। ওয়ার্ড ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স জোৎস্না আক্তারের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।

তবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মধ্য দিয়েই আসল চিত্র বেরিয়ে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন।

এদিকে এ বিষয়ে গাইনি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. খুরশীদ জাহান বেগম জানান, পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স চালুর জন্য গাইনি বিভাগের একটি কক্ষ পরিষ্কার করে লাইব্রেরি বানানোর কথা। সে অনুযায়ী স্টোর হিসেবে পরিচিত কক্ষটি পরিষ্কার করা হচ্ছিলো। কিন্তু পরিষ্কারে আগে পরিদর্শনের সময় এগুলো দেখা যায়নি। কারন তখন এগুলো বস্তাবন্দি অবস্থায় অকেজো মালামালের মধ্যে ছিলো।

তিনি জানান, ঘটনার আগে তিনি এগুলো পরিষ্কার করার জন্য নার্সিং ইনচার্জ জোৎস্না আক্তারকে বলেন। এর কয়েকঘণ্টা পর তিনি জানতে পারেন যে কিছু অরগান পাওয়া গেছে। এগুলো কোনো নবজাতকের মরদেহ নয়। এগুলো অপরিণত ও জন্মগত ত্রুটিযুক্ত শিশুর (ফিটাস) মরদেহ। আবার এরমধ্যে টিউমারসহ মানবদেহের আরো কিছু অরগান রয়েছে।

নির্ধারিত নিয়মে সমাধিত করা উচিত ছিলো বলে জানিয়ে তিনি বলেন- গত ৬ মাস আগে আমি গাইনি ওয়ার্ডের দায়িত্ব নেই। কিন্তু এগুলোর বিষয়ে আদৌ আমরা কেউ জানতাম না, আর এখন মেডিকেলের বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। এখন আমরা ছবিতেই সবকিছু করে থাকি। তবে একসময় এভাবে বিভিন্ন অরগান ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষরণ করা হতো, তখন আমরাই ছাত্র ছিলাম।’’