পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ভারতের কাছে শান্তির বার্তা পৌছে দিতেই আটককৃত ভারতীয় পাইলটকে শুক্রবার মুক্তি দেবে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন ইমরান খান। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টের সিনেট ও জাতীয় পরিষদের এক যৌথ অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের সামনে বক্তব্য দেয়ার সময় এই কথা বলেন ইমরান খান। এখানে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সাথে সাম্প্রতি উত্তেজনা, হামলা ও পাল্টা হামলার বিষয়েও পার্লামেন্ট সদস্যদের অবগত করা হয়।

আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ভারতীয় বাহিনীর অভিযান ইস্যুতে জরুরি বৈঠকে বসেছে পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এতে সভাপতিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ দেশটির প্রশাসন ও সামরিক নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়েছেন।

সূত্র জানায়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি ভারতীয় যুদ্ধবিমান কর্তৃক পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সবাইকে সংক্ষিপ্তাকারে জানান। এ বৈঠকে ভারতের এ ধরনের পদক্ষেপের জবাবে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বৈঠকের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি আরেকটি জরুরি পরামর্শ বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকের পর তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং দিল্লির এ ধরনের পদক্ষেপের জবার দেয়ার অধিকারও রাখে ইসলামাবাদ।

তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ^কে জানিয়ে রাখছি, কী ঘটেছে। তারা আজ পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে। তারা এলওসি লঙ্ঘন করেছে। আর পাকিস্তান অবশ্যই আত্মরক্ষা এবং এ ধরনের পদক্ষেপের জবাব দেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন।

এর আগে সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র হিসেবে মেজর জেনারেল আসিফ গফুর জানিয়েছিলেন, ভারত রাতে এলওসি অতিক্রম করেছিল। কিন্তু পাকিস্তান বাহিনীর তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ভারত পাকিস্তানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতের এ অভিযানে তাদের পক্ষে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতের আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের কনভয়ের ওপর ১৪ ফেব্রুয়ারি এক আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় সিআরপিএফের ৪৯ জন সদস্য নিহত হয়। ভারত এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে তাদের একঘরে করে ফেলতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আহ্বান জানায়।

কিন্তু তাদের ডাকে সে রকম সাড়া মেলেনি। বরং চীন পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। আবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও পাকিস্তান সফরে গিয়ে বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। ফলে হতাশাগ্রস্ত ভারত একাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে থাকে।

এদিকে অব্যাহতভাবে এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করতে থাকায় এক পর্যায়ে মুখ খোলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি ভারতের প্রতি আহ্বান জানান, যদি এক্ষেত্রে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ থাকে তাহলে তা যেন ইসলামাবাদকে দেয়া হয়। ইসলামাবাদ এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেবে। অন্যথায় পাকিস্তানে যদি কোনো ধরনের হামলা হয় তাহলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও এর সমুচিত জবাব দেবে।

এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী আবারও চ্যালেঞ্জ দেন ইমরান খানকে। তিনি বলেন, যদি ইমরান খান পাঠানের সন্তান হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি যেন পুলওয়ামার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেন। এর জবাবে ইমরান খান বলেন, আমাদেরকে শান্তি প্রতিষ্ঠার আরেকটি সুযোগ দিন। ওই হামলার সাথে সম্পৃক্তদের ব্যাপারে তথ্য দিন। আমরা প্রমাণ করে দেব, আমরা শান্তির পক্ষে।’’