নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: নানা অপকর্মে জড়িয়ে ইমেজ সংকটে পড়েছে বরিশাল জেলা যুবদল ও ছাত্রদল। ঐতিহ্যবাহী এই যুব ও ছাত্র সংগঠনটির কতিপয় অসাধু নেতা নিজ দলীয় কর্মীদের হাত কর্তন, হত্যা, পাসপোর্ট অফিসে দালালী করা, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে নিজ দলের প্রতিপক্ষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা, অর্থের বিনিময় কমিটি করা ও মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ও জেলা যুবদলের নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসার বহু অভিযোগ। পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক হওয়ার পরও দল থেকে বহিস্কার না করে তাদেরকে ছাত্র ও যুবদলের মত ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে- বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন পিকলু মাদক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু বিরুদ্ধে নিজ দলের এক নেতার হাত কর্তন মামলা বিচারাধীন। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একসময়ে পাসপোর্ট অফিসে দালালী করার অভিযোগ রয়েছে।

মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধেও বিএম কলেজ এলাকায় মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ পুরনো। এক সময়ের ছাত্রলীগ ক্যাডার এনামুল হক তছলিমকে মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।

দক্ষিণ জেলা যুবদলের নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এমনকি দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এইচএম তছলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিতর্কের শেষ নেই। অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চুটিয়ে ঠিকাদারী ব্যবসা করছেন তিনি। এছাড়া চিহ্নিত মাদক কারবারি, সন্ত্রাসী ও নারী কেলেংকারিতে জড়িত নেতাকর্মীদের নিয়েই চলছে বরিশাল যুবদল ও ছাত্রদলের কার্যক্রম। এ কারণে ইমেজ সংকটে পড়েছে যুব ও ছাত্রদল। এই সুযোগে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে যুব ও ছাত্রলীগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- উত্তর জেলা যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন পিকলু ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই রাতে পটুয়াখালীর লেবুখালী ফেরীঘাট থেকে ৪৫ পিস ইয়াবা এবং এক বোতল মদসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। গত সপ্তাহে পটুয়াখালীর আদালতে সালাউদ্দিন পিকলুসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুমকি থানার এসআই জাকির হোসেন।

এমনকি পিকলু’র হামলার শিকার হয়ে পঙ্গু হয়ে গেছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক লাভলুকে। ওই মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। নানা অভিযোগে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন পিকলু। বিস্তর বিতর্কের পরও মেহেন্দিগঞ্জ থানা ছাত্রদলের আহবায়ক থাকা অবস্থায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন পিকলু ফন্দিফিকির করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানের প্রভাব কাজে লাগিয়ে উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পদকের পদ বাগিয়ে নেন।

দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাধারণ এইচএম তসলিম উদ্দিন বরিশাল নগরীতে একজন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচিত। তসলিম বিএনপি ঘরানার হলেও তাঁর বড় ভাই ইকবাল হোসেন তাপস সরকারের আস্থাভাজন জাতীয় পার্টির একজন নেতা। তাঁর ছোট ভাই আসাদুজ্জামান আসাদ বরিশাল মহানগর ছাত্রলীদের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা।

এই দুই নেতার দাপটে তছলিম উদ্দিন এখন বরিশাল বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন দেখছেন। অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সু-সম্পর্ক রেখে ঠিকাদারী ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বড় ভাই তাপস জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি’র প্রার্থীর পক্ষে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন ভ‚মিকা ছিলো না তছলিমের। ক্ষমতাসীন দলের সাথে আঁতাত থাকায় বিসিসি ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দল থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি যুবদল নেতা তছলিমকে।

নাম না প্রকাশের শর্তে জেলা ছাত্রদলের এক নেতা বলেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজ আলম মিঠু সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে চারদলীয় জোট সরকার আমলে সেনাবাহিনীর হাতে মাদকসহ আটক হয়েছিলেন। এমনকি যুবদলের এক নেতার হাত কর্তনের মামলায় গ্রেফতার এড়াতে বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় আত্মোগোপন করেন তিনি।

বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে দেখা না গেলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিবকে খুশি করতে এবং বরিশালে নিজের অবস্থান জানান দিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানকে ম্যানেজ করে জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন ডেভেলপার কোম্পানিতে কর্মরত মাহফুজুল আলম মিঠু। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে নিজদলের কর্মীর হাত কর্তন মামলা আদালতে বিচারধীন।

বরিশাল ছাত্রদল বিতর্কিত করে তুলেছেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান। দলের হয়ে দুঃসময়ে ন্যূনতম অবদান না রাখা কামরুলকে মানতেই পারছে না দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে সে রহমতপুর কৃষি কলেজে ছাত্রদলের ভূয়া একটি কমিটির আহবায়ক দাবি করে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদটি বাগিয়ে নেন। পাসপোর্ট অফিসের দালাল হিসেবে পরিচিত কামরুলকে জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ায় বিতর্কে পড়েন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজিব আহসান। এ কারণে নিজ জেলায় অবাঞ্চিত হয়েছেন রাজিব আহসান।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য মুসফিকুল হাসান মাসুম ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ২১৫ বোতল ফেন্সিডিল আটক হয়। সে নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের শেরে বাংলা সড়কের সিকদার প্যালেসের বাসিন্দা মৃত ইসরাঈল সিকদারের ছেলে এবং বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিনের ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা আদালতে বিচারাধীন।

মাদক মামলায় মুশফিকুল হাসান মাসুম দীর্ঘদিন কারাভোগ করলেও রহস্যজনক কারণে দল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের আস্থাভাজন লোক হওয়ায় দল থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে।

এবিষয় কেন্দ্রীয় যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলা নয়ন বলেন, আমরা এখন বিরোধী দলে। তাই আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি দলের লোকজন নানাভাবে ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার করছে। তারপরেও যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিষয় কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, আমরা এখন বিরোধী দলে। তাই আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি দলের লোকজন নানাভাবে ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার করছে।’